- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
বাংলাদেশের পুরাকীর্তি
ভূমিকা: প্রাচীনত্বের বিবেচনায় বাংলা সারা বিশ্বে সুপরিচিত। কারণ বাংলা ও বাঙালি জাতির রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। দৃষ্টিনন্দন অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন তারই সাক্ষ্য বহন করে। সেসব পুরাকীর্তি প্রত্যক্ষ করার জন্য বিভিন্ন সময়ে বহু পর্যটক ছুটে এসেছেন বাংলাদেশে।
বাংলাদেশের পুরাকীর্তি: প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশের বর্তমান ভূখন্ডে উন্নত সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। এর কিছু ধ্বংসাবশেষ এখনও বিভিন্ন অঞ্চলে রয়ে গেছে। যেমন-
মহাস্থানগড়: বগুড়া শহর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত মহাস্থানগড়। যিশু খ্রিস্টের জন্মের পূর্বে তৃতীয় থেকে পনেরো শতকে বাংলার এ প্রাচীন নগর গড়ে ওঠে। সমতল ভূমি থেকে এ গড় প্রায় ২০/২৫ হাত উঁচু। প্রাচীন যুগের বহু ধ্বংসাবশেষ এখানে বিদ্যমান। বিভিন্ন সময় খনন করে এ গড় থেকে পাথর, মূর্তি, শিলা, ঘরবাড়ি এবং বিভিন্ন আমলের মুদ্রা পাওয়া গেছে।
মহাস্থানগড়ের প্রাচীনত্ব অতি প্রাচীনকালে 'পুণ্ড্র' নামে এক রাজ্য ছিল। এ পুণ্ড্ররাজ্যের সীমানার মধ্যে ছিল রংপুর, দিনাজপুর, পাবনা, রাজশাহী, বগুড়া, বালুরঘাট, কুচবিহার, মালদহ প্রভৃতি। এ রাজ্যের একেক সময় একেক রকমের নামকরণ করা হয়েছিল; কখনো হয়েছিল বরেন্দ্রভূমি, কখনোবা গৌড়রাজ্য। উত্তর বাংলার নাম ছিল পুণ্ড্রবর্ধন। রামায়ণ-মহাভারতেও পুণ্ড্রবর্ধনের নাম উল্লেখ আছে।
পাহাড়পুর: নওগাঁ জেলার পাহাড়পুরে আবিষ্কৃত হয়েছে প্রাচীন বৌদ্ধ সভ্যতার নিদর্শন সোমপুর বিহার। এটি ছিল বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের আশ্রম। সোমপুর বিহারটি পাল রাজা ধর্মপালের আমলে তাঁর অর্থ আনুকূল্যে নির্মিত হিমালয়ের দক্ষিণে এটাই সবচেয়ে বড় বিহার। পাহাড়পুর আশ্রমটি ছিল ২২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এর চারদিকে রয়েছে ১৭৭টি আবাসিক কক্ষ, বিস্তৃত প্রবেশপথ, ছোটখাটো অনেক স্তূপ ও মন্দির। আশ্রমটির উচ্চতা ছিল ৭২ ফুট এবং এটি তিন স্তরে নির্মিত হয়েছিল। যে দেওয়াল দ্বারা আশ্রমটি বেষ্টিত ছিল সেই দেওয়ালের উপর সাজানো ছিল এক সারি ৬৩টি পাথরের মূর্তি। মূর্তিগুলোর উপরের দিকে টেরাকোটার চিত্র ছিল। এগুলোতে ছিল রামায়ণ ও মহাভারতের প্রভাব এবং শ্রীকৃষ্ণের জীবনীকেন্দ্রিক। এছাড়া এখানকার অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষের মধ্যে স্নানঘাট, গন্ধেশ্বরীর মন্দির ও সত্যপীর ভিটা উল্লেখযোগ্য।
ময়নামতি: প্রাচীন বাংলার বৌদ্ধ সভ্যতার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হলো কুমিল্লার ময়নামতি। ময়নামতির এ ব্যাপক অঞ্চলে খননকার্যের জন্য পঞ্চাশটিরও বেশি স্থান চিহ্নিত হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হলো-
- শালবন বিহার: শালবন বিহার খননকার্যের ফলে একটি সুবৃহৎ বৌদ্ধমঠ ও অন্যান্য মূল্যবান দ্রব্য পাওয়া গেছে।
- আনন্দ বিহার: আনন্দ বিহারে ময়নামতির আকর্ষণীয় নিদর্শনাদি উদঘাটিত হয়েছে।
- ভোজ বিহার: ভোজ বিহার ময়নামতির তৃতীয় বৃহত্তম মঠ।
- ময়নামতি প্রাসাদ টিলা ময়নামতি প্রাসাদ টিলাটি শৈলরাজির উত্তর প্রান্তে অবস্থিত। এটি ময়নামতির সর্বোচ্চ ঢিবি।
- রূপবান মুড়া: রূপবান মুড়ায় খননকার্যের ফলে ক্রুশাকৃতির একটি উপাসনালয় আবিষ্কৃত হয়েছে।
সোনারগাঁও: মধ্যযুগে দীর্ঘ সময় ধরে সোনারগাঁও ছিল দক্ষিণ-পূর্ববঙ্গের প্রশাসনিক কেন্দ্র। এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান। সুলতানি ও মুঘল আমলের অনেক নিদর্শন সেখানে পাওয়া যায়। যেমন- ধর্মীয় ইমারত, মুঘল আমলের কয়েকটি সেতু আর ইংরেজ আমলের কিছু আবাসিক ভবন। এছাড়া বিভিন্ন দিঘি, মসজিদ, দরগাহ, মঠ, সরদার বাড়ি, পানাম নগরের আবাসিক ভবনসমূহের ধ্বংসাবশেষ, গিয়াসউদ্দিন আযম শাহের সমাধি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
লালবাগ দূর্গ: মুঘল আমলে শাহজাদা আযম শাহ এবং সুবেদার শায়েস্তা খানের সময় নির্মিত হয় লালবাগ দুর্গ। এটি বাংলাদেশের একটি প্রসিদ্ধ, ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এটি ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এখানে আছে সূচারু কারুকার্যখচিত প্রাচীর ফটক; এছাড়া লালবাগ দুর্গে রয়েছে দরবার হল, মসজিদ, মুঘল সুবেদার শায়েস্তা খানের কন্যা পরী-বিবির সমাধিসৌধ ও পুকুর।
উপসংহার: বাংলাদেশ একটি সুপ্রাচীন দেশ। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, ময়নামতি, সোনারগাঁও ইত্যাদির মতো আরও অসংখ্যা পুরাকীর্তি রয়েছে। এ পুরাকীর্তিগুলো যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনই বাঙালির অতীত কৃষ্টি ও সংস্কৃতির উজ্জ্বল প্রমাণ।