- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
সরকার কাঠামো ও সরকারের অঙ্গসমূহ
বিচার বিভাগের ক্ষমতা ও কার্যাবলি (Power and Functions of the Judiciary)
যদিও বিচার বিভাগের মুখ্য কাজ আইনকে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা, তবে আইনের প্রয়োগ ছাড়াও বিচার বিভাগ নিম্নে বর্ণিত কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে:
১. বিচার সংক্রান্ত কাজ ন্যায়বিচারের মাধ্যমে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনই বিচার বিভাগের প্রধান কাজ। বিচার বিভাগ দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী অপরাধীর বিচার করে থাকে। আদালতে মামলার বাদী-বিবাদীর সাক্ষ্য গ্রহণের পর আইন অনুযায়ী বিচারক রায় ঘোষণা করেন।
২. আইনের ব্যাখ্যা ও প্রয়োগ: বিচার বিভাগের প্রধান দায়িত্ব হলো দেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘনকারীর আইনানুসারে বিচার এবং অপরাধীর যথাযথ শাস্তি বিধান করা। অর্থাৎ আইনের ব্যাখ্যা ও সঠিক প্রয়োগই বিচার বিভাগের প্রধান কাজ। বিচার বিভাগ আইনের ভাষাগত দুর্বোধ্যতা ও অস্পষ্টতা দূর করে আইনের প্রয়োগকে সহজ করে।
৩. আইন প্রণয়নমূলক কাজ শুধু আইনের ব্যাখ্যা নয়, বিচার বিভাগ নতুন আইন সৃষ্টির ক্ষমতাও রাখে। আদালতে যেসব মামলা দায়ের করা হয় সেগুলোর মীমাংসা সর্বক্ষেত্রে প্রচলিত আইনে সম্ভব হয় না। অনেক সময় দেখা যায় কোনো বিশেষ বিবাদের বিচারের ব্যাপারে কোনো সূত্র বা স্পষ্ট নির্দেশ প্রচলিত আইনের মধ্যে নেই। এরূপ ক্ষেত্রে বিচারকগণ ব্যক্তিগত বিবেকবুদ্ধি, স্বাভাবিক ন্যায়নীতি, সুবিচার প্রভৃতির ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং বিচারকার্য সম্পাদন করেন।
৪. নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষা সংক্রান্ত কাজ বিচার বিভাগ নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার অন্যতম রক্ষাকবচ। বিনা অপরাধে গ্রেফতার, বিনা বিচারে আটক, সরকারি বেআইনী কাজের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগ রিট অব হেবিয়াস করপাস, রিট অব ম্যান্ডেমাস, কো-ওয়া-রেন্টো এবং ইনজাংশন বা নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি আদেশপত্র জারি করে। এভাবে নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষা করা হয়ে থাকে।
৫. ক্ষতি রোধ করা: আদালত ব্যক্তির ক্ষতি রোধের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি আদালতের শরণাপন্ন হয়ে সুবিচার লাভ করতে পারেন। কারণ আদালত ন্যায়বিচার প্রাপ্তির সর্বশেষ আশ্রয়।
৬. শাসন বিভাগকে পরামর্শ দান: কোনো কোনো দেশে বিচার বিভাগ শাসন বিভাগকে পরামর্শ দিয়ে থাকে। যেমন-বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি প্রয়োজন মনে করলে কোনো আইন বা তথ্য সংক্রান্ত বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ চাইতে পারেন এবং সুপ্রিম কোর্ট সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তার মতামত রাষ্ট্রপতিকে জানায়।
৭. সাংবিধানিক প্রাধান্য রক্ষা: যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় বিচার বিভাগ সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় সর্বোচ্চ আদালত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন- কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে কোনো বিষয়ে বিরোধ দেখা দিলে সংবিধানের ব্যাখ্যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত তার মীমাংসা করে। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এরূপ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৮. বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা: বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা বিচার বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এই ক্ষমতাবলে বিচার বিভাগ সংবিধান পরিপন্থী যেকোনো আইন বাতিল ঘোষণা করতে পারে। আইনসভা যদি এমন কোনো আইন পাস করে যা সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় কিংবা শাসন বিভাগ যদি এমন কোনো আদেশ জারি করে যা সংবিধান পরিপন্থী তাহলে বিচার বিভাগ উক্ত আইন বা আদেশের যে অংশটুকু সংবিধানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সেই অংশটুকু বাতিল করতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট এই Judicial Review ক্ষমতার অধিকারী।
৯. তদন্তসংক্রান্ত: আধুনিক রাষ্ট্রগুলোতে বিচার বিভাগ নিরপেক্ষতা ও সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা ও আস্থার প্রেক্ষিতে গুরুতর অন্যায় ও দুর্ঘটনার তদন্ত পরিচালনা করে। সরকারি উদ্যোগে অথবা কোনো পক্ষের দাবির প্রেক্ষিতে নিরপেক্ষ তদন্তের ভার বিচারপতিদের ওপর অর্পিত হয়।
১০. বিচার বিভাগীয় পদ্ধতি কার্যকরী করা আদালত তাদের নিজস্ব কর্মপন্থা ও নীতিমালা নির্ধারণ করে থাকে। আদালত তাদের নিজস্ব নীতিমালা ও আদেশ কার্যকরী করার বিবিধ উপায় অবলম্বন করে থাকে।
১১. প্রশাসনিক কাজ বিচার বিভাগ দেশের আদালতের জন্য নীতিমালা নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এছাড়া অন্যান্য আদালতের বিচারকার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
১২. অন্যান্য: উপর্যুক্ত কার্য ছাড়াও বিচার বিভাগ শাসন বিভাগীয় কিছু কিছু দায়িত্ব, যেমন- অভিভাবক নিয়োগ, কোনো সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়ক বা অছি নিয়োগ, মৃত ব্যক্তির উইল অনুমোদন, লাইসেন্স প্রদান, দেউলিয়া প্রতিষ্ঠানের পক্ষে আদায়কারী নিয়োগ ইত্যাদি কার্য সম্পাদন করে থাকে।
পরিশেষে বলা যায় যে, বিচার বিভাগ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। বিচার বিভাগ দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষ ভূমিকার ওপর নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা অনেকাংশে নির্ভরশীল। এজন্য সুবিচার প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের কোনো বিকল্প নেই।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ