- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
সুন্দরবন
ভূমিকা: সুন্দরবন হলো পৃথিবীর মধ্যে সর্ববৃহৎ গরানগাছের বন। বাংলাদেশের বনভূমির মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ বনভূমি। এ বনভূমির শতকরা বাষট্টি শতাংশ এদেশের খুলনা জেলায় এবং আটত্রিশ শতাংশ ভারতের অন্তর্গত পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশপরগনা জেলায় অবস্থিত। এ বন পৃথিবীর পর্যটকদের নিকট অতিশয় আকর্ষণীয় স্থল। কারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের যেমন অপার মহিমা এ বন তেমনি জীববৈচিত্র্যে অতুলনীয়।
সুন্দরবনের আয়তন: প্রায় দুই শত বছর পূর্বে ষোল হাজার সাত শত বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে এই সুন্দরবন বিস্তীর্ণ ছিল। কিন্তু এখন এর আয়তন দিন দিন কমে আসছে। এর আয়তন এখন মাত্র ছয় হাজার সতের বর্গকিলোমিটার। এই সুন্দরবন এদেশের দুটি বনবিভাগের আওতার মধ্যে আছে। উলেখ্য যে, একুশ ডিগ্রি ত্রিশ ইঞ্চি উত্তর অক্ষাংশ থেকে ঊননব্বই ডিগ্রি পঞ্চান্ন পূর্ব দ্রাঘিমাংশে এ বনের অবস্থান রয়েছে।
সুন্দরবনের গাছগাছালি সুন্দরবনের গাছগাছালি বিভিন্নরকমের বলে প্রকৃতিপ্রেমিরা জানিয়েছেন। এখানকার বহুবিধ গাছগাছালির মধ্যে গরান গাছ উল্লেখযোগ্য। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ডি. প্রেইন এ বনের মধ্যে ৩৩৪ ধরনের গাছগাছালির কথা বলেছেন। তিনি আরও বলেছেন যে সমগ্র বিশ্বে সর্বমোট-৫০টি গরানগাছের মধ্যে এ সুন্দরবনেই ৩৫টি গরানগাছের অস্তিত্ব রয়েছে।
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য: এ সুন্দরবনে বিভিন্ন ধরনের জীববৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। তন্মধ্যে চারশ প্রজাতির মাছ, তিনশ বিশ প্রজাতির পাখি, পঞ্চাশ প্রজাতির সরীসৃপ, পঞ্চাশ প্রজাতির স্তন্যপায়ী ও আট প্রজাতির উভচর প্রাণীর উল্লেখ করা যায়। বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায় যে স্তন্যপায়ীদের মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার দুনিয়াখ্যাত। এছাড়া এ বনে রয়েছে বানর, বনবিড়াল, চিতাবাঘ, হরিণ, বক, সারস, হাড়গিল, কাদাখোঁচা প্রভৃতির বসবাস।
বর্তমানকালের সুন্দরবন: সুন্দরবনের বনজ সম্পদের প্রতি লোভে একদল দুষ্টচক্র সেখানে প্রবেশ করে এর বহুবিধ ক্ষতি সাধন করে চলেছে। তারা গরানগাছ কেটে বিক্রি করছে। জীববৈচিত্র্য ধরে বিদেশে পাচার করছে। এখন অসংখ্য বাঘের মধ্যে মাত্র চারশ পঞ্চাশটি বাঘের অস্তিত্ব মেলে। ফলে এখানকার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া লবণাক্ততা বেড়ে গিয়ে এখানকার গরানগাছ মরে যাচ্ছে। এসব কারণে সুন্দরবনের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
উপসংহার: সুন্দরবন বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ এবং পর্যটনকেন্দ্র। তাই এ সুন্দরবন নিয়ে দেশ ও জাতি অহঙ্কার করতে পারে। কিন্তু দুষ্টচক্র প্রতিদিন এ সুন্দরবনের ক্ষতিসাধন করছে। তারা গরানগাছ কাটছে, পশু নিধন করছে ইত্যাদি ভাবে তারা এ সুন্দরবনের ঐতিহ্য বিনষ্ট করছে। শুধু সরকার নয়, এদেশের সচেতন প্রতিটি নাগরিকের উচিৎ এই বন রক্ষা করতে এগিয়ে আসা। এর ব্যতিক্রম হলে আমাদের গৌরবময় ঐতিহ্য, চিরদিনের মত বিলুপ্ত হয়ে যাবে।