• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

পাট

ভূমিকা: পাট বাংলাদেশে অর্থকরী ফসল হিসেবে খ্যাত এবং কৃষিজাত দ্রব্যের মধ্যে অন্যতম। এক্ষেত্রে ধানের পরেই পাট চাষের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। বিদেশে পাট রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। আর এ কারণে পাটকে স্বর্ণসূত্র বা সোনালি আঁশ বলা হয়।

পাটের উৎপত্তিগত অবস্থান: বাংলাদেশের প্রায় সব স্থানেই পাট উৎপন্ন হয়। পৃথিবীতে যে পরিমাণ পাট উৎপন্ন হয় তার ৮০ ভাগ বাংলাদেশে উৎপন্ন হয়। ফলে ২০ ভাগ পাট এশিয়ার অন্যান্য দেশে জন্মে। এক্ষেত্রে ভারত, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ইত্যাদি দেশের নাম উল্লেখ করা যায়। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ, ঢাকা, ফরিদপুর, কুমিল্লা, রাজশাহী, রংপুর, পাবনা ও মেহেরপুর জেলায় অপেক্ষাকৃত পাট উৎপন্ন বেশি পরিমাণে লক্ষ করা যায়।

পাটগাছের পরিচয় ও চাষ প্রণালি: পাটগাছ দেখতে সোজা কাঠির মতো। এ গাছ ৭/৮ হাত লম্বা হয়ে থাকে। পাট প্রায় সোয়া ইঞ্চি মোটা হয়ে থাকে। পাটের পাতা সবুজ হয়। পাট চাষ করতে গেলে জমিকে খুব ভালোভাবে উর্বর করে তুলতে হয়। গ্রীষ্মকালের বৃষ্টিতে পাটের বীজ বপন করতে হয়। বীজের চারা উৎপন্ন হলে নিড়ানি দ্বারা এর আগাছা তুলে ফেলা হয়। এ কারণে পাট গাছ মোটা ও লম্বা হয়ে থাকে। পরবর্তী পদক্ষেপে পাটগাছ বেড়ে গেলে তা কেটে আঁটি বেঁধে খাল বা ডোবার পানির মধ্যে ২০/২৫ দিন ডুবিয়ে রেখে পচাতে হয়। পচা এ পাটগুলো তুলে আঁশ পৃথক করে রোদে শুকিয়ে গাঁইটা বেঁধে বাজারে বিক্রি করা হয়। এতে বেশ ভালো উপার্জন হয়। এভাবে পাট চাষ করা কষ্টকর হলেও উপার্জনে তা পুষিয়ে-নেওয়া যায়। আর এ কারণেই পাট কৃষকের কাছে সোনার মতো মূল্যবান হয়ে থাকে।

পাটের প্রকারভেদ: বাংলাদেশে পাটের নানাবিধ প্রকারভেদ রয়েছে। এর মধ্যে ক্রস বটম, বি-বটম, তোষা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তবে তোষা পাট উৎকৃষ্ট বলে অনেকে মনে করে থাকে।
পাটের উপকারিতা: পাটের উপকারিতা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশ গ্রীষ্মপ্রধান দেশ। তাই পাট থেকে উৎপন্ন সুতা দ্বারা যে' কাপড় তৈরি হয়, তা দিয়ে বস্ত্র তৈরি করে বাংলাদেশের মানুষ পরিধান করে গরমকালে আরামবোধ করে থাকে। পাট দ্বারা সুতা ও রেশম তৈরি হয়। পাটকাঠি বেড়া ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাটগাছের পাতা দ্বারা ওষুধ তৈরি হয়। আবার পাটের পাতা শাক হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। পাট দ্বারা কাগজ ও হার্ডবোর্ড তৈরি হয়। এভাবে পাট আমাদের বিভিন্ন উপকারিতা বয়ে আনে।

অপকারিতা: পাট লাভজনক কৃষিজাত দ্রব্য। তবে এর কিছু অপকারিতা লক্ষ করা যায়, যদিও তা সাময়িক। পার্ট লাভজনক হলেও এর চাষে অনেক খরচ ও পরিশ্রম বহন করতে হয়। পাট পানিতে পচানোর সময় পরিবেশ দুর্গন্ধময় হয়ে ওঠে এবং রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এভাবে পরিবেশ দূষণের ফলে মানুষের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে।

উপসংহার: পাট বিদেশে রপ্তানি করে আমরা অধিক মুনাফা অর্জন করি। ফলে পাট বাংলাদেশের মূল্যবান সম্পদ হিসেবে গণ্য হয়। পাট বিদেশে রপ্তানি করে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হলেও কৃষকরা এর সঠিক মূল্য পায় না, এ বিষয়ে সরকারকে সজাগ থাকতে হবে। দেশ ও জাতির অর্থনৈতিক কাঠামো যেন দৃঢ় ও মজবুত হয়- এ বিষয়ে সবাইকে সহায়ক ভূমিকা রাখতে হবে।