- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
সরকার কাঠামো ও সরকারের অঙ্গসমূহ
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ (Application of the theory of separation of power)
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ফ্রান্সের বিপ্লবের সময় এ নীতির সমধিক গুরুত্ব ছিল। আমেরিকার সংবিধানেও সরকারের তিনটি বিভাগকে স্ব-স্ব ক্ষমতা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। আবার, ভার্জিনিয়া ও উত্তর ক্যারোলিনা রাজ্যের সংবিধানে সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি নীতিগতভাবে স্বীকার করা হয়। তবে বর্তমানে এ নীতির প্রয়োগ পুরোপুরি দৃষ্ট হয় না; কোথাও কোথাও আংশিক প্রয়োগ লক্ষ করা যায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রচলিত। মার্কিন সংবিধানের আইন, শাসন ও বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা পৃথক করে দেওয়া হলেও প্রকৃত প্রস্তাবে শাসন বিভাগ অনেক সময় বিভাগ বহির্ভূত অনেক কাজ করে থাকে। আবার মার্কিন রাষ্ট্রপতি আইন প্রণয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন। তিনি যে কোনো বিলে 'Veto' প্রয়োগ করে আইনটি বাতিল করতে পারেন। অনেক সময় Congress ও President একই দলভুক্ত হলে President কংগ্রেসকে প্রভাবিত করে প্রয়োজনীয় আইন পাস করিয়ে নিতে পারেন।
রেডিও, টেলিভিশন এবং জাতীয় প্রচার মাধ্যমগুলোতে বক্তৃতা, বিবৃতি দিয়ে জনমত সৃষ্টির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি কংগ্রেস দ্বারা আইন পাস করাতে পারেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দান করলে তা কংগ্রেস কর্তৃক অনুমোদিত হতে হয়। সন্ধি, চুক্তি বা যুদ্ধ ঘোষণা করতেও কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন। রাষ্ট্রপতি শাসন বিভাগের প্রধান হওয়া সত্ত্বেও বিচারসংক্রান্ত কাজ করে থাকেন। যেমন- তিনি বিচারকদের নিয়োগ দান করেন। আবার সুপ্রিমকোর্ট কংগ্রেস প্রণীত আইনকে বাতিল করতে পারে। এমনকি কোনো বিশেষ প্রয়োজনে বিচার বিভাগ নতুন আইন তৈরি করে বিচার কাজ পরিচালনা করতে পারে। অতএব একথা সুস্পষ্ট যে, মার্কিন সংবিধানে সরকারের তিনটি বিভাগের ক্ষমতার সীমারেখা নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও এক বিভাগ অন্য বিভাগের অনেক কাজ করে থাকে।
ব্রিটেনে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ: ব্রিটেনে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রচলিত। সেখানে মন্ত্রিগণ শুধু প্রশাসনিক প্রধানই নন তারা আইন প্রণয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। অনেক সময় ক্যাবিনেট মন্ত্রিগণ নিজ দলীয় সদস্যদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করে নিতে পারেন। আবার, কমন্স সভা শাসন বিভাগের দায়িত্বশীলতা ও স্বৈরাচারিতার অভিযোগ এনে অনাস্থা প্রকাশ করতে পারেন। এজন্য ব্রিটেনসহ অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেখানে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত সেখানে আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সংযোগ বিদ্যমান।
বাংলাদেশ: স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালের সংবিধানের অধীনে বাংলাদেশে সংসদীয় বা মন্ত্রিপরিষদ শাসিত শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে এ নীতি কার্যকর হয়নি। কারণ মন্ত্রিপরিষদ শাসিত ব্যবস্থায় শাসন বিভাগের সদস্য তথা মন্ত্রিগণ আইনপরিষদেরও (জাতীয় সংসদের) সদস্য। এখানে শাসন বিভাগ আইন পরিষদের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত থাকে। শাসন বিভাগের সকল কার্যক্রম আইন বিভাগ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়। অর্থাৎ শাসন বিভাগ তথা মন্ত্রিপরিষদের সকল সদস্য তাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের জন্য আইনপরিষদের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকে। এজন্য এ সরকার ব্যবস্থার অপর নাম জবাবদিহিমূলক বা দায়িত্বশীল সরকার। অবশ্য মন্ত্রিপরিষদ যদি আইন পরিষদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে তাদের পদত্যাগ করতে হয়। তবে এ সরকার ব্যবস্থায় বিচার বিভাগ সরকারের অন্যান্য বিভাগ থেকে স্বতন্ত্র, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে।
১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী গৃহীত হওয়ার মাধ্যমে দেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয় এবং এ প্রক্রিয়া চলে ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
এ ব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ ঘটে। রাষ্ট্রপ্রধান তথা রাষ্ট্রপতি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। তিনি আইনসভার সদস্য নন এবং তাঁর কাজের জন্য আইনসভার কাছে দায়ীও নন। তিনি মন্ত্রিসভার সদস্যদের তাঁর পছন্দানুযায়ী আইনসভার বাইরে থেকে নিয়োগ দেন, আবার বরখাস্তও করতে পারেন। মন্ত্রিসভার সদস্যগণ তাদের কাজের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে দায়ী থাকেন। রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্রের সকল নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী। অন্যদিকে, বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হন এবং তাদের অপসারণের ক্ষেত্রেও বিধিবদ্ধ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
সুতরাং রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থায় সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে এ নীতি অনুসৃত হয়। বর্তমানে দেশে সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ায় এ নীতির প্রয়োগ সম্ভব নয় আবার কাম্যও নয়। কারণ এ ব্যবস্থায় আইনসভা ও শাসন বিভাগের মধ্যে সুসম্পর্ক বিদ্যমান। তবে বিচার বিভাগ নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ