• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

তোমার জীবনের লক্ষ্য

ভূমিকা: মানুষের জীবন খুবই ক্ষণস্থায়ী। এ ক্ষণস্থায়ী জীবনসীমার মধ্যেই মানুষ অনেক কিছু করার স্বপ্ন দেখে। এ স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করা উচিত। কেননা ছাত্রাবস্থায় যে লক্ষ্য স্থির করা হয় পরিণত বয়সে সেই অনুযায়ীই জীবন পরিচালিত হয়।

লক্ষ্য স্থির করার প্রয়োজনীয়তা: শৈশবকালই পরিণত ও পূর্ণাঙ্গ বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। এ সময়ে জীবনকে যে অভীষ্ট লক্ষ্যে পরিচালিত করা হবে ভবিষ্যতের জীবন কর্মও সে পথেই চলবে। এজন্য জীবন চলার পথে চাই সুনির্দিষ্ট এবং সুপরিকল্পিত পথ রেখা। তাই ছাত্রাবস্থাতেই জীবনের লক্ষ্য স্থির করে তা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের নিরন্তর প্রচেষ্টা করে যাওয়া উচিত।

আমার জীবনের লক্ষ্য: জীবনের অনিবার্য বাস্তবতায় আমার বন্ধুরা যখন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা বড় চাকরি করে অগাধ অর্থের মালিক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর তখন আমি আমার জীবনের লক্ষ্য স্থির করা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যাই। শুধু অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে লেখাপড়া করতে কোনোভাবেই আমার মন সাড়া দেয়নি। গ্রামবাংলার দরিদ্র, অশিক্ষিত, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের জন্য কিছু করার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে। তাই অনেক ভেবেচিন্তে স্থির করেছি আমি একজন আদর্শ শিক্ষক হব। শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেই আমার অনাগত দিন অতিবাহিত করব।

এ লক্ষ্য স্থির করার কারণ পৃথিবীর অন্য দেশগুলো যখন শিক্ষার সোনার কাঠির পরশে মঙ্গলগ্রহে, চাঁদে অভিযান চালাচ্ছে আমার দেশের প্রিয় মানুষেরা তখন দুমুঠো অন্নের জন্য হন্যে হয়ে ছোটাছুটি করছে, চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরছে, নিজেদের মধ্যে কলহ করছে। আর এ সবকিছুই হচ্ছে তাদের অজ্ঞতার জন্য, অশিক্ষার জন্য। আমার দৃঢ়বিশ্বাস আমাদের দেশের মানুষ যেদিন সুশিক্ষায় শিক্ষিত হবে, অশিক্ষার অভিশাপ থেকে মুক্তি লাভ করে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবে, সেদিন সত্যিই আমার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে; প্রিয় মাতৃভূমিকে সোনার বাংলা রূপে দেখার সৌভাগ্য লাভহবে। আর এ মহান ব্রত নিয়েই আমি শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার ব্যাপারে লক্ষ্য স্থির করেছি।

লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রস্তুতি: আমার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমি এখন থেকেই মানবিক বিভাগ নিয়েছি। এ বিভাগ থেকে এস.এস.সি পাস করে আমি ঢাকায় ভালো কোনো কলেজে ভর্তি হব। সেখান থেকে এইচ.এস.সি. পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হব। তারপর সেখান থেকে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করে আমি আমার গ্রামে ফিরে আসব। গ্রামের স্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে গ্রামের সবাইকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে তোলার প্রচেষ্টায় নিজেকে নিয়োজিত রাখব। গ্রামের ধনী-দরিদ্র, উঁচু-নিচু, ধর্ম-বর্ণ সকল শ্রেণির মানুষের ছেলেমেয়েরাই যেন পড়ালেখার সুযোগ পায় সে ব্যাপারে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। তাছাড়া আমার স্বপ্ন রয়েছে গ্রামের অশিক্ষিত বয়স্ক নারী-পুরুষদেরকে নিয়ে। তাদেরকে শিক্ষিত করে তোলার জন্য একটি নৈশবিদ্যালয় স্থাপন করব। বিশেষ করে গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মেয়েরাও যেন শিক্ষিত হতে পারে সে ব্যাপারে গ্রামের সবাইকে সচেতন করে তুলব।

সাফল্য লাভ: শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। একজন আদর্শ শিক্ষকই পারে একটি আদর্শ সমাজের ভিত্তিমূল স্থাপন করতে। আমিও একটি আলোকিত শিক্ষিত জাতি গড়ে তুলতে চেষ্টার কোনো ত্রুটি করব না। তারপরও আমি কতটুকু সফলতা লাভ করব তা নিশ্চিত করে বলতে পারি না। তবে আমার কোনো ছাত্র যখন কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক হয়ে মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে তখন গর্বে আমার মন ভরে উঠবে।.

উপসংহার: মানুষ তার জীবনের লক্ষ্য স্থির করলেও অনেক সময় তা বাস্তবায়ন করতে পারে না। নিজ' কক্ষপথ থেকে আমরা অনেকেই বিচ্যুত হয়ে পড়ি। কিন্তু আমি আমার জীবনের অভীষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষক ও গুণীজনদের পরামর্শমতো নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাব। আমার বিশ্বাস উদ্যম ও সাধনার ফলে আমি জীবনের লক্ষ্য অর্জনে সফলতা লাভকরব।