- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
সরকার কাঠামো ও সরকারের অঙ্গসমূহ
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
সরকার কাঠামো ও সরকারের অঙ্গসমূহ
গণতন্ত্রের সফলতার শর্তাবলি (Conditions for the Success of Democracy)
গণতন্ত্র আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় শাসন ব্যবস্থা। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। গণতন্ত্রের যেমন ভালো দিক রয়েছে, তেমনি কতগুলো দোষ বা ত্রুটি রয়েছে। এসব দোষ বা ত্রুটি দূর করে গণতন্ত্রকে সফল্যমণ্ডিত করতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেছেন। এসব পদক্ষেপ বা শর্তাবলি পূরণের মাধ্যমেই গণতন্ত্র সফল হতে পারে। নিম্নে গণতন্ত্রের সফলতার শর্তবলি আলোচনা করা হলো:
১. শিক্ষার প্রসার: গণতন্ত্রেকে সফল করতে শিক্ষার ব্যাপক প্রচলন করতে হবে। শিক্ষা মানুষকে সচেতন, দায়িত্বশীল ও অধিকার সচেতন করে তোলে। তাই স্টুয়ার্ট মিল বলেছেন, "সর্বজনীন ভোটাধিকারের আগে সর্বজনীন শিক্ষা আবশ্যক।" ("Universal education must precede universal suffrage.") শিক্ষিত জনগোষ্ঠী গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সহজেই ধারণ ও লালন করতে পারে।
২. আইনের শাসন: আইনের শাসন গণতন্ত্রের সাফল্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। আইনের চোখে সকলেই সমান্ সকলেরই আইনের আশ্রয় গ্রহণের অধিকার থাকতে হবে। আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে বিনা অপরাধে কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা যাবে না। এতে জগণের অধিকার সুরক্ষিত হবে, সফল হবে গণতন্ত্র।
৩. অর্থনৈতিক উন্নয়ন: গণতন্ত্রের সফলতার জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি খুবই প্রয়োজন। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার মতো মৌলিক মানবিক চাহিদাগুলো রাষ্ট্র পূরণ করতে না পারলে মানুষের নিকট গণতন্ত্র মূল্যহীন হতে বাধ্য। কারণ "ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়।" তাই জনগণের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হলে অন্যান্য স্বাধীনতা অর্থবহ হয়ে ওঠতে পারে। এজন্য দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে জনগণের ভাগ্যের উন্নয়নে সরকারকে সচেষ্ট হতে হবে।
৪. অর্থনৈতিক সাম্য: গণতন্ত্রের সফলতার জন্য সমাজে অর্থনৈতিক সমতা বিধান করতে হবে। লাঙ্কির মতে, "অর্থনৈতিক সাম্য ব্যতীত গণতন্ত্র সফল হতে পারে না।" রবসন-এর মতে, "গণতন্ত্র বলতে ন্যূনতম মৌলিক আর্থিক কল্যাণকে বোঝায়; কারণ অভুক্ত, গৃহহীন, রোগাক্রান্ত ও বস্ত্রহীনদের নিকট রাজনৈতিক অধিকার অর্থহীন।" অভাবগ্রস্ত মানুষকে 'অনেক সময় ভ্রান্তপথে পরিচালনা করা যায়।
৫. মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা গণতন্ত্রের সফলতার জন্য জনগণের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তার বিধান করতে হবে। গণতন্ত্র হচ্ছে জনগণের শাসন। জনগণ যেন তাদের মৌলিক অধিকারগুলো উপভোগ করতে পারে সে জন্য তা সংবিধানে সন্নিবেশিত হতে হবে। এর ফলে সরকার বা কোনো শক্তি এ সমস্ত অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
৬. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের অন্যতম রক্ষাকবচ। আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ ও ব্যাখ্যার জন্য বিচার বিভাগকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করতে হবে। বিচারকগণ যেন ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারেন তার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। এজন্য শাসন ও আইন বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ গড়ে তুলতে হবে।
৭. সুসংগঠিত রাজনৈতিক দল: আধুনিক প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের সফল্যের জন্য সুসংগটিত রাজনৈতিক দলের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দল জনমত গঠন করে ক্ষমতাসীন হয়। আবার ক্ষমতাসীন দল যেন জনস্বার্থ বিরোধী কাজে লিপ্ত না হতে পারে সেদিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখে।
৮. সহনশীলতা: সহনশীলতা বা পরমতসহিষ্ণুতা গণতন্ত্রের প্রাণ। অপরের বা অন্য দলের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে। অন্য ব্যক্তি ও দলকে মত প্রকাশের সুযোগ প্রদান করতে হবে। সহনশীল মনোভাব না থাকলে গণতন্ত্র সফল হতে পারে না। যে সমাজের জনগণ যত বেশি সহনশীল সে সমাজ তত বেশি গণতান্ত্রিক ও উন্নত।
৯. সামাজিক সাম্য: গণতন্ত্রকে সফল করতে হলে জাতি ধর্ম-বর্ণ, ধনী-নির্ধন, নারী-পুরুষ দলমত নির্বিশেষে সকলকে যোগ্যতা অনুযায়ী সমান সামাজিক অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হবে। সামাজিক সাম্য মানুষকে যোগ্য ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন করে তোলে। সামাজিক সাম্যের অভাবে সমাজে বৈষম্যের সৃষ্টি হয়।
১০. সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে গণতন্ত্র সফল হয়। সমাজ বা রাষ্ট্রের সমস্যা কী কী এবং কোন পথে এসব সমস্যার সমাধান আসতে পারে সে সম্পর্কে নেতাদের প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দূরদৃষ্টি থাকতে হবে। অদক্ষ ও অসৎ নেতৃত্ব দেশ ও জাতিকে ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে। নেতৃত্বের দক্ষতা ও দূরদর্শিতার উপর গণতন্ত্রের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভরশীল।
১১. সুষ্ঠু জনমত: গণতান্ত্রিক শাসন জনমতের ওপর নির্ভরশীল। নির্বাচনে ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ক্ষমতাসীন সরকার সবসময় জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে। সুষ্ঠু জনমত গণতন্ত্রের স্বরূপ বজায় রাখে। এজন্য জনমত গঠনের মাধ্যমগুলোকে মুক্ত ও স্বাধীন রাখতে হবে। রেডিও, টেলিভিশনকে স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিতে হবে।
১২. জনগণের সজাগ সৃষ্টি: জনগণ যদি তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন না হন এবং গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত না হন তাহলে গণতন্ত্র সফল হতে পারে না। গণতন্ত্রের সাফল্য নির্ভর করে জনগণের সক্রিয় সতর্কতা বা সজাগ দৃষ্টির ওপর।
১৩. ত্যাগের মনোভাব গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় প্রয়োজনবোধে জনগণকে যেকোনো প্রকার ত্যাগ স্বীকার করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। গণতন্ত্রে ব্যক্তিগত স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সমষ্টির স্বার্থের কথা ভাবতে হবে।
১৪. সরকারি কর্মচারীদের জনসেবার মানসিকতা গণতন্ত্রের সফলতার জন্য সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে সেবা ও ত্যাগের মনোভাব থাকতে হবে। সরকারি কর্মচারীরা জনগণের সেবক, প্রভু নয়। জনগণের কল্যাণে তাদের সততা, দক্ষতা ও সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে।
১৫. প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতা প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের সাফল্যের শর্ত হিসেবে কাজ করে। জনগণের সমস্যা, জনগণের মনোভাব, সরকারের দুর্নীতি, অদক্ষতা যাতে প্রচার মাধ্যমসমূহ যেমন- রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র, চলচ্চিত্র, ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে প্রচার করা যায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে।
১৬. সংখ্যালঘুদের অধিকার সংরক্ষণ গণতন্ত্র যেন সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বৈরশাসনে পরিণত না হয়। সেদিকে সরকার ও জনগণকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। সংখ্যালঘুদের অধিকার ও স্বার্থে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।
১৭. দেশপ্রেম: সর্বোপরি গণতন্ত্রের সফলতার জন্য সরকার, বিরোধী দল তথা সর্বস্তরের জনগণের দেশপ্রেম প্রয়োজন। দেশপ্রেম থাকলে সকল বিরোধ, সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমস্যার সমাধান সম্ভব। দেশপ্রেম গণতন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখে। জাতিকে উন্নতির দিকে পরিচালিত করে, সামাজিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের ভিত মজবুত করে।'
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ