• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

চিড়িয়াখানায় একদিন

ভূমিকা: চিড়িয়াখানায় বেড়ানোর ব্যাপারটা ছোটদের কাছে ভালো লাগলেও অনেকের কাছে ততটা ভালো লাগে না। এই ভালো না লাগার অবশ্য একটা কারণও রয়েছে। সারি সারি খাঁচায় বনের মুক্ত পশু-পাখিকে আটকে রাখা একরকম অমানবিক বিষয়। তাই ছোটবেলায় চিড়িয়াখানায় বেড়াতে যাওয়ার স্মৃতিই আমার বেশি মনে পড়ে। ছোটবেলায় বেশ কয়েকবার চিড়িয়াখানায় বেড়াতে গিয়েছি। তার মধ্যে একটি বিশেষ দিনের কথা আমার স্মৃতিতে দাগ কেটে আছে।

চিড়িয়াখানায় যাওয়ার প্রস্তাব: ডিসেম্বর মাস। আমি তখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার পর চলছে দীর্ঘদিনের ছুটি। বাবাও অফিস থেকে কয়েকদিন ছুটি পাওয়ায় আমাদের ঢাকায় ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে এলেন। আমার ছোট ভাই আর ফুফুর বড় ছেলে সুমন সমবয়সী, তাই গলায় গলায় ভাব। বাবা বললেন, ঢাকায় তোমরা কোথায় বেড়াতে চাও বল। আমরা সবাই একসঙ্গে বলে উঠলাম- চিড়িয়াখানায় যাব। বাবা বললেন ঠিক আছে। আগামীকাল শুক্রবার আমরা সবাই চিড়িয়াখানায় বেড়াতে যাব।

চিড়িয়াখানায় যাওয়ার প্রস্তুতি: আমরা সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম। খুব ভোরে আমরা ঘুম থেকে উঠলাম। ডিসেম্বর মাসের শীতের সকাল। বড়রা ঘুম থেকে ওঠার আগেই আমরা হাত-মুখ ধুয়ে, পোশাক পাল্টে তৈরি হয়ে যাই। সবাই একসঙ্গে নাস্তা করলাম। সকাল আটটায় গাড়িতে করে আমরা মিরপুরের চিড়িয়াখানার উদ্দেশে রওয়ানা হলাম। মা এবং ফুফু অনেক রকমের খাবার সঙ্গে নিলেন। শুক্রবার, ঢাকার রাস্তায় কোনো যানজট ছিল না বলে মাত্র ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই আমরা চিড়িয়াখানায় পৌঁছে যাই।

চিড়িয়াখানায় বেড়ানোর বর্ণনা আমরা সবাই চিড়িয়াখানায় প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। বাবা সবার জন্য টিকিট কিনে আনলে গোল দরজা, দিয়ে একজন একজন করে আমরা ভেতরে প্রবেশ করি। সরু ইটের রাস্তা। দুপাশে সবুজ গাছপালা। প্রথমেই ছিল বানরের খাঁচা। বিশাল বানরের খাঁচায় অসংখ্য বানর লাফালাফি করছে। ছোট বড় মাঝারি অনেক রকমের বানর। দেখলাম একটা বুড়ো বানর ছোট বানরের মাথা থেকে উকুন বের করে খাচ্ছে। কোনোটা আবার এক হাতে গাছের ডাল ধরে ঝুলে আছে তো আছেই। সে কী লাফালাফি আর কিচিরমিচির! চিড়িয়াখানায় প্রচুর দর্শনার্থী। মনে হলো বানরের খাঁচার সামনে বেশি ভিড়। খাঁচার বাইরে থেকেই লোকজন এদের বাদাম দিচ্ছে, কলা দিচ্ছে। আমি খুব ভয়ে - খাঁচার ভেতরে একটা কলা বাড়িয়ে ধরলাম। অমনি একটা বানর এসে কলাটা নিল। আমরা একে একে দেখলাম অন্যান্য খাঁচার প্রাণীগুলো।

চিড়িয়াখানার পশু-পাখির বর্ণনা: ঢাকার চিড়িয়াখানার একে একে আমরা হরিণ, হাতি, জেব্রা, গরিলা, সজারু দেখলাম। সব খাঁচার সামনেই একটা করে সাইনবোর্ড ঝোলানো রয়েছে। আর সেই সাইনবোর্ডে রয়েছে প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম, প্রজাতি, খাদ্য তালিকা এবং প্রাণীটি সম্পর্কে নানা রকম তথ্য। হঠাৎ আমাদের কানে একটি হিংস্র গর্জন ভেসে আসে। আমরা বুঝতে পারলাম এটা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ডাক। বাঘের ডাক শুনে আমার ছোট ভাই ও সুমন খুব ভয় পেয়ে যায়। তারপর বাবার হাত ধরে আমরা খাঁচার সামনে দাঁড়াই। মানুষের ভিড় কিছুটা কমে এলে আমরা দেখতে পেলাম বাংলাদেশের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে। দেখলাম বিশাল দেহ নিয়ে দুটি বাঘ খাঁচার ভিতরে বসে আছে। মাঝে মাঝে হাঁটাহাঁটি করছে। বইয়ে পড়া বাঘকে বাস্তবে দেখে আমরা অবাক হয়ে যাই। এরপর আমরা যাই পশুর রাজা সিংহের খাঁচার সামনে। কেশর ফুলিয়ে বসে রয়েছে সিংহরাজ। বড় একটি ডোবার মধ্যে কুমির দেখলাম। কুমিরের বেষ্টনীও ছিল বিশাল। এরপর অজগর, চিতাবাঘ, উটপাখিসহ রং-বেরঙের বিচিত্র সব পাখি দেখলাম।

পশু-পাখির জাদুঘর দর্শন: দুপুরের খাওয়া-দাওয়ার পর আমরা পশু-পাখির জাদুঘর দেখতে গেলাম। সেখানে পশু-পাখির বিভিন্ন জিনিস সংরক্ষিত আছে। জাদুঘরের ভেতরে ঢুকেই দেখলাম তিমি মাছের বিশাল কঙ্কাল, যা আমাদের ভয় পাইয়ে দেয়। দেখলাম সাপের ডিম, উটপাখির বিশাল ডিম। বাবা বললেন, উটপাখির ডিম অনেক শক্ত। এটার উপর একজন মানুষ খুব সহজেই দাঁড়িয়ে থাকতে পারে।

উপসংহার: চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখতে দেখতে আমরা সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়ি। পড়ন্ত বিকেলে আমরা বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিই। চিড়িয়াখানায় বেড়িয়ে পশু-পাখি সম্পর্কে বিশাল অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে ফিরে এলাম। তবে সবার সঙ্গে আনন্দে কাটানো সময়টি আজও স্মৃতির পটে দাগ কেটে যায়।