• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

কুয়াকাটা সৈকতে একদিন

ভূমিকা: ভ্রমণ করতে সবাই ভালোবাসে। ভ্রমণের মাধ্যমে যে আনন্দ অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়, তা অন্য কোনোভাবে সম্ভব নয়। আর সমুদ্র সৈকতে বেড়ানোর মজাই আলাদা। কারণ সমুদ্রের প্রতি মানুষের রয়েছে এক দুর্নিবার মোহ। সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে অসংখ্য অপূর্ব লীলা সৃষ্টি করেছেন। এক গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে সমুদ্রের জলরাশিতে। সমুদ্রের তলদেশের রহস্য নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণার অন্ত নেই। সমুদ্র মানুষের জন্য আনন্দ-বেদনা দুই-ই বয়ে আনে। কিন্তু তারপরও সমুদ্রের প্রতি মানুষের মোহ কাটে না। আর সেই রকম এক গভীর মোহ থেকেই সমুদ্রের প্রতি আমার আকর্ষণ বাড়তে থাকে।

কুয়াকাটা সৈকতের উদ্দেশে যাত্রা: দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপদান করতে আমার জীবনেও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত ভ্রমণের সুযোগ আসে। ২০১৮ সালে এইচএসসি পরীক্ষার পর বড় আপা ও দুলাভাই কুয়াকাটা যাওয়ার প্রস্তাব দিলে আমি এক বাক্যে রাজি হয়ে যাই। যাত্রার জন্য আমার মন যথেষ্ট উদগ্রীব ছিল। অবশেষে শুক্রবার কাপড়-চোপড় গুছিয়ে নিয়ে একটি মাইক্রোবাসে করে আমরা কুয়াকাটার উদ্দেশে যাত্রা করলাম। শরতের মিষ্টি রোদ আর ঝিরিঝিরি বাতাসে আমরা এগিয়ে চললাম। রাস্তার দু'পাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করে। সেই সঙ্গে রাস্তার পাশে বিরতি দিয়ে খাওয়া-দাওয়া করা ভ্রমণের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দেয়। ভোর ৫টার দিকে আমরা কুয়াকাটার সুন্দর, পরিচ্ছন্ন হোটেলে গিয়ে উঠলাম। সবাই খুব ক্লান্ত থাকায় কিছু সময় হোটেলেই বিশ্রাম নিই। তবে মনের মধ্যে শুধু আঁকুপাঁকু ভাব, কতক্ষণে সমুদ্র তীরে গিয়ে নয়নভরে দেখব সমুদ্রের আসল চেহারা।

সূর্যোদয়ের দৃশ্য: খুব সকালে আমরা তাড়াহুড়ো করে চলে যাই সমুদ্র সৈকতে। সূর্যোদয় দেখার জন্য সবাই উদগ্রীব। অতঃপর দেখলাম সূর্যোদয়। সে এক অপরূপ দৃশ্য। সমুদ্রে মিশে থাকা দিগন্ত ক্রমশ লাল হয়ে উঠল। তারপর ধীরে ধীরে সমুদ্রগর্ভ থেকে উঠে এলো লাল সূর্য। সূর্যের জবা কুসুমের মতো রং ক্রমশ সোনালি রং ধারণ করে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। মনভরে দেখে নিলাম সূর্যোদয়। দুপুর পর্যন্ত কুয়াকাটার আশপাশের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য আমরা উপভোগ করলাম।

কুয়াকাটা সৈকতের অভিজ্ঞতা: পড়ন্ত বিকেলে আমরা চলে যাই সমুদ্র সৈকতে। সেখানে অনেক লোকের সমাগম দেখে মনে হয় যেন মেলা বসেছে। সমুদ্রের ঢেউয়ের শব্দ আমাদের বিমোহিত করে। লোকজন নানাভাবে উপভোগ করে এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। কেউ বালিতে বসে আছে, কেউ ঝিনুক খুঁজছে, কেউবা ক্যামেরা হাতে নিয়ে ছবি তোলায় ব্যস্ত। দু চোখে অবাক বিস্ময় নিয়ে আমি দেখতে লাগলাম সমুদ্রের বিশাল জলরাশি। হঠাৎ দেখি সমুদ্রের ঢেউ এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে আমার পা। আমি দুহাত ভরে তুলে নিলাম সমুদ্রের নোনা জল। সমুদ্রে গোসল করে দেহ-মন ভরে গেল এক অদ্ভুত আনন্দে। সূর্যাস্তের অপূর্ব সৌন্দর্য একমাত্র সমুদ্র সৈকত থেকে দেখা সম্ভব। সূর্যাস্তের সেই অপূর্ব মুহূর্তের কথা ভাষা দিয়ে প্রকাশ করা যায় না। পশ্চিম আকাশ রঙিন আভায় ভরে ওঠে। আর সমুদ্রের নীল সেই লাল আভার সঙ্গে এক গভীর মিতালি তৈরি করে। গোধূলি লগ্নের এরূপ নৈসর্গিক দৃশ্যের তুলনা হয় না। আকাশে অসংখ্য তারা আর নিচে উত্তাল সমুদ্র। রাতের সমুদ্রও বড় অপরূপ, বড়ই মনোহর।

কুয়াকাটা সৈকত থেকে প্রস্থান: মন না চাইলেও আমাদের ফিরে আসতে হয়। রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষ করার পর আমরা ফেরার সিদ্ধান্ত নিই। গাড়িতে ওঠার সময়ও আমরা বারবার ফিরে ফিরে তাকাই সমুদ্র সৈকতের দিকে। গাড়ির দোলায় আমাদের চোখ বুজে এলেও মনের মধ্যে বারবার ভেসে ওঠে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের অপরূপ দৃশ্য।

উপসংহার: খুব সংক্ষিপ্ত সময়ে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত আমাদের মায়ার বাঁধনে বেঁধে ফেলে। ফিরে আসতে মন না চাইলেও ফিরতেই হয়। সমুদ্র মানুষকে টানে। মানুষের ক্লান্তিকে প্রশমিত করে। সমুদ্রের উদারতা ও সৌন্দর্যের ঘনঘটা মানুষের মনকে তুষ্ট করে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে কাটানো এই একটি দিন আমার স্মৃতিপটে দাগ কেটে যায়।