- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার
ভূমিকা: প্রাণের বিকাশের সঙ্গে পরিবেশের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। জীবনকে উন্নত করার উদ্দেশ্যে বিজ্ঞান যখন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে শুরু করল, অমনি পরিবেশ আর আগের মতো রইল না। প্রকৃতির সঙ্গে তার যে সাম্যাবস্থা দীর্ঘকাল ধরে বজায় ছিল, তা বিঘ্নিত হতে শুরু করল। দূষিত হতে শুরু করল পরিবেশ। আজ এই পরিবেশ দূষণে সমগ্র জীবজগতের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে চলেছে।
পরিবেশ দূষণের স্বরূপ পরিবেশ থেকে আমরা জীবনধারণের নানা উপকরণ সংগ্রহ করি। কিন্তু মানবজীবনের বিপুল চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে আমরা যখন 'বন কেটে বসত তৈরি করি, কারখানা গড়ি, সড়ক বানাই, রেল লাইন স্থাপন করি, অমনি পরিবেশ বদলে যায়, প্রকৃতির সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হতে থাকে। পরিবেশ দূষিত হয় প্রধানত বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, শব্দদূষণ ও পারমাণবিক দূষণের মাধ্যমে।
বায়ুদূষণ: আগুন বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের অনুপাত হ্রাস করে জীবনের অনুকূল পরিবেশের ভারসাম্যই শুধু নষ্ট করেনি, ধোঁয়া এবং ভস্মকণায় তাকে করে তুলল কলুষিত। অরণ্য কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে প্রাণপ্রদায়ী অক্সিজেন ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু মানুষ নগর জনপদ গড়ে তোলার প্রয়োজনে অক্সিজেন পরিশোধনের রূপকার অরণ্যকে সংকুচিত করে বায়ু দূষণ করে তুলল।
যানবাহনও বায়ু তথা পরিবেশ নানাভাবে দূষিত করে। গাড়ি যখন চলে তখন কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের সঙ্গে আরও কতকগুলো গ্যাস নির্গত হয়ে থাকে। এসব গ্যাস বায়ুকে দূষিত করে। কলকারখানার দূষিত পদার্থ কালো চুল্লি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে বাতাসকে বিষাক্ত করে তোলে।
পানিদূষণ: বাংলাদেশের বিভিন্ন নদীর তীরে অজস্র কলকারখানা গড়ে উঠেছে। শিল্প উৎপাদনে নিয়োজিত বিভিন্ন ধরনের কারখানায় নানা রকম রাসায়নিক ও বর্জ্য বস্তু নিয়মিতভাবে নদীগর্ভে নিক্ষিপ্ত হয়। তার উপরে গৃহস্থের উচ্ছিষ্ট এবং পৌর কর্পোরেশনের আবর্জনা সেই দূষণক্রিয়াকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। লঞ্চ, জাহাজ থেকে নির্গত তেলও পানিদূষণের একটি অন্যতম কারণ। শুধু নদীর পানি নয়, গ্রামের পুকুর, খাল-বিলের পানিও নানা কারণে দূষিত হয়।
শব্দদূষণ: শহরে শব্দদূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। রাস্তায় বাস, ট্রাক, ট্যাক্সির হর্ন, কলকারখানার আওয়াজ, বোমাবাজি, মাইকের চিৎকার, মিছিলের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি এসবই স্বাভাবিক পরিবেশকে নষ্ট করে আমাদের পারিপার্শ্বিক শান্তি বিঘ্নিত করছে। দীর্ঘকাল এ ধরনের দূষিত শব্দের পরিমন্ডলে থাকলে আমাদের শ্রবণেন্দ্রিয়ের অবনতি ঘটে, মানসিক শান্তি বিঘ্নিত হয়, স্নায়ুরোগের লক্ষণ দেখা দেয়। বর্তমান সময়ে গ্রামেও মাইকের উৎপাত বেড়েছে।
পারমাণবিক বোমা ও পরিবেশ দূষণ বিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়েছে পারমাণবিক যুগ। কাঠ, কয়লা ও তেল দহনের ফলে বায়ুমণ্ডল যে পরিমাণে দূষিত হয়, পারমাণবিক দহনে দূষণের পরিমাণ তার চেয়ে কয়েক লাখ গুণ বেশি। তাছাড়া প্রচণ্ড শক্তিশালী রকেটের সাহায্যে মহাকাশ অভিযানেও উপগ্রহ উৎক্ষেপণে যে পরিমাণ বিষাক্ত গ্যাস পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে নিক্ষেপ করা হয়, তাতেও আবহাওয়া দূষিত করে চলেছে পৃথিবীর বৃহৎ রাষ্ট্রগুলো।
মৃত্তিকা দূষণ: ভালো ফসল ফলানোর জন্য এবং কীটপতঙ্গের হাত থেকে ফসলকে রক্ষার জন্য কৃষকেরা অপরিকল্পিতভাবে জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছে। এতে মৃত্তিকা দূষণের সাথে সাথে জীবজগতে বিপন্ন অবস্থা দেখা দিয়েছে।
প্রতিকারের উপায়: পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধের জন্য জনবসতি ও সভ্যতার সম্প্রসারণের প্রয়োজনে নির্বিচারে অরণ্য ধ্বংস বন্ধ করতে হবে। যানবাহন থেকে নির্গত বিষাক্ত পদার্থযুক্ত কালো ধোঁয়া যাতে বন্ধ করা যায়, তার জন্য পুরনো ইঞ্জিনচালিত গাড়ির চলাচল নিষিদ্ধ হওয়া দরকার। কলকারখানা থেকে দূষিত পদার্থ নির্বিচারে নদীতে না ফেলাই সমীচীন কিংবা এগুলো ফেলার আগে প্রয়োজনমতো শোধন করে নেওয়া উচিত। সে সঙ্গে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে রকেট নিক্ষেপণ ও পারমাণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ নিষিদ্ধ হওয়া উচিৎ। ইলেকট্রিক বা হাইড্রোলিক হর্ন, মাইকের যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অপরিকল্পিতভাবে জমিতে যে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, সে সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করতে হবে। তাহলেই পরিবেশ দূষণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা যাবে।
উপসংহার: একদিকে আধুনিক জীবনযাত্রার প্রয়োজন, অন্যদিকে পরিবেশ দূষণ রোধ উভয় দিকে লক্ষ রেখে চলা সহজ কথা নয়। তবু মানবজাতি সচেতন হলে এবং সমাজব্যবস্থা সহায়তা করলে, পরিবেশ দূষণের অবসান ঘটানো না গেলেও তাকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, হবে, এমন আশা করা অসংগত নয়। আজ আর পরিবেশ দূষণ নয়, চাই তার বিশুদ্ধকরণ।