• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
সরকার কাঠামো ও সরকারের অঙ্গসমূহ

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

সরকার কাঠামো ও সরকারের অঙ্গসমূহ

শাসন/নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা তা বৃদ্ধির কারণ Causes of Increasing Power of the Executive

শাসন বিভাগ সরকারের আইন বলবৎকারী প্রতিষ্ঠান। অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও বৈদেশিক বিষয়াবলি পরিচালনার ক্ষেত্রে শাসন বিভাগের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আধুনিক সরকার ব্যবস্থায় শাসন বিভাগের ক্ষমতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আইনসভার ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। সব ধরনের সরকারের ক্ষেত্রেই শাসন বিভাগের ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায়। গণতন্ত্রের পীঠস্থান ইংল্যান্ডে শাসন বিভাগের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অনেকেই ক্যাবিনেটের একনায়কতন্ত্রের (Cabinet Dictatorship) অভিযোগ এনেছেন। এছাড়া সাম্প্রতিককালে অনেক দেশে সামরিক ও একনায়কতান্ত্রিক শাসন কায়েম হওয়ায় সেখানে শাসন বিভাগের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কে. সি. হুয়ার (K. C. Wheare)-এর মতে, "Legislatives have declined in certain respects and particularly in power in relation to the executive," দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনসভার ক্ষমতা হ্রাস ও শাসন বিভাগের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিচে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:

১. সদস্যদের অদক্ষতা: গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সাধারণ নির্বাচনে জ্ঞানী-গুণী ও দক্ষ ব্যক্তিত্ব যথেষ্ট সংখ্যায় নির্বাচিত হন না। ফলে আইনসভায় অদক্ষ ও অযোগ্য সদস্যের আগমন ঘটে। আইন প্রণয়নের জন্য যে বিশেষ জ্ঞানের প্রয়োজন তা না থাকায় আইন প্রণয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের মূল দায়িত্ব শাসন বিভাগের ওপর, অর্পিত হয়। আইনের জটিলতা ও টেকনিক্যাল জ্ঞানের অভাবেই আইনসভা এরূপ ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। এতে শাসন বিভাগের ক্ষমতা ও মর্যাদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২. কাজের ব্যাপকতা বর্তমানে প্রায় সব রাষ্ট্রই জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র। জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রের কাজের ব্যাপকতার ফলে আর্থিক দৈন্য, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির চাপ ইত্যাদি কারণে প্রতিটি 'রাষ্ট্রেই নতুন নতুন সমস্যার জন্ম হচ্ছে। এ সমস্যাগুলোর সমাধান আইনসভার পক্ষে দেওয়া' সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে শাসন বিভাগকে বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হয়। সরকারি কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের নেতৃত্ব শাসন বিভাগকেই দিতে হয়।

৩. কল্যাণমূলক কাজ বর্তমানে আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কল্যাণমূলক কাজের প্রায় সিংহভাগ শাসন বিভাগ কর্তৃক সম্পাদিত হচ্ছে। কারণ সমাজকল্যাণমূলক কাজের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে আইনসভা ক্রমবর্ধমান দায়িত্ব পালনে সক্ষম হচ্ছে না। এজন্য শাসন বিভাগই ঐক্যবদ্ধভাবে এ দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া শাসন বিভাগ বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের প্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্রের কর্মপরিধির নানা জটিল সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করে থাকে।

৪. দলীয় শৃঙ্খলা: আধুনিককালে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় কঠোর দলীয় শৃঙ্খলা আইনসভার সদস্যদের সরকারের আজ্ঞাবহ করে তুলছে। সুসংগঠিত দলীয় ব্যবস্থা, কঠোর দলীয় নিয়মানুবর্তিতা প্রভৃতির ভিত্তিতে মন্ত্রিসভা আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন লাভের চেষ্টা করে। আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভকারী দল সরকার গঠন করে। এক্ষেত্রে দলের শীর্ষ ও অভিজ্ঞ নেতৃবৃন্দই মন্ত্রিসভায় স্থান পায়। এজন্য শাসন বিভাগের কোনো নির্দেশই আইনসভার সদস্যরা অমান্য করতে পারে না।

৫. শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে অসুবিধা: গতানুগতিক পন্থায় আইনসভা কর্তৃক শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। কারণ শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করার মতো প্রয়োজনীয় তথ্যাদি আইনসভার কাছে নেই। ফলে শাসন বিভাগের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৬. জরুরি ও সংকটকালীন অবস্থার অনুপযোগী জরুরি ও সংকটকালীন সময়ে বিশেষ করে শাসন বিভাগই গুরুদায়িত্ব পালন করে থাকে। বিশ্বযুদ্ধ, স্নায়ুযুদ্ধ, বিশ্ববাণিজ্য যুদ্ধ এবং অভ্যন্তরীণ, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপের মোকাবিলায় শাসন বিভাগই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। কারণ জাতীয় সংকট ও জরুরি অবস্থায় আইনসভা প্রয়োজনমতো দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

৭. জনমত গঠনের ব্যর্থতা গণতান্ত্রিক শাসন প্রক্রিয়ায় জনমত গঠন ও জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তারে মাইনসভা তেমন ভূমিকা পালন করতে পারে না। বর্তমানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যার বিকাশে আধুনিক গণমাধ্যমের সুবাদে জনগণ রাজনৈতিক শিক্ষা লাভ করছে।

৮. বিশেষ ক্ষমতা প্রসূত আইন জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রে আইনসভার দায়িত্ব ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে আইনসভা প্রয়োজনমতো আইন প্রণয়ন করতে পারে না। এ আইন প্রণয়নের দায়িত্ব অনেক সময় শাসন বিভাগের ওপর অর্পিত হয়। অর্পিত ক্ষমতাবলে প্রণীত আইনকে অর্পিত ক্ষমতা প্রসূত আইন (Delegated legislation) বলে।

৯. অর্ডিন্যান্স জারি: দেশের দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে শাসন বিভাগ জরুরি অবস্থা ঘোষণা তথা অধ্যাদেশ (Ordinance) জারি করতে পারে। এক্ষেত্রে আইনসভার কোনো ভূমিকা নেই বললেই চলে। কেননা, রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিকভাবে এ অধ্যাদেশ (Ordinance) জারি করে থাকেন। S

১০. স্বার্থগোষ্ঠীর প্রাধান্য রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি অনেক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। তাদের কাজ হলো সরকারি নীতিকে প্রভাবিত করে নিজের স্বার্থের অনুকূলে জনমত গঠনপূর্বক জনগণের সমস্যা ও দাবি সরকারের সম্মুখে তুলে ধরে সরকার ও জনগণের মধ্যে সংযোগ সাধন করা। যদিও তত্ত্বগতভাবে আইনসভাই সরকার ও জনগণের মধ্যে সংযোগ সেতু হিসেবে কাজ করে। তবে বর্তমানে চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী সরাসরি সরকারের সাথে সংযোগ রক্ষা করছে। এক্ষেত্রে আইনসভার গুরুত্ব হ্রাস পাচ্ছে।

১১. রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ: সাম্প্রতিককালে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার অজুহাতে সামরিক বাহিনী রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করছে গণতন্ত্রের কবর রচনার মাধ্যমে। সামরিক সরকার ক্ষমতার মসনদে বসে তথাকথিত নির্বাচনের, মাধ্যমে সামরিক শাসনের বৈধতা আনয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এক্ষেত্রে আইনসভার মর্যাদা সর্বতোভাবে ভূলুণ্ঠিত হয়।

১২. আইনসভার স্থায়িত্বের অভাব: গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অনেক সময় আইনসভা তার পূর্ণ মেয়াদ পূরণ করতে ব্যর্থ হয়। কারণ সরকারের একচেটিয়া মনোভাব ও স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এনে বিরোধী দলগুলো সরকার বিরোধী আন্দোলন শুরু করে। ফলে সরকার আইনসভা ভেঙে দিয়ে পুনরায় নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়।

১৩. শাসন বিভাগের ওপর জনগণের আস্থা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে জনগণ এখন আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের কাজের মধ্যে তুলনামূলক বিচার করতে সক্ষম হচ্ছে। শাসন বিভাগ প্রশাসনে জনগণের কল্যাণে কার্যকর ভূমিকা পালন করায় জনগণের সাথে সরাসরি যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে এবং জনগণ শাসন বিভাগের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।

উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে বলা যায় যে, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় শাসন বিভাগ ও আইনসভা দুটোর গুরুত্বই অপরিসীম। এক্ষেত্রে উভয় বিভাগের দক্ষতা বৃদ্ধি পেলে তাদের মধ্যে ব্যবধান হ্রাস পাবে এবং উভয়ের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকবে। সেজন্য প্রয়োজন আইনসভার যোগ্য সদস্য এবং শাসন বিভাগে আরও অধিক দক্ষতা সম্পন্ন প্রশাসক।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ