- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
একুশে বইমেলা
ভূমিকা: পৃথিবীর যেকোনো দেশেই তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের যথার্থ পরিচয় পাওয়া যায় সেদেশে অনুষ্ঠিত মেলাগুলোর মধ্যে। মেলা মানুষে মানুষে, দেশে দেশে নিবিড় সংযোগ ঘটায়। পারস্পরিক ভাবের বিনিময়ে, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানে, প্রবীণ-নবীনের সংযোগ রচনায় মেলাগুলো প্রকৃতই পরিণত হয় মানুষের মিলনতীর্থে। তেমনি মেলার মধ্যে একটি হলো বইমেলা। আমাদের দেশে বইমেলার ইতিহাস প্রাচীন না হলেও বেশ কয়েক বছর ধরে নানা ধরনের বইমেলা হচ্ছে। তার মধ্যে বাংলা একাডেমি মাঠে অনুষ্ঠিত একুশে বইমেলা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
একুশে বইমেলা: একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারিতে পুলিশের গুলিতে শহিদ হয়েছিল রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত এবং আরও অনেকে। দিনটি শহিদ দিবস হিসেবে আমাদের দেশে পালিত হয়ে থাকে জাতীয় মর্যাদার সাথে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এ দিবসটিকে স্মরণ করে বাংলা একাডেমি মাঠে প্রতিবছর 'একুশে বইমেলা' অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশের মেলাগুলোর মধ্যে এটি বৃহত্তম বইমেলা। সাধারণত দেশের প্রধানমন্ত্রী এই মেলা উদ্বোধন করেন। মাসব্যাপী একুশে বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত হয় অসংখ্য বই। এই মেলাকে সামনে রেখে নবীন, প্রবীণ কবি-সাহিত্যিকগণ নব উদ্দীপনায় নতুন নতুন বই রচনায় মনোযোগী হন। আর সেসব বই প্রকাশ করতে গিয়ে প্রকাশকরাও ব্যস্ত' হয়ে পড়েন। একুশে বইমেলা লেখক, প্রকাশক ও পাঠক সম্মিলনের মধ্য দিয়ে বর্তমানে আমাদের একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে রূপ ধারণ করেছে।
আমার দেখা একটি গ্রন্থমেলা: ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৭ তারিখ। বাবার সঙ্গে আমি ও আমার ছোট ভাই উজ্জ্বল গেলাম একুশে বইমেলা দেখতে। আমরা বইমেলায় পৌছেই দেখতে পাই বাংলা একাডেমি মাঠ মনোরম সাজে সজ্জিত এবং শুনতে পাই অসংখ্য মানুষের কোলাহল। প্রতিটি বইয়ের স্টল সাজানো হয়েছে চমৎকারভাবে। সারি সারি স্টলগুলোতে সাজানো নানা রঙের প্রচ্ছদে বইগুলো দেখতে অপূর্ব লাগছিল।
বাংলা একাডেমির মূল ভবনের পশ্চিম পাশে একটি প্রচার কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। বাংলা একাডেমির উদ্যোগে এখান থেকে নতুন প্রকাশিত বইয়ের সংবাদ, বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের সংবাদ, হারানো বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। মূল ভবনের পূর্ব পাশে তৈরি করা হয়েছে বিশাল প্যাভিলিয়ন এবং দক্ষিণ পাশে রয়েছে একটি মঞ্চ। এই মঞ্চে বাংলা সাহিত্য ও সাহিত্য সম্পর্কিত নানা ধরনের আলোচনা অনুষ্ঠান হয়, হয় নাটক এবং স্বরচিত কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান। দেশের বড় বড় কবি-সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবিগণ এসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
মেলার বহিরাঙ্গ দৃশ্য মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশের প্রধান তোরণটি সাজানো হয়েছে অত্যন্ত চমৎকারভাবে। ডান পাশের দেয়ালে ভাষা শহিদ থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সংগ্রামী ইতিহাসকে ধারণ করে তৈরি করা হয়েছে একটি সুদীর্ঘ দেয়াল নকশা। মেলার ভেতরে বটবৃক্ষের বেদীমূলে তৈরি করা হয়েছে নজরুল মঞ্চ। চারদিকে চক্রাকারে আছে প্রয়াত জ্ঞানীগুণী মনীষীদের ছবি এবং সাজানো আছে বিখ্যাত ব্যক্তিদের অমর বাণী। যা দেখলে চোখ জুড়ায় ও মন ভরে যায়। মেলায় প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে স্টল এবং স্টলে সাজানো বই আর বই। ছোট বড় প্রায় চারশ স্টল বসেছে মেলায়। তাকে তাকে সাজিয়ে রাখা হয়েছে নানা রঙের, নানা লেখকের, নানা ধরনের বই। এ যেন বইয়ের মিছিল। দেখে মনে হচ্ছিল আমি যেন এক'গ্রন্থের সাগরে ডুবে আছি। বেশ কয়েকটি স্টল ঘুরে আমার ও আমার ভাইয়ের পছন্দমতো অনেক বই কিনে দিলেন বাবা।
বইমেলার উপকারিতা: বইমেলায় সাধারণত সৃজনশীল বইয়ের সমাবেশ ঘটে থাকে। বিভিন্ন রুচির পাঠক তাদের পছন্দমত বই সংগ্রহ করতে পারে বইমেলা থেকে। একুশে বইমেলায় নানা ধরনের অনেক বই পাওয়া যায়। এটি বই সংগ্রহের একটি উপযুক্ত সুযোগ। সকল শ্রেণির পাঠকই মেলায় এসে উপকৃত হতে পারে। শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ সবারই বুচিসম্মত বইয়ের সমাবেশ থাকে মেলায়। তাছাড়া বই মেলায় অনেক লেখকের সাথেও পাঠকের সাক্ষাৎ ঘটে। পাঠক তার প্রিয় লেখককে নিজের চোখে দেখে আনন্দ পায়, পরিতৃপ্ত হয়। কারণ বইমেলার সময় অনেক লেখকই মেলা প্রাঙ্গণে আসেন। তাঁরা পাঠকদের অটোগ্রাফ দেন। লেখকদের বইও বিক্রি হয় প্রচুর। এমনিভাবে লেখক, প্রকাশক, পাঠক সকলেই উপকৃত হতে পারেন বইমেলার মাধ্যমে।
বইমেলার গুরুত্ব: বর্তমানকালে বইমেলা ও পুস্তক প্রদর্শনীগুলোর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এবং সাফল্য গ্রন্থ-প্রকাশনার জগতে এনেছে অভূতপূর্ব গতি। মেলার সময় বই কেনার উৎসাহ বৃদ্ধি পায়। পাঠকদের বই কেনার আগ্রহ প্রবীণ ও নবীন লেখকদের উদ্বুদ্ধ করে তোলে নতুন সৃষ্টিপ্রেরণায়। আবার বিক্রি বেড়ে গেলে প্রকাশকও বেশি বেশি বই প্রকাশ করেন।
উপসংহার: বিগত কয়েকটি বইমেলার পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় আমাদের দেশে বইমেলার জনপ্রিয়তা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি উত্তম সংবাদ। বই মানুষের মনকে উদার করতে পারে, জাতীয় সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে পারে।