• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
সরকার কাঠামো ও সরকারের অঙ্গসমূহ

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

সরকার কাঠামো ও সরকারের অঙ্গসমূহ

“পূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভব নয়, কাম্যও নয়" "Complete Separation of Power is Neither Possible Nor Desirable"

গণতান্ত্রিক সরকারের দক্ষতা বৃদ্ধি ও ব্যক্তিস্বাধীনতা সংরক্ষণের জন্য ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ অপরিহার্য হলেও "ক্ষমতার পূর্ণ স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভব নয়, কাম্যও না" (Complete separation of power is neither possible nor desirable.) কারণ সরকারের বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনগুলো একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এজন্য এক বিভাগের কাজের প্রভাব-প্রতিক্রিয়া অন্য বিভাগের ওপর পড়বেই। সরকারের কার্যাবলির জটিলতার দরুন অনেক সময় এক বিভাগকে অন্য বিভাগের কাজ করতে হয়। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ও মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থায় এ কথা সমভাবে প্রযোজ্য।

প্রথমত, মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থায় সরকারের শাসন বিভাগ তথা মন্ত্রিসভা নির্বাচিত আইন সভার সদস্যদের মধ্য থেকে গঠিত হয়। এখানে প্রত্যেক মন্ত্রী প্রথমত আইন সভার সদস্য, দ্বিতীয়ত শাসন বিভাগ বা মন্ত্রিসভার সদস্য। একই ব্যক্তি আইন বিষয়ক ও শাসন বিষয়ক কার্যের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন। অর্থাৎ আইন ও শাসন বিভাগ একীভূত হয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত, ব্রিটেন প্রভৃতি দেশে মন্ত্রিপরিষদ বা সংসদীয় ব্যবস্থা প্রচলিত বিধায় এসব দেশে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পূর্ণ প্রয়োগ সম্ভব নয়।

দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থায়ও পরিপূর্ণভাবে এ নীতির প্রয়োগ সম্ভব হয় না। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেখানে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রচলিত আছে, সেখানে সংবিধান অনুযায়ী সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করে দেওয়া থাকলেও বাস্তবে তিনটি বিভাগ স্বতন্ত্র নয়। কারণ আইন সভা তথা কংগ্রেস (Congress)-এর ওপর শাসন বিভাগ তথা রাষ্ট্রপতির প্রভাব রয়েছে। আবার বিচারবিভাগ তথা সুপ্রিম কোর্টের বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা ক্ষমতা রয়েছে। অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেস (Congress) যাবতীয় আইন বিষয়ক ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু মার্কিন রাষ্ট্রপতি কংগ্রেস (Congress)-এর আইন বিষয়ক ক্ষমতার অংশীদার। যেমন- মার্কিন কংগ্রেস (Congress) কর্তৃক পাসকৃত যেকোনো বিল (Bill) মার্কিন রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর ছাড়া কার্যকরী হয় না।

এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি বিলটিতে স্বাক্ষর করতে পারেন। অথবা নোটসহ পুনরায় কংগ্রেসে (Congress) পাঠাতে পারেন। আবার রাষ্ট্রপতি কোনো বিলে ভেটো (Veto) ক্ষমতা প্রয়োগ করে বাতিল করতে পারেন। অন্যদিকে মার্কিন রাষ্ট্রপতি কংগ্রেস (Congress)-এর বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করে প্রয়োজনীয় আইন পাস করিয়ে নিতে পারেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, মার্কিন রাষ্ট্রপতি শাসন বিভাগের প্রধান হয়েও আইন বিষয়ক ক্ষমতা প্রয়োগ করছেন।

মার্কিন আইন সভা কংগ্রেস শাসন বিষয়ক ক্ষমতার ওপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। যেমন- রাষ্ট্রপতি বহির্বিশ্বে যে সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন অর্থাৎ আন্তর্জাতিক চুক্তি, সন্ধি, যুদ্ধ ইত্যাদি কংগ্রেস (Congress) কর্তৃক অনুমোদিত হতে হয়। অর্থাৎ এখানে আইনসভা শাসন বিভাগের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে। অন্যদিকে, মার্কিন বিচার বিভাগ আইনসভা ও শাসন বিভাগীয় সিদ্ধান্তের সাংবিধানিক বৈধতা নিরূপণের অধিকারী।

কারণ বিচার বিভাগের রয়েছে 'Judicial Review' তথা বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা ক্ষমতা। এই ক্ষমতা বলে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট আইনসভা কর্তৃক প্রণীত যেকোনো আইনের ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ, আইনের উদ্দেশ্য ইত্যাদি যাচাই করতে পারে। আইনটি যদি সংবিধান পরিপন্থী হয়, কিংবা জনকল্যাণের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হয় অর্থাৎ জনস্বার্থ বিরোধী আইনকে সুপ্রিম কোর্ট অবৈধ ঘোষণা করতে পারে। সে ক্ষেত্রে আইনটি বাতিল হয়ে যাবে।

আবার মার্কিন রাষ্ট্রপতির কার্যাবলির ওপরও সুপ্রিম কোর্ট নজর রাখে। অন্যদিকে মার্কিন রাষ্ট্রপতিও বিচার বিভাগের কার্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। যেমন- বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির মতামতই চূড়ান্ত। কিংবা নতুন আদালত প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি এবং কংগ্রেস (Congress)-এর সম্পৃক্ততা রয়েছে। এভাবে মার্কিন সরকারের তিনটি বিভাগ একটি আরেকটির সাথে সম্পৃক্ত। এক্ষেত্রে তিনটি বিভাগে ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ না হয়ে বরং 'ক্ষমতার ভারসাম্য' ব্যবস্থা (Checks and balance) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ ব্যবস্থায় তিনটি বিভাগ যৌক্তিকভাবে একে অপরের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।

সুতরাং ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুযায়ী আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের সমমর্যাদার কথা বলা হলেও বাস্তবে আইনসভা অধিক মর্যাদার অধিকারী। এজন্য পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভবও নয়, বাঞ্ছনীয়ও নয়। সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে সমঝোতা ও পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যেই সরকারের দক্ষতা নির্ভরশীল। আর এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ নীতির পাশাপাশি ভারসাম্য (Checks and balance) নীতির প্রয়োগ দেখা যায়।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ