- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
সরকার কাঠামো ও সরকারের অঙ্গসমূহ
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
সরকার কাঠামো ও সরকারের অঙ্গসমূহ
একনায়কতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Dictatorship)
প্রবর্তিত একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা একজন মাত্র ব্যক্তির দ্বারা প্রবর্তিত হয়। এ শাসনব্যবস্থা গণতন্ত্রবিরোধী শাসনব্যবস্থা। নিম্নে একনায়কতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো:
১. এক ব্যক্তির শাসন একনায়কতন্ত্রে এক ব্যক্তির হাতে রাষ্ট্রের সমস্ত কর্তৃত্ব ন্যস্ত থাকে। এখানে সমস্ত ক্ষমতার উৎস একনায়ক। একনায়ক তার কাজের জন্য কারও নিকট জবাবদিহি করেন না।
২. একদলীয় শাসন একনায়কতন্ত্রের শাসনব্যবস্থা একটিমাত্র রাজনৈতিক দলকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। সে কারণে একনায়কতন্ত্রে একটিমাত্র রাজনৈতিক দল থাকে। সে দল হচ্ছে একনায়কের নিজস্ব দল।
৩. শক্তি প্রয়োগে বিশ্বাসী: একনায়কগণ যুক্তির জোর অপেক্ষা শক্তি প্রয়োগে বিশ্বাসী। এখানে সরকার শক্তি প্রয়োগ করে সকল বিরোধী দল ও মত নির্মমভাবে দমন করে। এজন্য একনায়কগণ বিশেষ বাহিনী বা গুপ্ত পুলিশ বাহিনী গঠন করে থাকে।
৪. প্রহসনমূলক আইনসভা: একনায়কতন্ত্রের একটি প্রহসনমূলক আইনসভা থাকে। মূলত এটি নামমাত্র আইনসভা। এই আইনসভার একমাত্র লক্ষ্য হলো একনায়কের ইচ্ছার অনুকূলে আইন প্রণয়ন করা এবং সর্বক্ষেত্রে তাকে সমর্থন দান করা।
৫. প্রচারযন্ত্রের একচেটিয়া ব্যবহার একনায়কতন্ত্রে সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন প্রভৃতি প্রচারযন্ত্রের ওপর কড়াকড়িভাবে সরকারি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। ফলে এখানকার সব বিভাগে শুধু একনায়কের জয়গান গাওয়া হয়। এভাবে একনায়কগণ রাষ্ট্রীয় প্রচারযন্ত্রকে পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করে।
৬. ব্যক্তিস্বাধীনতা ও গণতন্ত্র বিরোধী একনায়কতন্ত্র ব্যক্তিস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের বিরোধী শাসনব্যবস্থা। কেননা একনায়কতন্ত্রের নীতি হলো "ব্যক্তির জন্য রাষ্ট্র নয়, রাষ্ট্রের জন্যই ব্যক্তি।" অর্থাৎ একনায়কতন্ত্র ব্যক্তি স্বাধীনতার পরিবর্তে ব্যক্তি পূজা ও রাষ্ট্রের পূজাকে উৎসাহিত করে।
৭. বিশেষ আদর্শের প্রতি আস্থা একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা একটি বিশেষ আদর্শের প্রতি বিশ্বাসী হয়। এখানে একনায়ক যে আদর্শে বিশ্বাস করেন, সরকারি প্রচারযন্ত্রে শুধু তারই জয়গান গাওয়া হয়। ফলে এরূপ বিশ্বাস বা আদর্শের বিরোধীদেরকে নির্মমভাবে দমন ও নির্মূল করা হয়।
৮. উগ্র জাতীয়তাবাদী একনায়কতন্ত্র উগ্র জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। একনায়কতন্ত্রের মূলমন্ত্র হলো 'এক জাতি, এক নেতা, এক দেশ'। হিটলার মনে করতেন, "জার্মান জাতি সর্বশ্রেষ্ঠ। সুতরাং তাদের পৃথিবীকে শাসন করার অধিকার রয়েছে।"
৯. সর্বাত্মকবাদী: একনায়কতন্ত্র হলো সর্বাত্মকবাদী শাসনব্যবস্থা। মুসোলিনীর ফ্যাসিবাদের স্লোগান ছিল "সব কিছুই রাষ্ট্রের মধ্যে, রাষ্ট্রের বাইরে কিছু নয়, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও কিছু থাকতে পারে না।" (All within the state, none outside the state, none against the state.) একনায়কতন্ত্রে রাষ্ট্র একটি সর্বাত্মক প্রতিষ্ঠান। ব্যক্তি ও সমাজের সকল দিক রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত।
১০. যুদ্ধবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী একনায়কতন্ত্র যুদ্ধপ্রিয় এবং সাম্রাজ্যবাদী শাসনব্যবস্থা। কারণ একনায়কগণ শান্তিতে বিশ্বাস করে না। তারা যুদ্ধকে অপরিহার্য মনে করে। তাই মুসোলিনী বলেন, "নারীর নিকট মাতৃত্ব যেমন অপরিহার্য, পুরুষের নিকট যুদ্ধও তেমনি অপরিহার্য।"
১১. শাস্তি ও আন্তর্জাতিকতার বিরোধী একনায়কতন্ত্র আন্তর্জাতিকতায় বিশ্বাস করে না এবং শান্তি পছন্দ করে না। এজন্য মুসোলিনী আন্তর্জাতিক শান্তিকে 'ভীরুর স্বপ্ন' বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ