- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা
ভূমিকা: পাঠাগার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতের সেতুবন্ধন রচনার অনন্য মাধ্যম। মানুষের চিন্তা-ভাবনা, বাস্তবতা ও কল্পনা বইয়ের মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সঞ্চারিত হয়। আর যাবতীয় বৈচিত্র্যপূর্ণ বই সংরক্ষণ করা হয় পাঠাগারে। তাই পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
পাঠাগার কী: পাঠাগার বলতে আমরা গ্রন্থাগারকেই বুঝি। গ্রন্থাগারের শাব্দিক অর্থ হলো গ্রন্থ রাখার স্থান। আর পাঠাগার হলো পাঠ করার স্থান। পাঠের মাধ্যম হলো গ্রন্থ বা বই। কাজেই বই পাঠ করার স্থানই হলো পাঠাগার। ইংরেজি 'Library' এর, প্রতিশব্দ হিসেবে 'পাঠাগার' শব্দটি ব্যবহৃত হয়। বস্তুত পাঠাগার জ্ঞানসাধনা ও মননশীলতার পরিপুষ্টির কেন্দ্র।
পাঠাগারের বিকাশ: মানুষের চিন্তা-চেতনা-মননের বিকাশ এক দিনে হয়নি। তেমনি সেসব গুহার দেয়ালে, পাথরের গায়ে, ভূর্জপত্রে, তালপাতায়, স্বর্ণ-রৌপ্য বা তামার পাতে লিখে রাখার প্রয়াসও এক দিনে হয়নি। হাজার হাজার বছরের ব্যবধানে সেগুলো নষ্ট হওয়ার বা হারিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। পরবর্তীতে হাতে তৈরি কাগজে লেখা বই পাঠ করে শোনানো হতো। তার অনুলিপি তৈরি করাও ছিল কঠিন।
এসব কারণেই 'পাঠাগার' গড়ে ওঠে, যাতে বইগুলো নষ্ট না হয়। মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের পর বই লেখা ও মুদ্রণের কাজ সহজ হয়ে যায়। এসব মুদ্রিত বই সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের জন্য পাঠাগার গড়ে ওঠে। এসব কাজে এখন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ হচ্ছে। ইদানীং এ ক্ষেত্রে সংযোজিত হয়েছে ডিজিটাল তথ্য প্রযুক্তি। উনবিংশ শতাব্দী থেকেই এ ক্ষেত্রে বিপ্লবের শুরু। ব্যক্তিগত বা পারিবারিক পাঠাগার গড়ে তোলার প্রবণতা এ সময় থেকেই লক্ষ করা যায়। পরবর্তী সময়ে তা স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গড়ে উঠতে থাকে।
পাঠাগারের শ্রেণিবিভাগ: পাঠাগার হলো বইয়ের সংগ্রহশালা। আর এসব বই সংগ্রহ করে ব্যক্তি বা পরিবার, সাধারণ মানুষ অথবা রাষ্ট্র। ব্যক্তিগত বা পারিবারিক পাঠাগার সীমিত পরিসরে থাকে। কেননা তাতে ব্যক্তি বা পরিবারের সদস্যদের পছন্দ বা রুচির প্রতিফলন দেখা যায়। আবার সাধারণ পাঠাগারে সাধারণ মানুষের বিভিন্ন রুচি বা পছন্দের প্রতিফলন ঘটে। কারণ তাতে গ্রামের বা এলাকার মানুষের দান বা প্রভাব থাকে।
রাষ্ট্রীয় পাঠাগার রাষ্ট্রের সব মানুষের সম্পদ। কাজেই এর পরিসর অনেক বড়। প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রকাশিত বহু বিচিত্র পুঁথি ও বইপত্রের সংগ্রহ থাকে রাষ্ট্রীয় পাঠাগারে। আজকাল ভ্রাম্যমাণ পাঠাগারের প্রচলন হয়েছে এবং গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত এর বিস্তৃতি ঘটেছে। এর ফলে পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়ছে এবং জ্ঞান অর্জনের প্রতি মানুষের মনোযোগ আকর্ষিত হচ্ছে।
পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা: পাঠাগার জ্ঞানপিপাসু মানুষের অন্যতম সহযোগী। এখানে চিন্তাশীলদের জন্য রয়েছে অধিকতর চিন্তার খোরাক, জিজ্ঞাসুদের জন্য দুরূহ জিজ্ঞাসার উত্তর, আনন্দ উপভোগ করার জন্য রয়েছে নানা কল্পকাহিনি, রহস্যগ্রন্থ ও হাসির গ্রন্থ। আবার শ্রেণিকক্ষের শিক্ষা সম্পূর্ণ করার জন্য পাঠাগারে রয়েছ সহায়ক বইপত্র। উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার কাজে পাঠাগারই প্রধান সহায়ক।
পাঠাগারের বই-পুস্তক ও পত্র-পত্রিকা স্বশিক্ষিত মানুষ তৈরির সহায়ক। বিশ্বের কবি-সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও ঐতিহাসিকের উদ্ভাবন, আবিষ্কার, চিন্তাধারা ও ভাবলোকের সাথে পাঠাগার আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়। পাঠাগারে বই পড়ার মাধ্যমে মানুষ অর্জন করতে পারে মৌলিক চিন্তা-ভাবনা ও সৃজনশীলতা, যা তাকে এনে দিতে পারে অকল্পনীয় প্রশংসা ও মর্যাদা। কাজেই পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
উপসংহার: সম্প্রতি ইন্টারনেট প্রযুক্তি নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার সুযোগ করে দিলেও পাঠাগারের গুরুত্ব তাতে একটুও হ্রাস পায়নি। বরং জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতি ও পরিধি বৃদ্ধির সাথে সাথে পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তাও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশে প্রয়োজনের তুলনায় পাঠাগারের সংখ্যা নিতান্তই কম। সমৃদ্ধ পাঠাগারের সংখ্যা আরও কম। এ অবস্থার অবসান ঘটানো এখন সময়ের দাবি। এজন্য রাষ্ট্রের পাশাপাশি শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের এগিয়ে আসা দরকার।