• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

পিতামাতার প্রতি কর্তব্য

ভূমিকা: পিতামাতা আমাদের জন্মদাতা। পিতামাতার সমতুল্য আপনজন পৃথিবীতে আর নেই। সংস্কৃততে একটি কথা আছে, "জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী।" অর্থাৎ, জননী ও জন্মভূমি স্বর্গের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। মহানবি হযরত মুহম্মদ (স) বলেছেন, "মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের' বেহেস্ত।" সন্তান জন্মের পর থেকেই পিতামাতা নিজেদের সুখের কথা ভুলে গিয়ে সন্তানের সুখের কথা ভাবেন, সন্তানকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন। তাই পিতামাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য অনেক।

পিতামাতার অবদান: পিতামাতার জন্যেই সন্তান এই সুন্দর পৃথিবীর রূপ-রস, আরাম আয়েশ, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছে। শিশুসন্তানের প্রতি পিতামাতার অবদান অপরিসীম ও বর্ণনাতীত। মা অতিকষ্টে দশ মাস দশ দিন সন্তানকে তাঁর গর্ভে ধারণ করেন। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই মা অসুস্থ ও দুর্বল শরীর নিয়ে সন্তানের সেবাযত্ন করেন। মাতৃস্তন্য পান করে শিশু বেঁচে থাকে।

পিতামাতা সন্তানদের বড় করে তোলেন এবং লেখাপড়া শেখান। সন্তানের আহার যোগাড় করেন। সন্তান যাতে সুশিক্ষা লাভ করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সেজন্যে পিতামাতার চেষ্টার অন্ত থাকে না। প্রত্যেক পিতামাতাই তাঁদের সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলতে চান। পিতা নিজে কষ্ট স্বীকার করেও সন্তানের জন্য ধন সঞ্চয় করে যেতে চেষ্টা করেন। তাঁদের এই নিঃস্বার্থ ত্যাগের তুলনা নেই।

পিতামাতার প্রতি কর্তব্য: মানুষের মতো মানুষ হয়ে পিতামাতার মুখ উজ্জ্বল করা সন্তানের অন্যতম কর্তব্য। সন্তান যদি সুশিক্ষিত হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে সমর্থ হয় ও সুনাম অর্জন করতে পারে, তবে পিতামাতা সবচেয়ে বেশি সন্তুষ্ট হন এবং গৌরববোধ করেন। পিতামাতার সন্তান হিসেবে প্রত্যেক ছেলেমেয়ের মনে রাখা উচিত, যেহেতু বাবা মা সবসময় সুখে দুঃখে, বিপদে আপদে সব অবস্থায় তাদের কল্যাণ কামনা করেন, সেহেতু তাদের উচিত পিতামাতার উপদেশ নির্দেশ মেনে চলা।

সন্তান যদি চরিত্রবান হয়, জ্ঞানীগুণী বলে সমাজের প্রশংসা পায়, তাহলেই পিতামাতার ঋণ কিছুটা পরিশোধ হতে পারে। তাই পিতামাতার মুখ উজ্জ্বল করা ও তাঁদের গৌরব বৃদ্ধি, করার জন্য প্রত্যেক সন্তানেরই তৎপর হওয়া উচিত। কিন্তু সন্তান যদি পিতামাতার অবাধ্য হয় এবং উচ্ছৃঙ্খলতার স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয় তবে তার জীবনে সাফল্য অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। সন্তান যদি লেখাপড়ায় ফাঁকি দেয় এবং মানুষ না হয়ে অমানুষ হয়, তবে তারা বড় হয়ে অর্থাভাবে কষ্ট ভোগ করে। তখনই তারা পিতামাতার উপদেশের তাৎপর্য অনুধাবন করতে পারে। কিন্তু তখন শুধু অনুতাপে দগ্ধ হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।

পিতামাতার সেবা শুশ্রুষা করা সন্তানের প্রধান কর্তব্য। তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁদের সেবাযত্নের বিন্দুমাত্র ত্রুটি যাতে না ঘটে সেদিকে বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে। বৃদ্ধ বয়সে পিতামাতা যাতে সুখে শান্তিতে জীবনযাপন করতে পারেন সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিতে হবে এবং তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যদি কোনো সন্তান পিতামাতার প্রতি অযত্ন ও অবহেলা দেখায় তবে তার পাপের শেষ থাকবে না।

পিতামাতার প্রতি সম্মান প্রত্যেক ধর্মেই পিতামাতাকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে এবং তাঁদের সন্তুষ্টি বিধান করতে বলা হয়েছে। পবিত্র কুরআন শরিফে ভক্তি ও শ্রদ্ধার ক্ষেত্রে আল্লাহর পরেই পিতামাতার স্থান নির্দিষ্ট করা হয়েছে। আল্লাহ বলেছেন, "যে মাতাপিতাকে সন্তুষ্ট করে, সে আমাকে সন্তুষ্ট করে। হিন্দুশাস্ত্রে আছে, "পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম।" জননী আর জন্মভূমিকে স্বর্গের চেয়েও পবিত্র ও পূজনীয় বলে বিবেচনা করে সংস্কৃতে বলা হয়েছে, "জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী।" হজরত আবদুল কাদের জিলানী (র), হজরত বায়েজীদ বোস্তামী, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখ পিতামাতার বাধ্য ও অনুগত ছিলেন। এজন্যে তাঁরা আজ স্মরণীয় হয়ে আছেন। সুতরাং মাতাপিতার মনে কষ্ট হয় এমন কাজ কখনো করা উচিত নয়। নানা ধর্মে ও নানা মতে ব্যক্ত পিতামাতার এই সম্মান রক্ষার দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রত্যেক মানব সন্তানকে সচেতন হওয়া দরকার।

উপসংহার: পিতামাতা সন্তানের পরম হিতৈষী। এমন আপনজন দুনিয়াতে আর কেউ নেই। অল্প বয়সে যে ব্যক্তি পিতামাতাকে হারায় সে এ জগতে সত্যি ভাগ্যহীন। পিতামাতার স্নেহ, মায়ামমতা বেহেশতের শ্রেষ্ঠ দান। তা যে ব্যক্তি বেশিদিন ভোগ করতে পারে, তার জীবন বেশি ধন্য হয়। পিতামাতার প্রতি কর্তব্য পালনের মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভকরে পৃথিবীতে স্মরণীয়, বরণীয় এবং মর্যাদা লাভ করা যায়।