- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস
ভূমিকা: স্বাধীনতা মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। স্বাধীনতার জন্য পৃথিবীর অনেক জাতিকেই সংগ্রাম করতে হয়েছে, রক্ত দিতে হয়েছে, জীবন দিতে হয়েছে। বাংলাদেশও এমনিভাবেই স্বাধীনতা পেয়েছে। ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পরাধীনতার গ্লানি ধুয়েমুছে আমরা স্বাধীন হয়েছি। আজ বাংলাদেশ একটি গৌরবময় স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। প্রতিবছর ২৬ মার্চ এদেশের স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় জাতীয় মর্যাদার সাথে। দিনটি আমাদের কাছে আনন্দের ও গৌরবের।
স্বাধীনতার পটভূমি: ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী বৈষম্যমূলক আচরণ করে পূর্ব বাংলার মানুষ তথা বাঙালিদের সাথে। প্রথমেই বাঙালিদের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানা হয়। সমগ্র পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে এককভাবে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া হলো। বাঙালিরা তা মেনে নিল না। গড়ে উঠল ভাষা আন্দোলন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলার তরুণদের জীবন দেওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বাঙালিদের রাজনৈতিক ঐক্য যুক্তফ্রন্ট বিজয় অর্জন করল। পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করে অল্পকালের মধ্যেই ভেঙে দিল প্রাদেশিক যুক্তফ্রন্ট সরকার। অল্পকালের মধ্যেই গড়ে উঠল ছয়দফা ও এগার দফা আন্দোলন। এ আন্দোলন ক্রমে ক্রমে প্রবল গণআন্দোলনে রূপলাভ করল। আবার হত্যাকান্ড ঘটল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে।' গণআন্দোলন গণবিস্ফোরণে পরিণত হলো। আন্দোলনের চাপের মুখে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান পদত্যাগ করলেন। জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় এসে নির্বাচন দিলেন। আগরতলা মামলা থেকে বিনাশর্তে মুক্তি দেওয়া হলো বঙ্গবন্ধুকে।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করল। কিন্তু বিজয়ী দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হলো না। তার পরিবর্তে শুরু হলো নানারকম তালবাহানা ও ষড়যন্ত্রের খেলা। আলোচনার নামে অযথা কালক্ষেপণ শুরু হলে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে বললেন, "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।" ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর; জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড চালায়। গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধ: ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর, ১০ এপ্রিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি; সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধ আনুষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। কর্নেল আতাউল গনি ওসমানীকে এ যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গ্রামে গ্রামে গড়ে ওঠে-প্রতিরোধ ব্যূহ। হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর নির্মম অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। আগুন ধরিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় অগণিত মানুষের ঘরবাড়ি। যাকে পায় তাকেই গুলি করে মারে লুটপাট চলে। এ অবস্থায় সামরিক বাহিনীতে নিযুক্ত বাঙালিরা পাকিস্তানের সাথে বিদ্রোহ করে যোগ দেয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে।
দেশের প্রায় এক কোটি লোক প্রাণের ভয়ে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয় প্রতিবেশী দেশ ভারতে। তারা অনেকেই প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক, চাকুরে ব্যবসায়ী প্রত্যেকেই ঝাঁপিয়ে পড়ে মাতৃভূমিকে মুক্ত করার জন্য। ক্রমে ক্রমে মুক্তিযুদ্ধ ভয়াবহ রূপলাভ করে। বিপর্যস্ত হতে থাকে হানাদার বাহিনী। সারা দেশে তারা কোণঠাসা হয়ে পড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল আক্রমণে। শেষপর্যন্ত ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিনাশর্তে আত্মসমর্পণ করে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শত্রুমুক্ত হয় বাংলাদেশ। একটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়। যার নাম বাংলাদেশ।
স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন: ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল- তাই ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপিত হয়। তারপর থেকে প্রতিবছর এ দিনটি একটি স্মরণীয় দিবস হিসেবে জাতীয় মর্যাদার সাথে পালিত হয়ে আসছে। এদিন দেশের সকল বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকে। দিবসটি উদ্যাপনের জন্য বিদ্যালয়গুলোতে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। সমস্ত ভবনে জাতীয় পতাকা উডানো হয়। ঢাকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় স্বাধীনতার অনুষ্ঠান। সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। ভোরবেলা গণজমায়েত হয় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে, ফাতেহা পাঠ করা হয়, শহিদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধে।
দেশের অন্যান্য স্থানেও শহিদ মিনারে এবং বিদ্যালয়গুলোতে নানা উৎসব আয়োজন হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। মসজিদ মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। শোভাযাত্রা ও আলোচনা অনুষ্ঠান হয়। খেলাধুলা হয়। সরকারি ও বেসরকারি ভবনগুলোতে জাতীয় পতাকা শোভা পায়। এভাবে সমগ্র দেশে বিশেষ মর্যাদার সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপিত হয়।
উপসংহার: পরাধীন জাতি পশুর চেয়েও অধম। তাই স্বাধীনতা এত আনন্দের, এত গৌরবের। স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ জাতীয় জীবনে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। 'দেশের প্রতি মানুষের মনে নতুন করে ভালোবাসা জন্ম নেয়, নতুন চেতনায় উজ্জীবিত হয় মানুষ। বলা হয়ে থাকে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন। স্বাধীনতাকে রক্ষা করার শপথই হোক স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনের মূলমন্ত্র।