- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
বৃক্ষমেলা
ভূমিকা: পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষের ভূমিকা অপরিসীম। চির সবুজ এই বাংলাদেশে প্রকৃতিগতভাবেই প্রচুর গাছপালা জন্মায়। তবে জনসংখ্যা অতিমাত্রায় বৃদ্ধির ফলে সবুজ এই শ্যামলিমায় যেন ঘাটতি দেখা দিচ্ছে দিন দিন। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য একটি দেশের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা আবশ্যক। আমাদের পরিবেশ ও অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বনায়ন বৃদ্ধি করা উচিত। এজন্য বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। বৃক্ষরোপণের গুরুত্বের কথা চিন্তা করে বৃক্ষমেলার আয়োজন করা হয়। বৃক্ষমেলায় নানা ধরনের গাছের চারা পাওয়া যায়।
বর্তমান প্রেক্ষাপট.ও বৃক্ষমেলা গত এক দশকে সরকারিভাবে বাংলাদেশে জোরালোভাবে বৃক্ষরোপণের ডাক দেওয়া হয়েছে। মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এবং বিভিন্ন গাছের চাহিদার জোগান দিতে বৃক্ষমেলার গুরুত্ব অনেক। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকার একটি বাণী বিশেষভাবে প্রচার করছে। তা হলো-
"গাছ লাগান, গাছের পরিচর্যা করুন
এবং পরিবেশ বাঁচান।"
আমাদের দেশে প্রতিবছর জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে বৃক্ষরোপণ অভিযান সপ্তাহ পালন করা হয়। দেশে বৃক্ষরোপণ অভিযান সফল করতে বৃক্ষমেলা অসামান্য ভূমিকা পালন করে।
বৃক্ষমেলার বর্ণনা: বৃক্ষমেলায় বিভিন্ন গাছের সমারোহ লক্ষ করা যায়। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে মেলার স্টলগুলো সাজানো হয়। ফুল, ফল আর বিভিন্ন গাছে মেলার প্রাঙ্গণ আর স্টলগুলো সবুজে ভরে ওঠে। সবুজের পরশ নিতে, ইট-পাথরের যান্ত্রিক জীবনে এক ফুরসত নিতে মানুষ মেলা প্রাঙ্গণে ছুটে যায়। নানা বয়সী বৃক্ষপ্রেমীদের আগমনে জমে ওঠে বৃক্ষমেলা। বিভিন্ন নার্সারি তাদের গাছের সমাহার নিয়ে হাজির হয় বৃক্ষমেলায়। বৃক্ষমেলায় অনেক দুষ্প্রাপ্য গাছও পাওয়া যয়। বৃক্ষপ্রেমী মানুষ তাদের চাহিদামাফিক গাছ কেনেন বৃক্ষমেলা থেকে। দেশি-বিদেশি গাছের সমারোহে জমে ওঠে বৃক্ষমেলা। বৃক্ষমেলায় নতুন উদ্ভাবিত গাছের প্রদর্শনী একটি আকর্ষণীয় বিষয়। ফলদ, বনজ, ঔষধি ইত্যাদি শ্রেণিতে বৃক্ষমেলায় গাছের চারা পাওয়া যায়।
ফলদ গাছের চারা: বৃক্ষমেলায় স্টলগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছের চারা পাওয়া যায়। বিশেষ করে আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, বাতাবি লেবু, আমড়া, সফেদা, কমলালেবু, আঙ্গুর, ডালিম, করমচা, লিচু, কামরাঙা ফলের চারা পাওয়া যায়। আমগাছসহ বিভিন্ন ফল গাছের চারায় ফল ধরে থাকতে দেখা যায়। বাংলদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) নতুন উদ্ভাবিত বিভিন্ন ফল গাছের চারা প্রদর্শন করে।
বনজ বৃক্ষের চারা: বৃক্ষমেলায় বনজ বৃক্ষের চারাও পাওয়া যায়। নিম, মেহগনি, দেবদারু, কড়ই, আকাশমণি, শাল, সেগুন, গজারি ইত্যাদি বনজ বৃক্ষের চারা মেলায় পাওয়া যায়। আমাদের কাঠের চাহিদা পূরণে এসব গাছের ভূমিকা 'অপরিসীম। দেশের বিভিন্ন নার্সারিতে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও যে গাছগুলো পাওয়া যায় না সেগুলো বৃক্ষমেলায় পাওয়া যায়।
ঔষধি গাছের চারা: বৃক্ষ আমাদের ফুল, ফল, কাঠ দিয়ে নানাভাবে উপকার করে। কিছু গাছ রয়েছে ঔষধি গুণসম্পন্ন। এসব গাছের বিভিন্ন অংশ নানা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। যেমন: আমলকী, হরীতকী, বহেরা, নিম, বাসক, তুলসী, অর্জুন, কালমেঘ, ঘৃতকুমারী ইত্যাদি গাছের চারা বৃক্ষমেলায় পাওয়া যায়। মানুষ তাদের প্রয়োজন অনুসারে এসব ঔষধি গাছের চারা ক্রয় করে।
অন্যান্য গাছের সমাহার: বৃক্ষমেলায় যে কত বিচিত্র গাছের সমাহার লক্ষ করা যায় তা বলে শেষ করা যায় না। বিভিন্ন 'শোভাবর্ধনকারী পাতাবাহার মেলায় প্রদর্শিত হয়। বর্তমান সময়ে বনসাই গাছের প্রতিও শহরের মানুষের আগ্রহ যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন বাহারি ফুলগাছের চারায় ভরে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। মানুষ বাড়ির বারান্দা, আঙিনা, ছাদের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য এসব গাছের চারা কিনে নিয়ে যায়। অনেকে শখ করে কেনে পোলাউ পাতা, কারিপাতা, তেজপাতা, দারুচিনিসহ বিভিন্ন মসলার গাছ। বিভিন্ন ধরনের সার, কীটনাশক ও গাছের পরিচর্যার সামগ্রীও মেলায় পাওয়া যায়।
জাতীয় বৃক্ষমেলা: জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও মাসব্যাপী বৃক্ষমেলা শুরু হয় ১৮ জুলাই থেকে। প্রতিবছর রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাণিজ্যমেলার মাঠ যেন একখন্ড সবুজ বাগানে পরিণত হয়। মাসব্যাপী চলতে থাকা এ মেলায় বৃক্ষপ্রেমীদের যথেষ্ট আগ্রহ লক্ষ করা যায়। মেলায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মোট ১০০টি স্টল বসে। প্রতিটি স্টলে থাকে বিভিন্ন গাছের সমারোহ। দেখা যায় আমসহ বিভিন্ন গাছের চারায় ধরে আছে ফল। প্রথম সপ্তাহেই জমজমাট হয়ে ওঠে 'জাতীয় বৃক্ষমেলা'। মেলায় শিশুরা আগ্রহ নিয়ে উপস্থিত হয়ে নতুন নতুন বৃক্ষের সঙ্গে পরিচিত হয়। বৃক্ষমেলার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে বলে আয়োজকরা আশা করেন।
উপসংহার: পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে বৃক্ষমেলার গুরুত্ব অপরিসীম। বৃক্ষমেলা ফুল, ফল আর বিভিন্ন গাছের সমারোহে সবুজ ওয়ে ওঠে। মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিতে এবং চাহিদা অনুযায়ী গাছের জোগান দিতে বৃক্ষমেলার তুলনা হয় না। মোট কথা, কঙ্কিটের এই নাগরিক জীবনে সবুজের সমারোহ নিশ্চিত করতে সফল বৃক্ষমেলার আয়োজন একান্ত প্রয়োজন।