• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
সরকার কাঠামো ও সরকারের অঙ্গসমূহ

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

সরকার কাঠামো ও সরকারের অঙ্গসমূহ

শাসন বিভাগের ক্ষমতা ও কার্যাবলি (Power & Functions of the Executive)

আধুনিককালে প্রায় সব রাষ্ট্রই কম বেশি জনকল্যাণমূলক (Welfare State) হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় রাষ্ট্রের দায়-দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে। সরকারের কার্যের পরিধি বৃদ্ধির সাথে সাথে শাসন বিভাগের কার্যাবলিও বৃদ্ধি পেয়েছে। নিচে শাসন বিভাগের কার্যাবলি তুলে ধরা হলো:

১. শাসন সংক্রান্ত কার্য: সরকারের শাসন্ন বিভাগের শাসন সংক্রান্ত কার্যাবলি ব্যাপক ও বিস্তৃত। শাসন বিভাগের শাসন সংক্রান্ত কার্যাবলির মধ্যে অন্যতম হলো:

(ক) প্রশাসনিক নীতিনির্ধারণ এবং প্রশাসন পরিচালনা।

(খ) আইনের প্রয়োগ।

(গ) রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে নিয়োগ এবং যৌক্তিক কারণে অপসারণ।

(ঘ) সামরিক ক্ষমতা।

(ঙ) বৈদেশিক নীতিনির্ধারণ ও অন্য দেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপন।

(চ) জরুরি অবস্থা ঘোষণা ইত্যাদি।

সরকারের চূড়ান্ত নীতি নির্ধারণের ক্ষমতা শাসন বিভাগের হাতে ন্যস্ত। তাছাড়া আইন বলবৎকরণ শাসন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ সম্পর্কে আমেরিকার শাসনতন্ত্রে উল্লেখ আছে- "To take-care that the laws are faithfully executed." অর্থাৎ, নীতি নির্ধারণ ও বলবৎকরণের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা আনয়ন করাই শাসন বিভাগের মুখ্য কাজ।

২. পররাষ্ট্র সংক্রান্ত কার্য বর্তমান যুগ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সহাবস্থানের যুগ। প্রত্যেক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রই পরস্পর পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে আন্তঃরাষ্ট্র সম্পর্ক এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এসব গুরুদায়িত্ব সম্পাদন শাসন বিভাগের জন্য অপরিহার্যরূপে প্রতিপন্ন হয়। বৈদেশিক নীতিনির্ধারণ করা এবং অন্য দেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা, বিদেশের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে চুক্তি স্থাপন প্রভৃতি শাসন বিভাগের কাজ। শাসন বিভাগ এক্ষেত্রে পররাষ্ট্র বিষয়ক দপ্তর/মন্ত্রণালয় গড়ে তুলে। অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদন, কূটনৈতিক মিশন প্রেরণ, বৈদেশিক নীতিনির্ধারণ, অন্য রাষ্ট্রে দূত প্রেরণ এবং অন্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের গ্রহণ প্রভৃতি দায়িত্ব শাসন বিভাগকে পালন করতে হয়।

৩. প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত দেশের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কাজ শাসন বিভাগকে সম্পাদন করতে হয়। দেশকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষার জন্য শাসন বিভাগ স্থল, বিমান, নৌবাহিনী গঠন এবং অন্যান্য সামরিক কর্মচারী নিয়োগ করে। সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক (Commander-in-chief) হিসেবে রাষ্ট্রপ্রধান সৈন্যবাহিনীর গঠন, পরিচালনা, যুদ্ধ পরিচালনার বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ এবং দেশরক্ষার প্রয়োজনে বেসামরিক শক্তিকে কাজে লাগানো প্রভৃতি কার্য সম্পাদন করেন। তিনি তিন বাহিনীর প্রধানদের নিয়োগ ও পদচ্যুত করতে পারেন। তিনি যুদ্ধ ঘোষণা ও পরিচালনা করতে পারেন। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপ্রধান প্রয়োজন-বিশেষে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। 

৪. আইনসংক্রান্ত কার্য: শাসন বিভাগ আইন প্রণয়নসংক্রান্ত কাজও করে থাকে। আইনসভায় রাষ্ট্রপতির বাণী প্রেরণ, আইনসভার অধিবেশন আহ্বান, বিলে সম্মতি বা ভেটো (Veto) প্রদান, বিশেষ অধ্যাদেশ (Ordinance) জারি, আইনসভাকে অনুপ্রাণিতকরণ, বিল প্রস্তুতকরণ এবং আইনসভায় উত্থাপন শাসন বিভাগের আইন প্রণয়নসংক্রান্ত কাজ শাসন বিভাগ বিশেষ ক্ষমতাবলে করতে পারে। শাসন বিভাগ By-law বা উপ-আইন প্রণয়ন করে আইনের ফাঁক পূরণ করে। এ প্রক্রিয়ায় আইন প্রণয়নকে 'Delegated Legislation' বলা হয়।

৫. বিচার সংক্রান্ত কার্য: উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শাসন বিভাগ প্রধান আদালতের বিচারকদের নিয়োগ করে থাকে। রাষ্ট্রপ্রধান গুরুতর সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাজা হ্রাস করতে পারেন। অন্যদিকে কর ধার্য, উচ্চপদে নিয়োগ, পদোন্নতি, পদচ্যুতি প্রভৃতি বিষয়ের আপত্তিকর দিকগুলো শাসন বিভাগকেই নিষ্পত্তি করতে হয়। শাসন বিভাগের কর্মচারীদের অন্যায় আচরণ ও দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয়ের বিচারও শাসন বিভাগের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়ে থাকে। এরূপ বিচারকার্যকে শাসন বিভাগীয় বিচার ('Administrative Justice') বলে অভিহিত করা হয়।

৬. নীতি নির্ধারণ সংক্রান্ত কার্য: অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক কার্যাবলি পরিচালনার জন্য সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতি থাকা একান্তই প্রয়োজন। শাসন বিভাগ নীতি নির্ধারণের দায়িত্ব পালন করে থাকে। সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ক্যাবিনেট এ নীতি প্রণয়ন করে থাকে।

৭. অর্থ সংক্রান্ত কার্য: জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের কল্যাণমূলক যাবতীয় কার্য পরিচালনার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়। এ অর্থ সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করে শাসন বিভাগ। সাধারণত কর ধার্য এবং সেবামূলক কার্যাদি সম্পাদনের মাধ্যমে এ অর্থ সংগৃহীত হয়। কর সংগ্রহ ও ব্যয় বরাদ্দ ছাড়াও শাসন বিভাগকে সরকারি কোষাগারের হিসাব পরীক্ষা করতে হয়। তবে কর ধার্য ও ব্যয়ের জন্য আইনসভার অনুমোদন প্রয়োজন হয়।

৮. জনকল্যাণমূলক, কার্য: আধুনিক কল্যাণকামী রাষ্ট্রে জনস্বাস্থ্য, জনশিক্ষা, শিল্প, বাণিজ্য প্রভৃতির উন্নতি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, ফলপ্রসূ অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন প্রভৃতি কল্যাণমূলক কার্য শাসন বিভাগ সম্পাদন করে থাকে।

৯. বহির্বিশ্ব সংক্রান্ত কার্য: বহির্বিশ্বে নিজ দেশকে উপস্থাপন করার দায়িত্ব শাসন বিভাগের ওপর ন্যস্ত। এ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদান, বিশ্বশান্তি রক্ষার অংশ হিসেবে জাতিসংঘ (UNO)-এর শান্তিরক্ষী বাহিনীতে যোগদান, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিজ দেশের প্রতিনিধি প্রেরণ, আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে নিজ দেশের যোগ্য প্রতিনিধি প্রেরণ প্রভৃতি কার্য সরকারের শাসন বিভাগ সম্পাদন করে থাকে।

১০. আইন বলবৎকরণ: আইন বলবৎ করা শাসন বিভাগের মুখ্য কাজ। সব ধরনের সরকারেই শাসন বিভাগ আইনসভা প্রণীত আইনকে সঠিকভাবে বলবৎ করে থাকে। যেমন- আমেরিকার সংবিধানে সরকারের তিনটি বিভাগের ক্ষমতা ও কার্যাবলি পৃথক করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে শাসন বিভাগের কাজ হলো আইনগুলো বিশ্বস্ততার সাথে কার্যকরী করা।

১১. উন্নয়ন সংক্রান্ত: প্রত্যেক সরকারেরই কিছু কিছু উন্নয়ন কর্মসূচি থাকে। জনশিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, শিল্প, বাণিজ্য, ডাক ও তার প্রভৃতির উন্নয়নে শাসন বিভাগ বহুবিধ কার্য সম্পাদন করে।

১২. প্রতীক ও অনুষ্ঠানমূলক অনেক রাষ্ট্রে শাসন বিভাগের প্রধান রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসন অলঙ্কৃত করেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন ও সমাবর্তনে ভাষণ দেন এবং রাষ্ট্রীয় পদক ও উপাধি বিতরণ করেন।

১৩. বিবিধ: এছাড়া শাসন বিভাগ আন্তর্জাতিক মানবতার অংশ হিসেবে অনেক সময় বহির্বিশ্বে দুর্যোগের মুহূর্তে আর্তমানবতার সাহায্যে হস্ত সম্প্রসারণ করে। এ উদ্দেশ্যে শাসন বিভাগ প্রয়োজন অনুযায়ী ত্রাণসামগ্রী প্রেরণ ও চিকিৎসা সহায়তা প্রেরণ করে থাকে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ