• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

জাতি গঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা

ভূমিকা: জাতীয় ও সামাজিক জীবনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের অগণিত জনসাধারণের মধ্যে ছাত্রসমাজ চিন্তাচেতনা এবং শিক্ষায় এক অগ্রগামী বাহিনী, জাগ্রত সৈনিক, ভবিষ্যতের উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা। দেশ-বিদেশের ইতিহাস, অর্থনীতি, রাজনীতি, সাহিত্য সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষালাভ যেমন প্রয়োজন, তেমনি দেশ ও জাতির অবস্থা সচেতনভাবে উপলব্ধি করাও তাদের কর্তব্য।

শুধু অধ্যয়নই তপস্যা নয়: ছাত্রদের কাছে অধ্যয়নই তপস্যা, একথা ঠিক। কিন্তু অধ্যয়নের পরিবেশ যদি অনুকূল না থাকে, তাহলে তাকে অনুকূল করে তোলবার কিছুটা দায়িত্বও পরোক্ষভাবে ছাত্রদের। তাছাড়া অধ্যয়নেরও লক্ষ্য থাকে। অধ্যয়নের ফলে ছাত্ররা যেমন কোনো বিষয়কে জানতে পারে, তেমনি সে জানাকে যদি তারা জীবনে যথাযথ প্রয়োগ করতে না পারে, তাহলে সেই জানা হয়ে পড়ে অর্থহীন। ছাত্ররা এক বিরাট জনগোষ্ঠীর সার্থক প্রতিনিধি। তাই অধ্যয়ন ছাত্রদের লক্ষ্য হলেও। সঙ্গে সঙ্গে দেশের ও সমাজের সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কেও তাদের সচেতন থাকতে হবে।

পরাধীন বাংলাদেশে ছাত্রদের ভূমিকা: ব্রিটিশের পর পাকিস্তানি শাসনামলে পরাধীনতার দুঃসহ জ্বালা প্রায় চব্বিশ বছর ধরে বাংলাদেশের জনগণ মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছে। স্বাধীনতার ইতিহাস ত্রিশ লাখ মানুষের ত্যাগে, সেবায়, আত্মবলিদানে উজ্জ্বল। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অসংখ্য ছাত্র সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিল। শুধু ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামেই নয়, ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর মূলত ১৯৪৮ সাল থেকেই শুরু হয়েছিল ভাষা আন্দোলন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে ছাত্রদের রক্ত দিতে হয়েছে, জীবন দিতে হয়েছে। জীবন দিতে হয়েছে ১৯৬৯ সালে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ছাত্রদের ভূমিকা ছিল সাহসিকতাপূর্ণ। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস অসংখ্য ছাত্রের আত্মবলিদানে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। যুদ্ধপরবর্তী দেশ গঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা অপরিসীম। ছাত্রসমাজকে উপলব্ধি করতে হবে যে, তারাই এদেশের ভবিষ্যৎ পরিচালক। দেশের ভবিষ্যৎ উন্নতি এবং অবনতি অনেকাংশে তাদের শিক্ষা ও ক্রিয়াকলাপের ওপর নির্ভরশীল। তারা যদি সচেতন নাগরিক হিসেবে নিজেদের উপযুক্ত করে তুলতে পারে, তাহলে তারা দেশের নানা অন্যায়, অবিচার প্রতিরোধ করতে পারবে। দেশের ও সমাজের প্রতি তাদের গভীর মমত্ববোধ অনেক সমস্যাকে দূর করতে পারবে। সেজন্য ছাত্রসমাজের প্রথম প্রয়োজন হলো দেশকে ভালোবাসা।

ছাত্রসমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য: ছাত্রসমাজকে সচেতন নাগরিক হিসেবে, আদর্শপরায়ণ মানুষ হিসেবে নিজ নিজ চরিত্র গঠন করতে হলে তাদের সামনে যে বহু লোভ এবং বিকৃতির প্রলোভন আসে তা জয় করতে হবে। তাদের দেশ-বিদেশের সমাজ, রাজনীতি, বিজ্ঞান চেতনার সঙ্গে পরিচিত হতে হবে। কারণ শিক্ষিত এবং সচেতন মানুষই পারে সঠিক নেতৃত্ব দিতে; ভবিষ্যৎ পথের পথনির্দেশ করতে। ছাত্রসমাজকে সেজন্য দেশের সর্বাঙ্গীণ, অবস্থা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। স্বদেশকে নিজের মায়ের মতো ভালোবাসতে হবে।

নিরক্ষরতা দূরীকরণ: নিরক্ষরতা একটি অভিশাপ। এ অভিশাপ থেকে জাতিকে মুক্ত করার ক্ষেত্রে ছাত্রসমাজ অবদান রাখতে পারে। বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৩৪ জন লোক নিরক্ষর। ছাত্ররা উদ্যোগী হলে এই নিরক্ষরতা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে অনেক বড়ো অবদান রাখতে পারে। দীর্ঘকালীন ছুটির সময় তারা নিরক্ষর লোকদেরকে অক্ষরজ্ঞান দিতে পারে। প্রতিটি ছাত্র যদি বছরে দুজন লোককে অক্ষরজ্ঞান দিতে পারে, তবে হিসাব অনুসারে ১০ বছরের মধ্যে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর হয়ে যাবে। নিরক্ষরতা দূর হলেই সমাজ এবং দেশের উন্নয়ন গতিশীল হবে।

ঐক্য ও নীতি স্থাপন ছাত্রসমাজের মধ্যে কোনোরকম জাতিগত কিংবা সম্প্রদায়গত অনৈক্য বা সাম্প্রদায়িক অশুভমনোভাব থাকা উচিত নয়। তাদেরকে সকল প্রকার সংকীর্ণতা পরিহার করে শিক্ষার পরিবেশ এবং জাতীয় আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

উপসংহার: দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হলে ছাত্রসমাজকে সর্বপ্রকার লোভ-লালসা ও প্রলোভন থেকে দূরে থাকতে হবে। বিলাসী জীবন ত্যাগ করে সত্যিকার আদর্শবান মানুষের পথ অনুসরণ করতে হবে। জ্ঞান অর্জনের সাথে সাথে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে ছাত্রসমাজকে এগিয়ে যেতে হবে দেশ ও জাতির কল্যাণে।