• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

বিজয় দিবস

ভূমিকা: পৃথিবীর প্রত্যেকটি জাতির জীবনে এমন কতকগুলো দিন আসে যার স্মৃতি কোনোদিন ভোলা যায় না। আমাদের জাতীয় জীবনে তেমনি একটি স্মৃতিময় অমলিন দিন 'বিজয় দিবস' বা ১৬ ডিসেম্বর। নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর এ দিনে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় তথা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বিনা শর্তে আত্মসমর্পণ করেছিল। দিনটি বাংলাদেশে জাতীয় মর্যাদায় পালন করা হয় এবং এটি সরকারি ছুটির দিন। তাই বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে দিনটি আমাদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যময়।

পটভূমি: পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই ষড়যন্ত্র শুরু হয় বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের নিয়ে। সমগ্র পাকিস্তানে বাঙালিরা জনসংখ্যায় বেশি হলেও তাদের ভাষাকে বাদ দিয়ে সংখ্যালঘু মানুষের ভাষা উর্দু আর ইংরেজিকে গণপরিষদের ভাষা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এর প্রতিবাদে ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ ঢাকায় ফজলুল হক মুসলিম হলে এক সভায় বাংলা ভাষার পক্ষে 'সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' গঠিত হয়।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল নিয়ে রাজপথে নামে। পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে রফিক, জব্বার, সালাম, বরকতসহ আরো অনেকে শহিদ হন। বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায়। ১৯৬৬ সালে স্বাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছয়দফা দাবি পেশ করেন। ১৯৬৮ সালে শাসকগোষ্ঠী 'আগরতলা মামলা' দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানকে কারাগারে পাঠায়। শুরু হয় গণআন্দোলন। সারাদেশে গণআন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিলে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়া হয়। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়নি।

আলোচনার নামে অযথা সময়ক্ষেপণ শুরু হলে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে বলেন, "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।" ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর। জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড চালায়। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেফতারের পূর্বে বঙ্গবন্ধু ওয়্যারলেস বার্তায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

১০ এপ্রিল অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার গঠনের পর ১৭ এপ্রিল সরকারের শপথ গ্রহণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। ত্রিশ লক্ষ শহিদ, দুলক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি ও লক্ষ কোটি টাকার সম্পদের বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জিত হয়।

বিজয় দিবস উদযাপন: প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় মর্যাদার সাথে বাংলাদেশে বিজয় দিবস উদযাপিত হয়। এটি সরকারি ছুটির দিন। এদিনে রাজধানী শহরকে সাজানো হয় নানা রঙের আলোকসজ্জা দিয়ে। সরকারি, আধা-সরকারি ও বেসরকারি অফিসগুলোতে জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয়। জেলা শহরগুলোও সেজে ওঠে বিজয়ের আনন্দে। মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। নানা স্থানে হয় আলোচনা অনুষ্ঠান। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে নানা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। খেলাধুলার ব্যবস্থা করা হয়।

আবাসিক ভবনগুলোতেও জাতীয় পতাকা ওড়ে। মনে হয় পতাকাটিও যেন বিজয়ের আনন্দে গর্বিত। এমনিভাবে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিজয় দিবস উদযাপিত হয়। বিজয় দিবসের তাৎপর্য: ১৯৭১ সালে তিরিশ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। নয় মাস ধরে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এই স্বাধীনতা এসেছে। এ স্বাধীনতা অর্জনে দেশের কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে। শূন্য হয়েছে অগণিত মায়ের কোল। আমাদের স্বাধীনতা, আমরা ত্রিশ লক্ষ শহিদের কাছে ঋণী। এ ঋণ শোধ হবার নয়। বিজয় অর্জন করা যত কঠিন, বিজয়ের গৌরবকে ধরে রাখা তার চেয়ে আরো বেশি কঠিন।

মুক্তিযোদ্ধারা যে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছিলেন, তাঁদের স্বপ্ন-আশা বাস্তবায়িত করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে আমরা রাজনৈতিক মুক্তি এবং স্বাধীনতা পেয়েছি বটে, প্রকৃতপক্ষে পরিপূর্ণ বিজয় আমাদের এখনো আসেনি। এদেশের অনেক মুক্তিযোদ্ধা আজ পঙ্গু, অসহায়। রোগ-ব্যাধিতে ভুগে, বিনা চিকিৎসায়, অনাহারে, অর্ধাহারে মারা যাচ্ছেন। দেশের দরিদ্র, বিপন্ন লোকজন তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত।

শ্রমিকেরা কাজ করেও উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাচ্ছে না। বিজয় দিবসের দাবি এসব মানুষের মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠা করা। এর জন্যই তো তারা মা-বাবা, স্ত্রী-পুত্র, পরিজন ফেলে যুদ্ধে গিয়েছিল, ফিরে এসে তাদের অনেককেই আর তারা পায়নি। অথচ তাদের জন্যই আমরা পেয়েছি এমন একটি আনন্দময় বিজয়ের দিন। এ বিজয়ের সুবাদেই আজ আমরা অনেকেই নানা ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। মর্যাদার আসনে উপবিষ্ট হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধের বিজয় ছাড়া আমাদের সাফল্য ছিল সুদূর পরাহত। কাজেই আমাদের জাতীয় জীবনে বিজয় দিবসের তাৎপর্য অপরিসীম।

উপসংহার: বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম বা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বিজয় দিবস বা ১৬ ডিসেম্বর একটি গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্যময় দিন। আমাদের জাতীয় জীবনে দিনটি খুবই গৌরবের। একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এ বিজয় আমরা ছিনিয়ে এনেছিলাম। তাই বিজয় দিবসকে সার্থক করে তোলার জন্য দল-মত নির্বিশেষে সকলকে একযোগে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। তাহলেই আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে গৌরবের অধিকারী হতে পারব।