• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

সূচনা: প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবীর শিক্ষা, সভ্যতা, সংস্কৃতি প্রভৃতি এগিয়ে চলেছে। এর জন্য যুগে যুগে অনেক মহান ব্যক্তি অবদান রেখে গেছেন। জাতিসত্তা বিকাশে এই মহান ব্যক্তিদের অবদান অসীম। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব ইতিহাসের সেই মহান ব্যক্তিদেরই একজন; যিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন বাঙালি জাতির এক মহা দুর্যোগলগ্নে। এই মহান ব্যক্তির নেতৃত্ব লাভ করে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় উন্মাতাল বাঙালি জাতি অংশ নেয় গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে- অর্জন করে বহু প্রত্যাশিত স্বাধীনতা।

জন্ম ও বংশ পরিচয়: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও মায়ের নাম সায়েরা খাতুন। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়। বাবা-মা ডাকতেন 'খোকা' বলে। খোকার শৈশবকাল কাটে টুঙ্গিপাড়ার শান্ত স্নিগ্ধ পল্লির আকর্ষণীয় পরিবেশে।

শিক্ষাজীবন: সাত বছর বয়সে টুঙ্গিপাড়ার গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষাজীবন শুরু হয়। নয় বছর বয়সে গোপালগঞ্জ পাবলিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। পরে তিনি স্থানীয় মিশনারী বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১২ বছর বয়সে চোখের কঠিন অসুখে আক্রান্ত হন। ফলে চার বছর শিক্ষাজীবন ব্যাহত হয়। তিনি গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল থেকে ১৯৪২ সালে এন্ট্রান্স (এস.এস.সি.) পাস করেন। তারপর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হন এবং বেকার হোস্টেলে থাকেন। ইসলামিয়া কলেজ থেকে ১৯৪৪ সালে আইএ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৭ সালে বি. এ. পাস করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তাঁর আইন পড়া আর হয়নি।

বিবাহ: ১৮ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেগম ফজিলাতুন্নেসার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা; তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল।

রাজনৈতিক জীবন: ১৯৩৯ সালে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল পরিদর্শনে এলে শেখ মুজিবুর রহমান স্কুলের ছাদের পানি পড়া রোধ এবং ছাত্রাবাসের দাবি তাঁদের সামনে প্রকাশ করেন। ১৯৪০ সালে বঙ্গবন্ধু নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন এবং এক বছরের মধ্যে বেঙ্গল মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ১৯৪৩ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৪৮ সালে তিনি মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। এ বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘট ডাকার কারণে তাঁকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছাত্রসমাজ তীব্র প্রতিবাদের ঝড় তোলে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের টিকিটে গোপালগঞ্জ আসনে নির্বাচিত হন এবং একই সালে প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রী নিযুক্ত হন।

১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান সামরিক আইন জারি করে। ফলে পূর্ব বাংলায় রাজনৈতিক অসন্তোষ বেড়ে চলে। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ছয়দফা কর্মসূচি পেশ করেন। ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি আগরতলা মামলার মাধ্যমে পাকিস্তানি সরকার শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে বিচারের নামে প্রহসন করতে থাকে। ১৯৬৯ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ আগরতলা মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করে। সারা বাংলায় ছাত্র-জনতার তীব্র গণঅভ্যুত্থানের কারণে সরকার তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় এবং সে বছরই লক্ষ জনতার উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ শেখ মুজিবুর রহমানকে "বঙ্গবন্ধু" উপাধিতে ভূষিত করে।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলে শাসকগোষ্ঠী আবার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ এক ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন- 'এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম'। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাঙালি জাতির ওপরে পাকিস্তানি সৈন্যরা সশস্ত্র আক্রমণ চালায় এবং গণহত্যা শুরু করে। তারা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পূর্বে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ওয়্যারলেসযোগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধ চলে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগরে বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। যুদ্ধ চলাকালীন 'বঙ্গবন্ধু' পাকিস্তানের কারাগারে ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যুদ্ধে পরাজিত হয় এবং নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে। পাকিস্তান সরকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। তিনি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলার মাটিতে পা রাখেন। ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি হন।

সপরিবারে নিহত: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একাত্তরের পরাজিত শক্তিসহ দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে সামরিক বাহিনীর কতিপয় কুচক্রী ও ক্ষমতালোভী সদস্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের ঐতিহাসিক বাড়িতে হামলা চালিয়ে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ঘটায়। সেদিন জননেত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়া নিকটাত্মীয়স্বজনসহ সপরিবারে শহিদ হন তিনি।

উপসংহার: সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই 'মহান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে প্রখ্যাত সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায়ের যথার্থ উচ্চারণ-

"যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী যমুনা বহমান
ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।"