- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
আধুনিক শিক্ষায় ইন্টারনেট
ভূমিকা: বর্তমান যুগকে কম্পিউটারের যুগ বলা হলেও এ যুগে এর বিস্তৃতি আরও ব্যাপক। কম্পিউটারের ওপর ভিত্তি করে এ যুগে বিজ্ঞান উন্নতির চরম শিখরে পৌছে গিয়েছে। এমনকি তা জীবন ও বিজ্ঞানের সর্বক্ষেত্রকেই স্পর্শ করেছে। কম্পিউটার বিজ্ঞান থেকে আগত ইন্টারনেট বর্তমান বিজ্ঞান সভ্যতায় এক অভাবনীয় অবদান রেখেছে, যা বর্তমান বিশ্বে তথ্য আদান প্রদানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে দ্রুতগতির মাধ্যম।
ইন্টারনেট পরিচিতি: ইন্টারন্যাশনাল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভিসকে সংক্ষেপে ইন্টারনেট বলে অভিহিত করা হয়। ইন্টারনেটের অন্তর্ভুক্ত কম্পিউটারসমূহকে অন্যান্য নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারের সাথে যুক্ত করে তাকে পরিচালনার নামই ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে অতি দ্রুত পৌঁছে যায় তথ্য ও ছবি। ইন্টারনেট হলো বিশ্বব্যাপী এক বিশাল নেটওয়ার্কিং সিস্টেম। বিশ্বের লক্ষ লক্ষ স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানসহ কোটি কোটি মানুষের ব্যক্তিগত কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে ইন্টারনেট।
ইন্টারনেটের প্রচার: ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা প্রধানত দুভাগে গ্রাহক হতে পারেন। এর প্রথমটি হলো অনলাইন ইন্টারনেট। এর নিয়ম হলো টেলিফোনের মাধ্যমে কম্পিউটারে ইন্টারনেটের যেকোনো সার্ভিস প্রভাইডারের সাথে যুক্ত করা। এটি অনলাইন ইন্টারনেট নামে পরিচিত। এতে ব্যবহারকারীরা যেকোনো সময় যেকোনো প্রভাইডারের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারে। এ ছাড়া ও PACCES পদ্ধতির সাহায্যেও অনলাইন ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া যায়। কিন্তু এ পদ্ধতিটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ফলে সাধারণ গ্রাহক এর সঙ্গে সংযোগের আগ্রহ পোষণ করেন না।
ইন্টারনেট তৈরির ইতিবৃত্ত: ইন্টারনেটের উদ্ভাবন হয়েছিল সামরিক প্রয়োজনেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার স্নায়ুযুদ্ধের যুগে সমর বিশারদরা পারমাণবিক বোমায় তাদের সমস্ত কিছুই ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করতেন। এজন্য টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে ধ্বংসের কবল থেকে আত্মরক্ষার জন্য ইন্টারনেট উদ্ভাবন করা হয় এবং মার্কিন সামরিক ক্ষেত্রে এর বহুল ব্যবহার শুরু করে। ১৯৬৯ সালে আমেরিকা সর্বপ্রথম এর ব্যবহার শুরু করে। এ প্রযুক্তিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গবেষকদের ওপর দায়িত্ব দেয়া হলে তারা তাতে অভাবনীয় সাফল্যের পরিচয় দিতে সক্ষম হন। ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন সর্বসাধারণের জন্য 'নেম্ফেনেট' নামক এক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করে। তিন বছরের মধ্যে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে এই ব্যবস্থা। কিন্তু এতে এক প্রকারের অরাজকতা সৃষ্টি হলে তা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এর ফলে ১৯৯০-এর দশকে একটি কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়। ১৯৯৩ সালে ইন্টারনেট বাণিজ্যিকভাবে ব্যবসায়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। বর্তমানে সারাবিশ্বে ৩ কোটিরও বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে।
ইন্টারনেটের সুবিধাদি: ইন্টারনেট যেমন বাণিজ্যিক ব্যবসায়ের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে তেমনি এর বহুবিধ ব্যবহারও সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই যেমন পৃথিবীর খবরাখবর নিমেষেই পাওয়া যায় তেমনি তাঁর মাধ্যমে নানা তথ্যও দ্রুত সম্প্রচার করা যায়। আগে যে সমস্ত তথ্য জানার বা পরামর্শের জন্য বিদেশে যেতে হতো এখন তার জন্য আর বিদেশে না গেলেও চলে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান এ যুগে খুবই সহজ হয়ে উঠেছে। ইন্টারনেটের সুবিধাবলিকে ৬টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা ১. ওয়ার্ল্ড ওয়াইড লাইন, ২. ই-মেইল, ৩. নিউজ গ্রুপ, ৪. টেলনেট, ৫. গোফার ও ৬. ফাইল ট্রান্সফার।
বাংলাদেশে ইন্টারনেট: বাংলাদেশে কম্পিউটারের ব্যবহার ষাটের দশকে শুরু হলেও এদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু হয় ১৯৯৩ সালে। ১৯৯৬ সালের মাঝামাঝি থেকে এর ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়। বর্তমানে এর দ্রুত প্রসার ঘটছে।
ইন্টারনেটের অসুবিধা: অনেক সুবিধা থাকলেও, ইন্টারনেটে অনেক অসুবিধাও আছে। যেমন- কিছু অসাধু ব্যক্তি পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়। এর ফলে দুনিয়া জুড়ে লক্ষ লক্ষ কম্পিউটার ও গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাছাড়া ইন্টারনেটের মাধ্যমে অশ্লীল ছবি ও আপত্তিকর কার্যকলাপও ছড়িয়ে দেয়া হয়, যা অত্যন্ত ক্ষতিকর।
ইন্টারনেটে সংযুক্তিকরণ: ইন্টারনেটে সংযুক্তির জন্য প্রয়োজন হয় একটি কম্পিউটার একটি মডেল ও টেলিফোন লাইন। তারপর ইন্টারনেট সংযোগ দেয় এমন সংস্থাতে মাসিক খরচ প্রদানের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ গ্রহণ করা যায়।
উপসংহার: বিংশ শতাব্দীর বিস্ময়কর আবিষ্কারগুলোর অন্যতম ও সর্বশেষ প্রযুক্তি হলো ইন্টারনেট। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ পৌছে গিয়েছে বিজ্ঞান প্রযুক্তির এক বিস্ময়কর জগতে।