- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
নৌকা ভ্রমণ
ভূমিকা: গ্রীষ্মের ছুটিতে আমরা কয়েক বন্ধু ঠিক করলাম ভ্রমণ করে সময় কাটাব। যদিও এ সময়ে দেশের উপকূলবর্তী এলাকায় দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আমরা কয়েকটা নৌকা ভাড়া করলাম। ত্রাণসামগ্রী নিয়ে দুজন তিনজন করে একেক নৌকায় উঠলাম। আমরা তিন বন্ধু মিলে একটি নৌকায় চড়েছি। আমরা আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম ত্রাণসামগ্রী বিতরণ শেষ হলে নৌকায় চড়ে আমরা সেই বৌদ্ধ মন্দির দেখতে যাব। আমাদের নৌকায় রতন 'সিদ্দিকী স্যারও ছিলেন। আমরা আমাদের পরিকল্পনা স্যারকে জানালাম।
নৌকা ভ্রমণ: মাঝারি আকারের একটা পানসী নৌকা ভাড়া করে আমরা দশজন রওয়ানা হই। দুজন মাঝি নৌকা ছেড়ে দিয়ে বৈঠা বাইতে শুরু করে। তখন দুপুর পেরিয়ে বিকেল। পানিতে সূর্যের কিরণ আমাদের চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। আমরা সবাই মিলে নৌকা ভ্রমণের আনন্দ উপভোগ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের গল্প কৌতুক বলছি ও শুনছি। সুন্দর সুন্দর গান ও কৌতুকে মনটা কখন হালকা হয়ে গেছে টের পাই নি। স্যারও আমাদের সাথে যোগ দিলেন এবং দুটো সুন্দর কৌতুক শোনালেন। অতঃপর আমরা মাঝিদের অনুরোধ করি গান শোনাতে। মাঝিরা গান ধরলো-
"মন মাঝি তোর বৈঠা নেরে আমি আর বাইতে পারলাম না।"
আমরা সবাই কোরাস কণ্ঠে গান গাইতে থাকি। নদীর কানায় কানায় পূর্ণ পানিতে ঢেউ হচ্ছে। প্রতিকূল স্রোত ঠেলে আমাদের নৌকা এগিয়ে চলেছে। মাঝে মধ্যে দু একটা যাত্রীবাহী লঞ্চ ভোঁ ভোঁ শব্দে যান্ত্রিক আওয়াজ তুলে দ্রুত ছুটে যাচ্ছে গন্তব্যে।
নদীতে ভাসমান লাশ: আমাদের নৌকা ধীর গতিতে চলছে স্রোতের বিপরীত দিকে। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। তীর দেখা যায় না। মাঝে মাঝে দুচারটা ঘর পানির উপর উঁকি দিতে দেখা যায় অনেক দূরে। বুঝা যায় এখানে ঘর বসতি ছিল, ডুবে গেছে বন্যার পানিতে। একটা উঁচু গাছ দেখা গেল পানিতে একাকী দাঁড়িয়ে আছে, এ যেন কালের সাক্ষী। দূরে কী যেন ভাসছে। অনেকক্ষণ পর কাছে এলে দেখা গেল একটা মৃত পশু পানিতে ভাসছে। কিছুক্ষণ পর একটা মানব শিশুর ফুলে ওঠা মৃতদেহ পানিতে ভাসতে দেখলাম। কি হৃদয়বিদারক সেই দৃশ্য! আমরা সবাই শিহরিত হলাম। সন্ধ্যার আগেই আমরা পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে। সবাই মিলে রওয়ানা হলাম বৌদ্ধ মন্দির দেখতে। মন্দিরের খুব কাছাকাছি এসে পড়েছে বন্যার পানি। এ ঐতিহ্লাসিক মন্দিরটি রক্ষা করতে হলে খুব শীঘ্রই জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম ঢাকা পৌঁছেই এ বিষয়ে একটি লেখা পত্রিকায় পাঠিয়ে দেব কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য।
বৌদ্ধ মন্দির দেখা: নিজের চোখে না দেখলে এমন একটি ঐতিহাসিক মন্দির সম্পর্কে আমার কিছুই জানা হত না। মন্দিরে একটি বৌদ্ধ মূর্তি আছে যা স্বর্ণের তৈরি। সিন্দুকের মত করে লোহার জালির মধ্যে মূর্তিটি রাখা হয়েছে। এত বড় একটা মূর্তি তাও আবার স্বর্ণের তৈরি। চমৎকার কারুকাজ করা। চকচক করছে মূর্তিটি। এছাড়াও আরও কিছু জিনিস দেখলাম খুবই উপভোগ্য।
বিদায়ের পালা: পড়ন্ত বিকালে আমরা রওয়ানা হলাম বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে। নৌকা ছেড়ে মাঝি জোরে জোরে বৈঠা বাইতে লাগল। অন্তায়মান সূর্যের রক্তিম আভা নদীর স্বচ্ছ বুকে অপূর্ব দৃশ্যের সৃষ্টি করল। সোনালি রঙের ঢেউগুলো দেহমনে দোলা লাগাচ্ছে। আমরা প্রাণভরে নদীর বুকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছি। সূর্য যেন নদীর কূলেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল। দূরে মসজিদে মাগরিবের আযানের ধ্বনি শোনা গেল। আমাদের নৌকায় একটা হারিকেন জ্বালানো হলো। নদীর বুকে রাতের বেলা এ রকম শত শত আলো জ্বলছিল। আমাদের মনে পড়ল অমর কথাশিল্পী মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'পদ্মানদীর মাঝি'র কথা। যেখানে লেখক এ ধরনের আলোর বর্ণনা দিয়েছেন। ভারতের প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক গৌতম ঘোষের 'পদ্মানদীর মাঝি' ছায়াছবিতেও এ দৃশ্যটি দেখেছি। অপূর্ব সেই দৃশ্য।
হঠাৎ দুর্যোগের কবলে: আমরা প্রায় এসে পড়েছি। এমন সময় হঠাৎ আকাশের অবস্থা খারাপ হলো। মুহূর্তেই ক্ষুব্ধ হলো। প্রকৃতি। রুদ্ররূপ ধারণ করল শান্ত নদী। আমরা সবাই অস্থির হলাম। মাঝিরা আমাদের সান্ত্বনা দিল। বলল, ভয় নেই, আমরা ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পৌঁছে যাব। তারপরেও আমাদের ভয় দূর হলো না। আমরা ভয়ে চোখ বন্ধ করে রইলাম। হঠাৎ চোখ খুলেই দেখলাম আকাশ পরিষ্কার, নদীও শান্ত। আমরা পৌছে গেছি। নৌকা তীরে ভিড়ল। আমরা সবাই একে একে নেমে পড়লাম। স্যার আমাদের সবাইকে যার যার বাসায় চলে যেতে বললেন। আমরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ বাড়ির দিকে রওয়ানা হলাম।
উপসংহার: ত্রাণ বিতরণ, নৌকা ভ্রমণ ও ঐতিহাসিক বৌদ্ধ মন্দির দর্শনের স্মৃতি আমাদের মনে চির অম্লান হয়ে থাকবে। এমনিভাবে আরও ভ্রমণে অভিজ্ঞতার ঝুড়ি হবে পূর্ণ। কিছু কিছু স্মৃতি আছে যা একই সঙ্গে আনন্দ ও বেদনার। আমাদের এ ভ্রমণটিও এমনি এক স্মৃতিময়তায় ভাস্বর।