- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
তোমার শৈশব স্মৃতি
ভূমিকা: শৈশবের মধুময় দিনগুলোর কথা ভাবতে সত্যিই খুব ভালো লাগে। তাই যখনই কোনো অবসর সময় আসে, স্মৃতির পাতা খুলে চোখের সামনে তুলে না ধরে পারি না। শৈশবের সব ঘটনা ঠিক স্মরণে আসতে চায় না। তবে স্পষ্ট আর অস্পষ্ট যাই হোক না কেন, স্মৃতিগুলো যখন স্মরণে আসে তখন মন ভরে যায় এক অনাবিল আনন্দে, সেগুলোকে ঠিক রঙিন স্বপ্নের মতো মনে হয়। ইচ্ছে হয় শৈশবের দিনগুলোতে ফিরে যাই।
আমার শৈশব প্রকৃতি: শৈশবে মানুষের জীবনে বহু ঘটনার সমাবেশ ঘটে, তার মধ্যে এমন কিছু ঘটনাও থাকে যা কোনোদিন মন থেকে বিস্মৃত হয় না। শৈশবে আমার দুরন্তপনায় বাড়ির সবাই অস্থির থাকতেন। বন্ধুবান্ধব নিয়ে এপাড়া ওপাড়া ঘুরে বেড়ানো এবং পুকুরে সাঁতার কাটা এসব ছিল আমার প্রতিদিনের কাজ। আমাদের দলের নেতা ছিলাম আমি এবং সকলেই আমাকে ভয় করত। বাবা-মায়ের শাসনকে কখনো ভয় করতাম না। তাই বলে যে আমি পড়ালেখায় খারাপ ছিলাম তা নয়। আমি প্রত্যেক পরীক্ষাতেই প্রথম হয়ে পাস করতাম।
স্মৃতির ঘটনা: আমার শৈশব কেটেছে গ্রাম ও শহর মিলিয়ে। আমাদের গ্রামটা তেমন বড় ছিল না। গ্রামের চাল-চলনকে একেবারে গ্রাম্যও বলা চলে না; অনেকটা শহুরে পরিবেশ ছিল আমাদের গ্রামে। গ্রামে একটা মাঝারি ধরনের বাজার ছিল। আমি দাদার সাথে প্রায়ই বাজারে যেতাম। তিনি আমাকে লজেন্স, বিস্কুট, মিষ্টি, কলা এবং আরও অনেক কিছু কিনে দিতেন। এতসব আদর যত্ন ফেলে রেখে একদিন আমাকে মা-বাবার সাথে শহরে যেতে হলো। ভর্তি করিয়ে দেওয়া হলো স্কুলে।
স্কুলের প্রথম দিনের কথাটা আজও আমার বেশ মনে পড়ে। বাবা আমাকে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে গেলেন। তিনি বাবাকে একটা চেয়ারে বসার অনুরোধ করে আমাকে তাঁর কাছে ডেকে নিলেন। তারপর তিনি আমাকে দুতিনটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন। উত্তরগুলো আমার জানাই ছিল। তাই আমি ঝটপট উত্তর দিয়ে দিলাম। তবে ভয়ে আমার গলাটা শুকিয়ে যেন কাঠ হয়ে গিয়েছিল। সেদিনই আমাকে ভর্তি করে নেওয়া হয়েছিল স্কুলে। অনেক বন্ধু-সাথি জুটল। আমার ভয় আর
থাকল না।
একবার গ্রীষ্মকালে পনেরো দিনের জন্য স্কুল ছুটি হয়েছে। আমরা হাজির হলাম আমাদের স্বপ্নঘেরা গ্রামে। খবর পেয়ে আমার সমবয়সীরা ছুটে এলো আমাকে দেখার জন্য। দাদা তো বহুদিন পরে আমাকে পেয়ে একেবারে জড়িয়ে ধরলেন বুকে। গাছে গাছে তখন আমের গায়ে রং ধরেছে। দেখে আমার আর মন মানছে না। সুযোগের অপেক্ষায় থাকলাম সারাক্ষণ।
একদিন দুপুরে খাওয়ার পর দাদা একটা বই নিয়ে বিছানায় এলিয়ে পড়েছিলেন। বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়লেন তিনি। ছোট ভাইদের চুপিসারে ডেকে নিয়ে বললাম, তোরা সবাই নিচে থাক, আমি গাছে উঠি। যে গাছের আম বেশি রসালো, সেটা ছিল দাদার ঘরের জানালার পাশে। খুব সাবধানে পা টিপে টিপে গাছে উঠলাম। যেই একটা ডালে পা দিলাম, অমনি ডালটি ভেঙে আমাকে নিয়ে পড়ল মাটিতে। আমার এক পায়ে ভীষণ চোট লেগেছে। তারপর আর কিছুই মনে নেই। বেশ কিছুক্ষণ পরে চেতনা ফিরে পেয়ে দেখি আমি শুয়ে আছি দাদার বিছানায়। পাশে বসে আছেন দাদা দাদি, মা বাবা এবং আরও অনেকে। দাদা আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন, "কেমন লাগছে দাদু? কোনো চিন্তা নেই; তুমি ভালো হয়ে গেছ। তবে আম চুরি করার জন্য আর কিন্তু গাছে উঠবে না। আমি নিজেই তোমাকে আম পেড়ে দেব।" দাদার এই কথাগুলো আজও আমার স্মৃতিপটে জীবন্ত হয়ে আছে।
মানসিক অনুভূতি: আমার জীবন থেকে শৈশব হারিয়েছে অনেক দিন আগে, সেই স্বপ্নময় জীবনের অনেক স্মৃতিই আজ আর মনে করতে পারি না। সেসব মায়াময়, ছায়াময়, স্বপ্নময় দিন আর কোনোদিন ফিরে পাওয়া যাবে না। অতীতের দিকে তাকিয়ে শুধু ভাবি যদি শৈশবের দিনগুলো আর একবার ফিরে আসত জীবনে।
উপসংহার: আমার শৈশব ছিল বড়ই বৈচিত্র্যময়, বড়ই আনন্দের। সব মনে না থাকলেও আরও কত স্মৃতি যে আছে আমার ভান্ডারে, তা বলে শেষ করা যাবে না। সেসব স্মৃতি আজও আমার জীবনে আনন্দের উপকরণ হয়ে আছে। নানা কাজের অবসরে নিরালায় বসে বসে ভাবি, শৈশবের স্মৃতিগুলোর চেয়ে আপন আর কেউ নেই জীবনে।