- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
সরকার কাঠামো ও সরকারের অঙ্গসমূহ
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি Theory of Separation of Power
রাষ্ট্রচিন্তার প্রায় প্রতিটি যুগেই যে বিষয়টি রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের চিন্তাকে নাড়া দিয়েছে তা হলো ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বা ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতি (Separation of power)। প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মন্টেঙ্কু (Montesquieu) ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির জনক বা প্রবক্তা।
মন্টেস্কু তার "The spirit of laws" গ্রন্থে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সংজ্ঞায় বলেন- "ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলতে সরকারের তিনটি অঙ্গের পূর্ণ স্বাধীনতা বোঝায়, যেখানে এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করবে না, প্রয়োজনে এক অঙ্গ অন্য অঙ্গের কাজের সাথে সমন্বয় সাধন করবে।"
অস্টিন রেনি (Austin Ranney) বলেন, 'আইন, শাসন ও বিচার বিভাগের মধ্যে সাংবিধানিকভাবে সরকারের বিভাজনই হলো ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ' ("Separation of power means the constitutional division of government power among legislature, executive and judiciary branches.")
মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ম্যাডিসন (Madison)-এর মতে, "ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি হচ্ছে একে অপরের হস্তক্ষেপমুক্ত থেকে সরকারের তিনটি বিভাগের পৃথক পৃথকভাবে ক্ষমতার প্রয়োগ ও ব্যবহার।"
প্রফেসর এন্ড্রু স্টেকর (Andrew stacker)-এর মতে, "ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল অর্থ হলো আইন, শাসন ও বিচার বিভাগের পৃথক পৃথকভাবে কর্মকাণ্ড সম্পাদন করা।"
মূলত গণতান্ত্রিক শাসন প্রক্রিয়ায় বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে এ নীতির বাস্তবতা লক্ষ করা যায়। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল কথা হলো সরকারের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ- আইন বিভাগ (Legislature), শাসন বিভাগ (Executive) এবং বিচার বিভাগ (Judiciary) প্রত্যেকে স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে স্বতন্ত্রভাবে দায়িত্ব পালন করা। এক বিভাগ অন্য বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
আধুনিক রাষ্ট্র মূলত জনকল্যাণমূলক। এসব রাষ্ট্রের আয়তন বিশাল এবং জনসংখ্যাও বিপুল পরিমাণ। ফলে রাষ্ট্রের জনকল্যাণমূলক কার্যের ব্যাপকতা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি সরকারের কার্যে জটিলতাও বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে শাসনকার্যে ব্যাপৃত করতে বিভিন্ন বিভাগের কর্মবিভাজন প্রয়োজন। সরকারের তিনটি অপরিহার্য বিভাগের কাজ হলো:
১. আইনসভার কাজ দেশের জনগণের চাহিদা অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা।
২. শাসন বিভাগের কাজ হলো আইনগুলো বাস্তবায়িত করা।
৩. বিচার বিভাগ আইনের আলোকে যে কোনো বিবাদ-মামলার বিচার করবে।
সরকারের এ তিনটি বিভাগের মধ্যে সুনির্দিষ্ট ক্ষমতা বণ্টনের নীতিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলে অভিহিত করা হয়। বর্তমানকালে প্রশাসনিক অঙ্গনে অনেক জটিল বিষয়ের অবতারণার ফলে এ নীতির গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ