• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

বনভোজন

ভূমিকা: ছাত্রজীবনে লম্বা ছুটি পাওয়া যায় গ্রীষ্মের ছুটিতে, শীতকালীন ছুটিতে কিংবা বার্ষিক পরীক্ষা শেষে। তবে গ্রীষ্ম ও শীতকালীন ছুটিতে পরীক্ষার চিন্তা থাকে, কিন্তু বার্ষিক পরীক্ষা শেষে তা আর থাকে না। তাই আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ঠিক করে রেখেছিলাম বার্ষিক পরীক্ষা শেষেই বনভোজনের আয়োজন করব।

বনভোজনের সময় ও স্থান নির্ধারণ: বার্ষিক পরীক্ষা শেষে বন্ধুরা মিলে বসলাম বনভোজনের স্থান নির্ধারণ ও দিন ঠিক করার জন্য। সকলে মিলে আমরা ঠিক করলাম রাজশাহীর পদ্মার তীরে অর্থাৎ ভারতের গঙ্গা নদী বাংলাদেশের যে স্থান দিয়ে প্রবেশ করে পদ্মা নাম ধারণ করেছে সেই স্থানটিকে। যদিও স্থানটি রংপুর থেকে অনেক দূরে তুবও এই স্থানটির সঙ্গে আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চিড়িয়াখানা ও পথে মহাস্থানগড় দেখতে পাব তাই সকলেই এতে রাজি হলাম। সকলের সুবিধা-অসুবিধা চিন্তা করে এবং আবহাওয়ার দিকে লক্ষ রেখে দিন ঠিক করলাম ১৮ ডিসেম্বর।

বনভোজনের উদ্দেশ্যে যাত্রা: জসিম স্যার আমাদের সবাইকে অনেক সকালে নির্ধারিত স্থানে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যাত্রার আগের দিন, মুরগি কেটে একেবারে রান্নার জন্য প্রস্তুত করে নেওয়া হয়েছিল, কারণ রাস্তার দূরত্ব ছিল একটু বেশি। সকাল ৭টার মধ্যে সকলেই হাজির হলাম নির্ধারিত স্থানে। সকলের সঙ্গে অভিভাবক এসে বাসে উঠিয়ে দিলেন এবং সাবধানে থাকার নির্দেশ দিলেন। 'আমাদের বাস ছাড়ার পর জসিম স্যার ঠিক করে দিলেন আমরা কখন কোথায় থামব এবং কী করব। আমাদের বাস ছুটে চলল গন্তব্যের দিকে। বাস খুব দ্রুত ছুটে চলল। আমাদের বাসের চালক ছিল খুবই দক্ষ ও মধ্যবয়স্ক। আমরা সাথে গান শোনার ওয়াকম্যান, কেউ ভিডিও গেমস আবার কেউ দাবা নিয়ে এসেছিলাম।

রাস্তার পাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য এসময় অনেক শীত পড়ে তাই প্রথমদিকে তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছিল না বাইরের দৃশ্য। একটু, পরে যখন রোদ উঠে কুয়াশা সরে গেল তখন রাস্তার দু'ধারের অপরূপ দৃশ্য আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে দেখতে, লাগলাম। রংপুর-বগুড়া সড়কের দু'ধারে সারি সারি গাছ যেন একটির পর একটি আছে আর মিলিয়ে যাচ্ছে। রাস্তার পাশে বিস্তৃত শস্যখেত। সরিষার খেতগুলো আমাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছিল। হলুদ ফুলের উপরে শিশিরবিন্দু, খুবই চমৎকার লাগছিল দৃশ্যগুলো। এভাবে রাস্তার দু'ধারের দৃশ্য অবলোকন করতে করতে আমরা করতোয়া নদীর ধার ঘেঁষে পৌছে গেলাম মহাস্থানগড়ে। সেখানে পৌছে আমরা প্রথমে নাস্তা করলাম এবং পরে হযরত শাহ সুলতান ইব্রাহিম বলখী মাহীসওয়ার (র)-এর মাজার যেয়ারত করলাম। এরপর আবার আমাদের বাসযাত্রা আরম্ভ করল এবং নাটোর হয়ে রাজশাহীর পথ ধরল। নাটোর থেকে রাজশাহী পর্যন্ত শুধু কলার খেত আর আখের খেত দেখতে পেলাম।

গন্তব্য স্থানে পৌছে আনন্দ: আমাদের বাস ভ্রমণটা ছিল একটু বেশি। পদ্মার তীরে পৌছাতে বেলা ১২টা ৩০ বেজে গেল। বাস. ভ্রমণে সকলেই ছিলাম একটু ক্লান্ত তাই সকলেই বসে একটু জিরিয়ে নিলাম। ততক্ষণে জসিম স্যার, জামাল ভাই ও আমাদের কয়েক জন মিলে রান্নার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। এবার সকলে মিলে বের হলাম পদ্মা নদী দেখতে। সেখানে পদ্মার রূপ দেখে আমরা অবাক হলাম। পদ্মার ধীরগতির ঢেউ আর পাল তোলা নৌকা দেখতে ছবির মতো লাগল। আমরা সাহস করে কয়েকজন নৌকায় উঠলাম, এটি খুবই ভালো লাগল। এরপর সকলে মিলে গেলাম চিড়িয়াখানা দেখতে। সেখানে বানর, হাতি, উট, বিভিন্ন ধরনের পাখি দেখলাম। আমার খুবই ভালো লাগল কাঠবিড়ালিগুলোর ছোটাছুটি দেখে। অনেকেই সঙ্গে করে ক্যামেরা নিয়েছিলাম তাই সকলে মিলে ছবি উঠালাম। পদ্মার তীরে, বিভিন্ন প্রাণীর সঙ্গে আবার কেউ কেউ পদ্মার পাল তোলা নৌকাসহ মানুষের দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করলাম। এরপর আমরা কিছু স্থানীয় সংস্কৃতির জিনিসপত্র কিনে রান্নার স্থানে ফিরে এলাম।

ভোজনপর্ব: আমরা সকলেই পদ্মাতীরের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগের পর উপস্থিত হলাম রান্নার স্থানে। ততক্ষণে জামাল ভাই, জসিম স্যার ও কয়েকজন স্থানীয় ছেলে মিলে রান্নার কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছেন। সকলেই ভালো করে হাত পরিষ্কার করে বসে পড়লাম খেতে। সঙ্গে কিছু কোক, কয়েকটি মাদুর আর আসার সময় নিয়ে আসা হয়েছিল নাটোরের কাঁচাগোল্লা। জামাল ভাই ও জসিম স্যার মিলে খুবই ভালো রান্না করেছিলেন। পোলাও, খাসির মাংস, মুরগির মাংস, মাছ ও ডাল। ভালোই খেলাম সকলে। খাওয়া শেষে আমি সকলের মাঝে কোক আর কাঁচাগোল্লা বিতরণ করলাম। অনেকে খাওয়ার সময় দুই একটা ছবিও তুলল।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: ভোজনপর্ব শেষে সকলেই বসে পড়লাম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। আসার সময় ঢোল, তবলা, হারমোনিয়াম এবং আরও কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে এনেছিলাম। অনুষ্ঠানে সকলে খুবই আনন্দ করলাম। আমি একটি গান গেয়েছিলাম যেটি সকলকেই আনন্দ দিয়েছিল। জসিম উদ্দিন স্যারও একটি গান গাইলেন। এছাড়া আরও অনেকেই গাইল এবং অনেকে কৌতুকাভিনয় করল। যেহেতু সময় খুবই কমছিল তাই অনুষ্ঠান দীর্ঘায়িত করা সম্ভব হয়নি। অনুষ্ঠান শেষেই আমরা সবকিছু গুছিয়ে বাসে উঠে বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা দিই।

উপসংহার: আমাদের বনভোজনে যাওয়ার ঘটনাটি আমার জীবনের একটি স্মরণীয় ঘটনা। দূরত্ব বেশি হওয়ার কারণে কিছুটা কষ্ট হয়েছিল কিন্তু আনন্দের মাঝে তা আর মনে ছিল না। আমরা সকলে মিলে খুবই আনন্দ করেছিলাম। আমি মনে করি, যারা আমাদের সাথে যোগ দেয়নি তারা বঞ্চিত হয়েছে মহা আনন্দ থেকে। আমরা কৃতজ্ঞ আল্লাহর কাছে ভালোভাবে ফিরে আসতে পেরেছি। এছাড়া সকলকেই ধন্যবাদ জানাই যারা আমাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছে। বনভোজনের আনন্দ, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য ও পদ্মার সৌন্দর্য আমার স্মৃতিপটে চিরদিন আঁকা থাকবে। এ দিনটিকে আমি কোনো দিন ভুলব না।