- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
সরকার কাঠামো ও সরকারের অঙ্গসমূহ
আইন, শাসন ও বিচার বিভাগের পারস্পরিক সম্পর্ক Relation Among Legislature, Executive and Judiciary
প্রত্যেকটি রাষ্ট্রেরই সরকারের তিনটি অপরিহার্য অঙ্গ সংগঠন (Organ) রয়েছে যার মাধ্যমে রাষ্ট্রের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং কার্যাবলি বাস্তবায়িত হয়। সরকারের তিনটি অঙ্গ সংগঠন হলো- আইনসভা, শাসন বিভাগ এবং বিচার বিভাগ।
প্রথমত, সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর এবং নিবিড়। কেননা এই ব্যস্থায় আইন বিভাগের মধ্য থেকেই শাসন বিভাগ তথা মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। অন্যদিকে, বিচার বিভাগের বিচারপতি সহ সকল পদে নিয়োগ শাসন বিভাগ কর্তৃক হয়ে থাকে।
দ্বিতীয়ত, 'সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী একইসাথে আইন বিভাগের নেতা এবং শাসন বা নির্বাহী বিভাগের প্রধান। আবার রাষ্ট্রপতি আইনসভার সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। সেই সাথে রাষ্ট্রপতি বিচার বিভাগের বিচারপতিদের নিয়োগ দেন। এভাবে সরকারের তিনটি বিভাগ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।
অপরদিকে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায় আইন বিভাগের সাথে শাসন বিভাগের তেমন সম্পর্ক থাকে না। কারণ এখানে আইন বিভাগের বাইরে থেকে মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। তবে বিচার বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ শাসন বিভাগ কর্তৃক হয়ে থাকে। এ ব্যবস্থায় তিনটি বিভাগ স্বতন্ত্র হলেও ক্ষমতার মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার রোধের জন্য ভারসাম্য নীতির প্রয়োগ ঘটে।
প্রায় সব ধরনের সরকার ব্যবস্থাতেই বর্তমানে শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতা বেড়েই চলেছে। অনেকে এজন্য আশঙ্কাও প্রকাশ করেন যে, এর ফলে শাসন বিভাগ হয়তো স্বেচ্ছাচারী হয়ে পড়বে। এজন্য অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মনে করেন যে, শাসন বিভাগের ওপর অবশ্যই আইন বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। আইন বিভাগের নিয়ন্ত্রণের অর্থই হচ্ছে পরোক্ষভাবে জনগণেরই নিয়ন্ত্রণ। কেননা আইনসভার সদস্যগণ হচ্ছেন জনপ্রতিনিধি। শাসন বিভাগের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ শুরুর আগে আইনসভায় উপস্থাপন করা উচিত।
অন্যদিকে, শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের কাজের বিচার ও পর্যালোচনা করার দায়িত্ব বিচার বিভাগের ওপর ন্যস্ত থাকে। এছাড়া বিচার বিভাগ কিছু কিছু আইন সংক্রান্ত ও শাসন সংক্রান্ত কাজও করে থাকে। যেমন- প্রচলিত আইন অনেক ক্ষেত্রে জটিল ও অপর্যাপ্ত হয়ে থাকে এবং এটার অর্থ অস্পষ্ট হতে পারে। সেক্ষেত্রে বিচারপতিগণ নিজেদের প্রজ্ঞা, ন্যায়বোধ, বিচার-বুদ্ধি, বিবেক ও অভিজ্ঞতার আলোকে নতুন আইন সৃষ্টি করতে পারেন। এছাড়া সরকারের আইন বিভাগ যদি এমন কোনো আইন পাস করে বা শাসন বিভাগ যদি এমন কোনো আদেশ বা নির্দেশ জারি করে যা সংবিধানের কোনো ধারার বিরোধী, তাহলে আইনসভা কর্তৃক প্রণীত সেই আইন বা শাসন বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত সেই আদেশকে বাতিল করে দেওয়ার ক্ষমতা সরকারের বিচার বিভাগের হাতে থাকে। অন্যভাবে বলা যায়, অনেক সময় শাসন বিভাগ জনগণকে তোয়াক্কা না করে হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। আইন বিভাগও কোনো কোনো সময় জনস্বার্থ বিরোধী আইন প্রণয়ন করে থাকে। এসব ক্ষেত্রে একমাত্র বিচার বিভাগ নাগরিক অধিকার রক্ষার মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে।
পরিশেষে বলা যায়, সরকারের তিন বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বিদ্যমান। অর্থাৎ এক বিভাগ অন্য বিভাগের সাথে নানাভাবে সম্পর্কযুক্ত। সরকারের এ তিনটি বিভাগকে কোনোভাবেই সম্পূর্ণ আলাদা করা যায় না। আইন, শাসন ও বিচার বিভাগের পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ