• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

দেশ ভ্রমণ

ভূমিকা: মানুষের মন বৈচিত্র্যের সন্ধান করে। সীমাবদ্ধ গণ্ডির মধ্যে সে থাকতে চায় না। সে জানতে চায় অজানাকে, চিনতে চায় অচেনাকে। মুক্ত বিহঙ্গের মতো সে ছুটে যেতে চায় সংসারের সংকীর্ণ সীমানা ছাড়িয়ে দূরে কোথাও। যেখানে নেই একঘেয়েমি, ক্লান্তি, দুঃখ-ব্যথা। দীর্ঘকাল ধরে এই ইচ্ছেই মানুষকে নিয়ে গেছে পৃথিবীর নানা দেশে, পাহাড়-পর্বতে, সমুদ্রে, প্রকৃতির সৌন্দর্যের মাঝে। এই যে সৌন্দর্যের সন্ধানে, বৈচিত্র্যের সন্ধানে, অজানার আকর্ষণে মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে, এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া একে বলা হয় দেশ ভ্রমণ। ভ্রমণের মাধ্যমেই মানুষ জীবনের আনন্দকে পুরোপুরি উপভোগ করতে পারে। কেবল আনন্দ লাভই নয়, ভ্রমণ শিক্ষারও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভ্রমণ দেশে দেশে বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠারও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তাই প্রতিটি মানুষের জন্যেই দেশ ভ্রমণ অপরিহার্য।

ভ্রমণের আনন্দ: মানুষ চিরপথিক, পথ চলাতেই তার আনন্দ। এই পথ চলা বা ভ্রমণ থেকেই মানুষ বিচিত্র আনন্দ লাভকরে। দেশ-দেশান্তরে ভ্রমণের মাধ্যমে মানুষ তার সৌন্দর্য পিপাসাকে চরিতার্থ করে। দেশ ভ্রমণের মাধ্যমে মানুষ ক্ষুদ্রতা, সংকীর্ণতা থেকে মুক্তির অনুপম আনন্দ লাভ করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিচিত্র সৌন্দর্য আকর্ষণ করে সৌন্দর্য পিপাসু মানুষকে। ভূ-পর্যটন তাদের কাছে গভীর আনন্দের প্রতীক। প্রকৃতি যে অন্তহীন সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে নিয়ে বসে আছে তা একমাত্র দেশ ভ্রমণের মাধ্যমেই উপভোগ করা যায়। এভাবেই কলম্বাস, ক্যাপ্টেন কুক, লিভিংস্টোন, ইবনে বতুতা, মার্কোপোলোর মতো বিশ্ববিশ্রুত পর্যটকগণ বেরিয়ে পড়েছিলেন বিশ্বভ্রমণে।

শিক্ষার অঙ্গ হিসেবে দেশ ভ্রমণ দেশ ভ্রমণ কেবল আনন্দের উৎসই নয়, শিক্ষা লাভেরও অন্যতম উপায়। শিক্ষার অন্যতম অঙ্গ হলো দেশ ভ্রমণ। বই পড়ে মানুষ যে জ্ঞান অর্জন করে তা পরোক্ষ। কিন্তু ভ্রমণের মাধ্যমে মানুষ পায় প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান। ভ্রমণের মাধ্যমেই মানুষ পায় বিচিত্র মানুষের সান্নিধ্য, প্রকৃতির প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ, অপার আনন্দ, লাভ করে প্রকৃত শিক্ষা। ঐতিহাসিক, সামাজিক, প্রত্নতাত্ত্বিক ঘটনাবলির সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক স্থাপন করার অথবা ঐতিহ্যানুসরণ করার অন্যতম উপায় হচ্ছে দেশভ্রমণ। যুগ-যুগান্তর ধরে মানুষের ধর্মীয় স্থান বা তীর্থ ভ্রমণের ইতিবৃত্তও অজানাকে জানা, অচেনাকে চেনা ও দূরকে কাছে টানারই ফলশ্রুতি। ইতিহাস, ভূগোলের বাইরে অবাধ উন্মুক্ত আকাশের 'নিচে জীবন্ত দেশটি দেখে তার অধিবাসীদের প্রত্যক্ষ স্পর্শ লাভ করে, তাদের জীবনধারা সম্পর্কে মানুষ যে জ্ঞান লাভ করে, সে জ্ঞানই প্রকৃত জ্ঞান, প্রকৃত শিক্ষা।

অনেক লেখক দেশ ভ্রমণের বাস্তব অভিজ্ঞতাকে লিপিবদ্ধ করেছেন ভ্রমণকাহিনিতে। 'দেশে-বিদেশে', 'বিলাতে সাড়ে সাতশ দিন', 'রাশিয়ার চিঠি', 'চলে মুসাফির', 'ইস্তাম্বুল যাত্রীর পত্র' প্রভৃতি দেশ ভ্রমণের বাস্তব অভিজ্ঞতার নিরিখে লিখিত যার সাহিত্যিক মূল্য।

দেশ ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা: প্রকৃতির রাজ্যে আমরা ক্ষুদ্র এক জীব মাত্র। এ পৃথিবী বিশাল এবং বিচিত্র তার সৌন্দর্য। এ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে আছে নানা রকম জীবজন্তু, গাছপালা আর মনোরম নৈসর্গিক দৃশ্য। দেশ ভ্রমণ না করলে এ অফুরন্ত সৌন্দর্য আমাদের দৃষ্টির অগোচরেই থেকে যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন সভ্যতা ও সংস্কৃতির ঐতিহাসিক নির্দশনগুলো চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করার একমাত্র উপায় হলো ভ্রমণ। ভৌগোলিক স্থানগুলো চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করার মাধ্যমে মানুষের জ্ঞানের পূর্ণতা আসে আর ঐতিহাসিক স্থানগুলো প্রত্যক্ষ দর্শনের মাধ্যমে ইতিহাসের সোনালি অধ্যায়গুলো যেন মানুষের চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

দেশ ভ্রমণের মাধ্যমে মানুষ প্রতিদিনের ছকবাঁধা জীবন থেকে মুক্তির আনন্দ উপলব্ধি করে। এর মাধ্যমে সে লাভ করে অনাবিল প্রশান্তি। প্রখ্যাত পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ, ফা-হিয়েন, মেগাস্থিনিস, ইবনে বতুতা, ভাস্কো-ডা-গামা, লিভিংস্টোন, কলম্বাস, মার্কো-পোলো, ক্যাপ্টেন কুক কিংবা আমাদের দেশের শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর এমনিভাবেই সভ্যতা সংস্কৃতির সম্যক জ্ঞান লাভের আশায় পাড়ি দিয়েছিলেন বলেই অনেক অনেক অজানা দেশ, পাহাড়-পর্বত, মরুভূমি, মরুদেশ কিংবা অনেক ধ্বংসপ্রাপ্ত সভ্যতার স্মারক আবিষ্কৃত হয়েছে, মানুষের জ্ঞানের ভাণ্ডার হয়েছে পূর্ণ, মানবসভ্যতা হয়েছে সমৃদ্ধ। আন্তর্জাতিক মৈত্রী ও সৌভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধনেও সুদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করেছে দেশ ভ্রমণ।

দেশ ভ্রমণ ও বাংলাদেশ: প্রাচীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পৃথিবীর প্রায় সব দেশের কাছেই পরিচিত। এদেশে রয়েছে অনেক পর্যটন স্থান। এদেশে অবস্থিত পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। এ স্থানটি পৃথিবীর বিভিন্ন পর্যটকদের আকর্ষণ করে। প্রতি বছর বিদেশি অনেক পর্যটক এ স্থানটি দেখার জন্য এদেশ ভ্রমণে আসে। খুলনা-বাগেরহাট জেলার সুন্দরবনও পর্যটন স্থান হিসেবে বিশ্বে সুপরিচিত। এছাড়া বাংলাদেশের রাঙামাটি, সিলেটের জাফলং ও চা বাগান, কুয়াকাটা, চট্টগ্রামের ফয়'স লেক প্রভৃতি স্থান প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও বাংলাদেশে রয়েছে অনেক পুরাকীর্তি যা প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে আছে। রাজশাহী জেলার পাহাড়পুরে আছে বৌদ্ধ সংস্কৃতির ধ্বংসাবশেষ যা সত্যিই আকর্ষণীয়। এ ধরনের আরও একটি স্থান হলো বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী মহাস্থানগড়। প্রাচীন বৌদ্ধযুগের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে এ স্থানে। এছাড়া কুমিল্লার ময়নামতি, নওগাঁ, জয়পুরহাটেও রয়েছে প্রাচীন বৌদ্ধ যুগের ধ্বংসাবশেষ।

ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির, আহসান মঞ্জিল, লালবাগের কেল্লা, সোনারগাঁয়ের লোকশিল্প জাদুঘর, বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ, দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির, নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি প্রভৃতি ইতিহাস প্রসিদ্ধ দর্শনীয় স্থান। এ স্থানগুলো প্রাচীন সভ্যতা ও ঐতিহ্যের ধারক।

উপসংহার: ভ্রমণের গুরুত্ব আজ সব দেশেই স্বীকৃত। আনন্দের উৎস এবং শিক্ষার অঙ্গ হিসেবে দেশ ভ্রমণের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। জাতিসংঘও দেশ ভ্রমণকে 'বিশ্ব শান্তির ছাড়পত্র' বলে অভিহিত করেছে। শিক্ষার্থীদের কেবল বই পড়লেই চলবে না, সেই সাথে তাদের ঘুরে দেখতে হবে চারপাশের প্রকৃতি ও জগৎকে। এর মাধ্যমে তাদের পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান পূর্ণতা পাবে, বৃদ্ধি পাবে তাদের জ্ঞানের পরিধি। ভ্রমণের মাধ্যমে মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় হবে। এসব কারণে ভ্রমণ আজ সব শ্রেণির মানুষের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয়।