- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
সরকার কাঠামো ও সরকারের অঙ্গসমূহ
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
সরকার কাঠামো ও সরকারের অঙ্গসমূহ
গণতন্ত্রের দোষাবলি (Demerits of Democracy)
গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার গুণাবলির পাশাপাশি বেশকিছু মন্দ দিকও রয়েছে। গণতন্ত্রে ব্যক্তি স্বাধীনতা, আইনের শাসন এবং জনগণের মতামতের প্রাধান্য দেওয়া হয়। তবে নানা রকম ত্রুটির কারণে জনগণের এই অধিকার বাধার সম্মুখীন হয়। নিম্নে গণতন্ত্রের দোষ বা ত্রুটি উল্লেখ করা হলো:
১. ব্যয়বহুল শাসন ব্যবস্থা গণতন্ত্রের অন্যতম দোষ হলো এটি একটি ব্যয়বহুল শাসন ব্যবস্থা। বার বার নির্বাচন করতে রাষ্ট্রের প্রচুর অর্থের ব্যয় হয়। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে জয় লাভের জন্য অনেক টাকা পয়সা খরচ করে যা অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শুভ নয়।
২. মূর্খের শাসন: প্রাচীনকালের রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের অনেকে গণতন্ত্রকে মূর্খের শাসন বলে অভিহিত করেছেন। কারণ দেশের অধিকাংশ জনগণ সাধারণত অশিক্ষিত ও অসচেতন, তাই অনেক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে উপযুক্ত সরকার নির্বাচন করতে পারে না।
৩. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে অক্ষম গণতন্ত্র হচ্ছে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পরিচালিত শাসন। এর ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিলম্ব হয়। জরুরি প্রয়োজনের সময় গণতান্ত্রিক সরকার তাই দ্রুত 'সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমর্থ হয় না। এতে দেশ ও জনগণের ক্ষতি হওয়ার আশংকা থেকে যায়।
৪. স্বাধীনতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্টিত হয় নাঃ গণতন্ত্র সাম্য, স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের কথা বলা হলেও বাস্তবে সবসময় তা ঘটে না। আইনের শাসনের বদলে কখনো কখনো পেশির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। অনেক সময় দেখা যায়, ধনী তথা পৈশি সর্বস্ব প্রভাবশালীরাই নির্বাচিত হন। এজন্য লেকি বলেন যে, "গণতন্ত্র শ্রেষ্ঠতর প্রশাসনিক ব্যবস্থার নিশ্চয়তা প্রদান করে না, অধিকতর স্বাধীনতার নিশ্চয়তা বিধানও করে না।
৫. গুণের চেয়ে সংখ্যার ওপর গুরুত্ব দেয়া গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় গুণের চেয়ে সংখ্যার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। কেননা গণতন্ত্র হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন। গণতন্ত্রে গুণ নয় বরং সংখ্যার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। লেকির মতে, "গণতন্ত্র হচ্ছে সবাপেক্ষা দরিদ্র, অজ্ঞ ও অকর্মণ্য ব্যক্তির সরকার। কারণ এই শ্রেণির লোকই সর্বাধিক।" কার্লাইল উপহাসচ্ছলে গণতন্ত্রকে তাই 'নির্বোধের শাসন' বলে অভিহিত করেছেন।
৬. দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অসুবিধা: গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অসুবিধা দেখা দেয়। সরকার পরিবর্তন হলে নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে আগের সরকারের গৃহিত অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন না। এতে অনেক অর্থের অপচয় ঘটে।
৭. উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয় গণতন্ত্রে সরকার অধিকমাত্রায় পরিবর্তনশীল। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে সরকারি নীতিরও পরিবর্তন ঘটে। ঘনঘন সরকার পরিবর্তনের কারণে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশংকা থাকে।
৮. দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি প্রসার: গণতন্ত্রে অনেক সময় ব্যাপক দুনীর্তি ও স্বজনপ্রীতির প্রসার ঘটে থাকে। পরবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতায় নাও আসতে পারে এ আশংকায় ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অর্থসহ সুযোগ-সুবিধা গ্রহণে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এতে গণতন্ত্রের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়।
৯. দলীয় মনোভাব: গণতন্ত্রের অন্যতম দোষ হলো দলীয় মনোভাব। যে দল ক্ষমতায় সে দল তার লোকজনকে বেশি করে সুযোগ-সুবিধা পেতে চায়। এ ধরনের দলীয় মনোবৃত্তি জনস্বার্থের পরিপন্থি হিসেবে কাজ করে।
১০. জ্ঞান-বিজ্ঞানের অনুকূল নয়: অনেকে মনে করেন, গণতন্ত্রে জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্পের প্রসারে ব্যাঘাত ঘটে। শিল্প-সাহিত্যের বিকাশের জন্য যে ধরনের শিক্ষিত ও জ্ঞানী শাসকের প্রয়োজন, গণতন্ত্রে য়াজন, গণতন্ত্রে সে রকম প্রায়ই ঘটে না। ফলে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
১১. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি: তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ গণতান্ত্রিক দেশে সরকার ও বিরোধী দলের ক্ষমতা দখলের লড়াই রাজনৈতিক সহিংসতায় পরিণত হয়। রাজনৈতিক হানাহানি, বিরোধ, দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক জীবনকে অস্থির ও অস্থিতিশীল করে তোলে। এ ধরনের পরিস্থিতি জনজীবনের শান্তি বিনষ্টসহ উন্নয়ন অগ্রগতিকে ব্যাহত করে।
গণতন্ত্রের উপরিউক্ত মন্দ দিক বা ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও গণতন্ত্রের ভালো দিক অনেক। তাই গণতন্ত্রের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা সংগ্রাম, আন্দোলন এখানো অব্যাহত রয়েছে। গণতন্ত্রই আজকের বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় শাসন ব্যবস্থা।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ