• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ

'ভূমিকা: শিক্ষা হচ্ছে মানুষের সার্বিক বিকাশের পথ। প্রকৃতি প্রদত্ত জ্ঞানের সর্বোত্তম ব্যবহারে যার দক্ষতা যত বেশি সে তত শিক্ষিত। যা নিজের এবং অন্যের কল্যাণে অবদান রাখে, সুন্দর ও অসুন্দরের ভেদ বিবেচনায় সহায়তা করে তাই শিক্ষা। মানুষ প্রকৃতি থেকেই প্রথম শিক্ষা গ্রহণ করে। পরে ধীরে ধীরে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও শিক্ষালয় থেকে জ্ঞান অর্জন করে নিজেকে গড়ে তোলে। শিক্ষা মানুষকে মানবীয় করে, প্রত্যাশার মতো করে সময়োপযোগী করে গড়ে তোলে। শিক্ষা, প্রকৃত শিক্ষা, নৈতিক শিক্ষা এগুলোর উদ্দেশ্য একই। প্রকৃত লব্ধ জ্ঞানের সাথে অর্জিত জ্ঞানের সুসমন্বয়ই নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের মূল ভিত্তি। এই মূল ভিত্তিকে সুদৃঢ় করার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি, দেশ, সমাজ ও জাতির কল্যাণ বয়ে আসে।

নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ যে শিক্ষা মানুষের জীবনবোধের সঙ্গে নৈতিকতার সমন্বয় সাধন করে তাই নৈতিক শিক্ষা। নৈতিক শিক্ষা নৈতিক মূল্যবোধের জন্ম দেয়। মনুষ্যত্ব অর্জনে মানুষের যে অব্যাহত সাধনা চলছে সেই পথে এগিয়ে নেওয়ার যথার্থ নিয়ামক নৈতিক শিক্ষা। নৈতিক শিক্ষা এমন কিছু বিশেষ গুণাবলি অর্জন যা মানুষকে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত বিচার করার শক্তি দেয়। অন্যদিকে তা অন্যায়, অনিয়ম, অনুচিত ও মন্দ কাজকে পরিহার করে নৈতিক আদর্শের অনুবর্তী করে তোলে। মানবসমাজ গড়ে ওঠার নেপথ্যে নৈতিক মূল্যবোধের দান অসীম। মানুষের জীবনের যাবতীয় কল্যাণকর, শুভবুদ্ধি ও শুভচিন্তা এবং তার বিপরীত বুদ্ধি ও চিন্তা বিচারের আপেক্ষিক মানদণ্ডই হলো নৈতিক মূল্যবোধ।

নৈতিক মূল্যবোধের গুরুত্ব নৈতিক মূল্যবোধ হচ্ছে মানুষের জীবনব্যবস্থা ও জীবনপদ্ধতিকে সুন্দরভাবে নির্মলভাবে পরিচালনার অনুসরণযোগ্য কিছু আচরণ। নৈতিকতা মানুষকে অন্যায় ও বন্ধুর পথ থেকে বাঁচায়; আত্মস্বার্থ, লোভ, হিংসা, ভোগ থেকে মুক্ত রাখে; ত্যাগের মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে উঠতে অনুপ্রাণিত করে। নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ মানুষকে প্রবল আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ় মানসিক শক্তি এনে দেয়। যার বলে বলীয়ান হয়ে মানুষ যাবতীয় দুর্নীতিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করতে শেখে; সচেতনভাবে অন্যায় ও অবৈধ পথ পরিহার করতে শেখে; সত্য ও ন্যায়ের- আদর্শ অনুসরণ করে; পরের কারণে আত্মস্বার্থ ত্যাগ করে পরহিতে এগিয়ে যায়; সজ্ঞানে কখনোই অন্যের ক্ষতি করে না। ধর্মের কল্যাণধর্মিতাকে আদর্শ ধরে নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে। নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ আলোকিত মানুষ। এ মানুষদের দ্বারাই নিষ্কলুষ আলোকিত সমাজ গড়ে ওঠে। কাজেই মানুষের আত্মিক, সামাজিক ও জাতীয় জীবনের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ একান্ত জরুরি।

নৈতিকতা বর্জিত শিক্ষার ফল নৈতিক শিক্ষার অভাবে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি অন্যায়, অবিচার ও দুর্নীতি হচ্ছে। নৈতিকতার অভাবে শিক্ষাগ্রহণ করেও নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে ছোট থেকে বড় পর্যন্ত সবাই। সারাবিশ্বে আজ ভোগবাদী মানসিকতার ব্যাপক প্রসার লক্ষ করা যাচ্ছে। মানুষ মানবতা ভুলে নিজের পশুত্বকে জাগিয়ে তুলছে। ক্ষমতাবলে কে কত বেশি হিংস্র হতে পারে সে প্রতিযোগিতায় মেতেছে সবাই। দেশ-কাল-ধর্মাধর্ম, কোনোকিছুতেই তাদের কোনো মনোযোগ নেই। মনোযোগ কেবল অর্থসম্পদ, ক্ষমতা, প্রভাব-প্রতিপত্তির দিকে। তারা ভুলেই গেছে মানুষ হয়ে জন্মানোর বিশেষ দায়-দায়িত্বের কথা। আমাদের দেশেও নৈতিক শিক্ষার অভাবে নৈতিক মূল্যবোধের ব্যাপক অবক্ষয় শুরু হয়েছে।

সীমাহীন দুর্নীতি সর্বস্তরে, গ্রাস করছে সমাজকে। নীতিনৈতিকতাহীন, বিবেকহীন মানুষ আজ সদন্তে সমাজে বিচরণ করছে, ন্যায়-নীতির গলা টিপে ধরছে। কাজেই আর কালক্ষেপণ না করে, অবহেলা আর উদাসীনতায় গা না ভাসিয়ে এখনই নৈতিক শিক্ষার প্রসার, মানবিক আচরণ ও মূল্যবোধের উপর জোর দিতে হবে। না হলে আমাদের ভবিষ্যতের দুর্ভাগ্যের জন্য আমাদেরই দায়ী থাকতে হবে।

নৈতিক অবক্ষয় রোধের উপায় নৈতিক অবক্ষয় রোধের প্রধান উপায় হচ্ছে নৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটানো। নৈতিক শিক্ষার প্রসারে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ও জাতীয় জীবনে সুস্থ ধারা ফিরে আসতে বাধ্য। হযরত মুহম্মদ (স), যিশু খ্রিস্ট, গৌতম বুদ্ধ, শ্রীকৃষ্ণ প্রমুখ ধর্মপ্রবক্তা ন্যায়-নীতি ও মানবিক মূল্যবোধের যে মহান মর্মবাণী মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন, তার গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে। স্বার্থ হাসিলের জন্য কোনো ধর্মেরই অপব্যাখ্যা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। বিভিন্ন ধর্মের সারবস্তুর সাথে আদর্শ ও নীতির উদ্দেশ্য ও কাজের সাথে পরিচয় ঘটলে শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে উঠবে। মানুষের মানসিক বিকাশে নৈতিকতা ইতিবাচক দিক হিসেবে জায়গা করে নেবে। নৈতিক শিক্ষার মধ্য দিয়ে 'সমাজজীবনে ন্যায়-নীতি, মানবিক মূল্যবোধ ও মহৎ আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে হলে সবাইকে আত্মোপলব্ধিতে সত্য ও ন্যায়কর্মের মহাসমাবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

উপসংহার: অন্যায়ের বিষবাষ্পে জাতি আজ মর্মাহত। নৈতিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় ঠেকাতে নৈতিক শিক্ষার বিকল্প নেই। ধর্মীয় অনুশাসন ও নৈতিক শিক্ষার অভাবে সমাজের সর্বস্তরে কেবল দুর্নীতি নয়, মানবদেহে নানা রকম মরণ ব্যাধিও সংক্রমিত হচ্ছে। কাজেই নৈতিকতা বর্জিত শিক্ষা আমাদের জন্য আত্মঘাতী এবং আত্মহত্যার শামিল। সুতরাং প্রত্যেককেই নৈতিকতাবোধে উন্নীত হয়ে সুন্দর আগামী বিনির্মাণে এগিয়ে আসা উচিত।