• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
সরকার কাঠামো ও সরকারের অঙ্গসমূহ

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

সরকার কাঠামো ও সরকারের অঙ্গসমূহ

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের ভূমিকা Role of Judiciary to Establish Rule of Law

আইনের শাসন অর্থ আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান। শাসক-শাসিত, ধনী-গরিব, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকলেই আইনের অধীন। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সরকার ক্ষমতা লাভ করে আইন থেকে। অপরাধ ছাড়া কাউকে আটক করা যাবে না, অপরাধীকে বিনা বিচারে আটক রাখা যাবে না। অর্থাৎ যথাসময়ে অপরাধীকে আদালতে সোপর্দ করতে হবে। আইনের সর্বোচ্চ প্রাধান্য স্বীকৃত হবে। আইনের শাসন ছাড়া সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা বিচার বিভাগ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে। ন্যায়বিচারের মাধ্যমে ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষা করা বিচারকের পবিত্র দায়িত্ব। বিচারকগণ বিভিন্ন মামলার নিষ্পত্তি করতে বিচার প্রতিষ্ঠা করে থাকে। ফলে আইনের শাসন কায়েম হওয়ার পথ উন্মুক্ত হয়।

২. মৌলিক অধিকার রক্ষা নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষা করার ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যাতে কারো মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে না পারে সে দিকে বিচার বিভাগ দৃষ্টি রাখে। কারও মৌলিক অধিকার খর্ব হলে বিচার বিভাগ কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এভাবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে বিচার বিভাগ দায়িত্ব পালন করে।

৩. ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষা ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষায় বিচার বিভাগ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। প্রত্যেক ব্যক্তি যাতে তার চিন্তা, কর্ম, চলাফেরা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত না হয়, বিচার বিভাগ তা নিশ্চিত করে আইনের শাসন রক্ষা করে।

৪. দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন: বিচার বিভাগ সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে নিরপরাধ ব্যক্তিকে মুক্তি দেয় এবং অপরাধীকে শাস্তি প্রদান করে। এভাবে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের মাধ্যমে নিরপরাধ ব্যক্তির প্রতি সুবিচার করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে।

৫. আইন-বিভাগ ও শাসন বিভাগের স্বেচ্ছাচারিতা রোধ বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের স্বেচ্ছাচারিতা রোধে ভূমিকা পালন করে থাকে। আইন বিভাগ প্রণীত আইন এবং শাসন বিভাগের নীতি বিচার বিভাগ বিচার-বিশ্লেষণ করে এবং প্রয়োজনবোধে বাতিল করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে।

৬. সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা: আইনের চোখে সকলের অধিকার সমান বিচার বিভাগ এ নীতি প্রতিষ্ঠা করে। প্রত্যেক মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিশেষ করে বিচার বিভাগের কাছ থেকে সকল ব্যক্তি আইনের সকল বিষয়ে সমান অধিকার ও মর্যাদা লাভ করে।

৭. সংবিধান রক্ষা করা সংবিধান রক্ষার ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের ভূমিকা অপরিসীম। বিচার বিভাগ সংবিধানের রক্ষক ও অভিভাবক হিসেবে কাজ করে। বিচার বিভাগের কার্যকর ভূমিকা ছাড়া সংবিধান রক্ষা করা সম্ভব নয়। সংবিধান রক্ষার মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগ জনগণের অধিকার নিশ্চিত করে আইনের শাসন কায়েম করে।

৮. বিরোধ নিষ্পত্তি: আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বিরোধ দেখা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় কেন্দ্র ও অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। বিচার বিভাগ সাংবিধানিক উপায়ে এসব বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে আইনের শাসন কায়েম করে।

৯. সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা: জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল মানুষ আইনের চোখে সমান। তাই বিচার বিভাগ সকল নাগরিকের জন্য আইনগত সাম্য প্রতিষ্ঠা করে। সমাজের সকলের জন্য একই ধরনের বিচারের মানদণ্ড নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগ ভূমিকা পালন করে।

১০. শোষণমুক্ত সমাজ গঠন বিচার বিভাগ শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে ভূমিকা পালন করে। বিচার বিভাগ বিচার কার্য সম্পন্ন করার সময় শাসক শ্রেণি এবং সাধারণ জনগণ উভয়ের জন্য একই আইন প্রয়োগ করে। সবার জন্য একই আইন প্রযোজ্য হওয়ায় শোষণমুক্ত সমাজ গঠনে সহায়ক হয়।

তাই আমরা উপরিউক্ত আলোচনার আলোকে নিঃসন্দেহে বলতে পারি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের ভূমিকা অপরিসীম। আইনের শাসনের সাথে অধিকার, সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ক রয়েছে। বিচার বিভাগ নাগরিক অধিকারের রক্ষক, আইনের ব্যাখ্যাকারক, আইনের উপযোগিতা নির্ধারক, সংবিধানের অভিভাবক ও রক্ষক, সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ