• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমার একটিমাত্র পরিচয় আছে, সে আমি কবি মাত্র।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূমিকা: কবিশ্রেষ্ঠ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বর্তমান বিশ্বের এক বিরাট বিস্ময়। কেবল কবিশ্রেষ্ঠ হিসেবেই নন, সর্বশ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদরূপেও তিনি সারা বিশ্বে সম্মানিত। মানবজীবনের এমন কোনো চিন্তা নেই, এমন কোনো ভাব নেই, যেখানে তিনি বিচরণ করেন নি। তিনি মানুষের চিরন্তন সুখ-দুঃখ ও আনন্দ-বেদনার পালাগান রচনা করে গিয়েছেন। পরিবেশ ও আবির্ভাব কলকাতার জোড়াসাঁকোর প্রখ্যাত ঠাকুর পরিবার ছিল উনিশ শতকের সাহিত্য ও সংস্কৃতির পীঠস্থান। সে পরিবেশে ১৮৬১ সালের ৭ মে (২৫ বৈশাখ ১৩৬৮) আবির্ভূত হলেন এ যুগের কবিশ্রেষ্ঠ ও মহামনীষী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

শৈশব শিক্ষা: ঠাকুর পরিবারে উন্নত শিক্ষাদীক্ষা, মার্জিত সাংস্কৃতিক চেতনা এবং পিতার অলৌকিক ধর্মবিশ্বাস সফল হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের মধ্যে। স্কুলের প্রথাগত শিক্ষা তাঁর না হলেও বাড়িতে গৃহশিক্ষকের কাছে জ্ঞানার্জনের কোনো ত্রুটি ঘটে নি। ১৭ বছর বয়সে একবার ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য তাঁকে বিলেত পাঠানো হয়। কিন্তু দেড় বছর পর তা শেষ না করেই তিনি দেশে ফিরে আসেন। স্কুল-কলেজের কুণ্ঠিত বিদ্যায় তাঁর মন ভরে নি, কিন্তু বিশ্ববিদ্যার সকল দুয়ার তাঁর সামনে উন্মুক্ত হয়ে গেল।

সাহিত্য সাধনা: বাংলা কাব্যের প্রথম রূপশিল্পী রবীন্দ্রনাথ। হৃদয়ের গভীরতম অনুভূতিগুলোকে মানুষের সুখ-দুঃখ ও আনন্দ-বেদনার ভাষায় তিনি রূপ দিয়েছেন। যৌবনের প্রথম, প্রভাতে তাঁর কাব্যের যে উৎসমুখ খুলে গিয়েছিল, তার মর্মরিত কলতানে ঝঙ্কৃত হয়ে উঠল সন্ধ্যা সংগীত, প্রভাত সংগীত, ছবি ও গান, কড়ি ও কোমল, ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী, মানসী ও সোনার তরী। এবার সোনার তরীর পালে লাগল সৌন্দর্যের হাওয়া। চিত্রা, চৈতালি, কণিকা, ক্ষণিকা, কল্পনা, কথা ও কাহিনী, নৈবেদ্য, খেয়া, গীতাঞ্জলি, গীতালি, গীতিমাল্যের সোনার ফসলে তরী হলো বোঝাই। তারপর 'হেথা নয়, অন্য কোথা, অন্য কোনখানে।'

বলাকা, পূরবী, পলাতক, বনবাণী, মহুয়া, পরিশেষ, পুনশ্চ, পত্রপুট, শেষসপ্তক ও শ্যামলীর ধারা বেয়ে তাঁর কাব্যতরী নরজাতক, সানাই, জন্মদিনে ও শেষ লেখার মধ্য দিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছে। শুধু কাব্যেই নয়- নাটক, প্রবন্ধ, রসরচনা, উপন্যাস, ছোটগল্প, সমালোচনা, শিশুসাহিত্য, বিজ্ঞান, সংগীত, ভ্রমণ কাহিনী প্রত্যেকটি বিভাগেই তাঁর স্বাচ্ছন্দ্য বিহারের যোগফল হলো বাংলা সাহিত্যের বর্তমান চরম সমুন্নতি। এ পর্যায়ে তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো- গল্পগুচ্ছ, নৌকাডুবি, চোখের বালি, গোরা, যোগাযোগ, শেষের কবিতা, সাহিত্য, প্রাচীন সাহিত্য, আধুনিক সাহিত্য, সভ্যতার সংকট, বিচিত্র প্রবন্ধ, ছিন্নপত্র, রাশিয়ার চিঠি, ছেলেবেলা, কালান্তর, শিশু ভোলানাথ ইত্যাদি। ১৯১৩ সালে 'গীতাঞ্জলি' কাব্যের ইংরেজি অনুবাদের জন্যে তিনি পেলেন 'নোবেল পুরস্কার'। রবীন্দ্রনাথ হয়ে গেলেন বিশ্বকবি।

নাটক ও অভিনয়: আবৃত্তি এবং অভিনয়েও তাঁর প্রতিভা আশ্চর্য দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছে। স্বরচিত নাটকে স্বয়ং বিশিষ্ট ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে মজগতে অভিনয়ের যে নতুন ঐতিহ্য সৃষ্টি করে গেছেন, তা পরবর্তীকালে আমাদের নাটক এবং রঙ্গমঞ্চের ইতিহাসে ব্যর্থ হয়নি। শুধু তাই নয়, পরিণত বয়সে চিত্রশিল্পেও তিনি বিশ্বকে বিস্মিত করে দেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো- প্রকৃতির প্রতিশোধ, রাজা ও রাণী, বিসর্জন, শারদোৎসব, চিরকুমার সভা, ফাল্গুনী, বসন্ত, রাজা, অচলায়তন, রক্তকরবী, ডাকঘর, মুক্তধারা, তাসের দেশ ইত্যাদি।

বিশ্ব ভ্রমণ: রবীন্দ্রনাথ চীন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, আমেরিকা, ইউরোপ, পারস্য, রাশিয়া- বিশ্বের যেখানে তিনি গেছেন, সেখানেই তিনি ভারতের বাণী বহন করে নিয়ে গেছেন। ভারতীয় জীবনধারা, ভারতের আধ্যাত্ম দর্শন এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের স্বর্ণভাণ্ডারের প্রতি তিনি বিশ্বের সশ্রদ্ধ দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছেন। রবীন্দ্রনাথের ভ্রমণকাহিনিগুলো হলো- ইউরোপ যাত্রীর ডায়েরী, জাপান যাত্রীর পত্র, রাশিয়ার চিঠি, ছিন্নপত্র ও পারস্যে ইত্যাদি।

শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতন: রবীন্দ্রনাথ বিশ্বের কবিশ্রেষ্ঠরূপেই শ্রদ্ধার্হ। কিন্তু গঠনমূলক কাজেও রবীন্দ্র প্রতিভা বিস্ময়কর কৃতিত্বের অধিকারী, তা অনেকের অজ্ঞাত। বীরভূম জেলার বোলপুরে ভারতীয় আদর্শে তিনি 'শান্তিনিকেতন' নামে একটি শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করে সেখানে স্বয়ং শিক্ষাদানে ব্রতী হন এবং কালক্রমে সেখানে 'বিশ্বভারতী' নামে এক বিরাট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

মহাপ্রয়াণ: অবশেষে অম্লান মানবপ্রীতি, গভীর স্বদেশানুরাগ এবং রসপ্রগাঢ় উন্নত সাহিত্য সম্ভার পেছনে রেখে ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট (২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮) কলকাতায় রবীন্দ্রনাথের মহাপ্রয়াণ ঘটে। কিন্তু তাঁর সৃষ্টি তাঁকে আবহমানকাল ধরে অমর করে রাখবে।

উপসংহার: রবীন্দ্রনাথের একক চেস্টায় বাংলা সাহিত্য সকল দিকে যৌবনপ্রাপ্ত হয়ে বিশ্বের দরবারে সগৌরবে নিজের আসন প্রতিষ্ঠা করে। কাব্য, ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, সংগীত প্রত্যেক বিভাগেই তাঁর অবদান অজস্র এবং অপূর্ব। তিনি একাধারে সাহিত্যিক, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, সুরকার, নাট্যপ্রযোজক ও স্বদেশপ্রেমিক। বিজ্ঞানে তাঁর অপরিসীম আগ্রহের পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর 'বিশ্বপরিচয়' গ্রন্থে। এমনিভাবে রবীন্দ্রনাথ হয়ে উঠেছেন সকল দেশের, সকল কালের মানুষের আদর্শ ও চেতনাশুদ্ধির প্রতিরূপ।