• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
সরকার কাঠামো ও সরকারের অঙ্গসমূহ

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

সরকার কাঠামো ও সরকারের অঙ্গসমূহ

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ ও ভারসাম্য নীতি Theory of Separation of Power and Balance of Power

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুযায়ী সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে আইন প্রণয়ন, শাসন বিষয়ক এবং বিচারের ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে ভাগ করে দিতে হয় এবং কোনো বিভাগ অন্য বিভাগের ক্ষমতায় কোনোরূপ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এই নীতির পূর্ণ প্রয়োগ করা হলে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ চরম ক্ষমতা পেয়ে স্বৈরাচারী হয়ে উঠবে। কিন্তু বাস্তবে এরূপ পৃথকীকরণ সম্ভব নয়। কারণ সরকারের এক বিভাগের কাজের সাথে অন্য বিভাগের কাজের সম্পর্ক ও সহযোগিতা বিদ্যমান।

কাজেই ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুযায়ী সরকারের কোনো বিভাগ যাতে স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে সে জন্য প্রয়োজন বিভাগগুলোর মধ্যে পারস্পরিক নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য রক্ষা করা। অর্থাৎ সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে পারস্পরিক নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য রক্ষার ব্যবস্থাকে ক্ষমতার ভারসাম্য নীতি বলা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে এরূপ ভারসাম্য নীতি কার্যকর আছে।

স্বৈরতন্ত্রের হাত থেকে গণতন্ত্রের উত্তরণের ক্ষেত্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে সত্য কিন্তু সরকার পরিচালনার বেলায় পরিপূর্ণ স্বতন্ত্রীকরণ কার্যকরী করা সম্ভব নয়। সেজন্য অনেকে মন্তব্য করেছেন যে, "পূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সম্ভব নয়- কাম্যও নয়।" বাস্তবে সম্ভব নয় এ কারণে যে, সরকার একটি একক সত্তা। একে সম্পূর্ণ আলাদাভাবে পরিচালনা করা যায় না। এজন্য বিভাগসমূহের মধ্যে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা থাকা আবশ্যক।

ম্যাকাইভার-এর মতে, মন্টেস্কু যে চরম ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের কথা বলেছেন তা স্বভাবতই অসম্ভব। কাজেই বলা যায়, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি অনুসারে কোনো সরকারই সুস্পষ্টভাবে পরিচালিত হতে পারে না। কেননা প্রত্যেকটা বিভাগ পারস্পরিক সম্পর্কের বেড়াজালে আবদ্ধ। একটি বিভাগ অন্য বিভাগ থেকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করলে সরকারের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য সাধিত হবে না। ফলে সরকারের এ তিনটি বিভাগের মধ্যে সমন্বয় রেখে পরস্পরের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাপূর্বক রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থায় ভারসাম্য রক্ষা করা বাঞ্ছনীয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থায় এ উদ্দেশ্যে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতির প্রয়োগ লক্ষ করা যায়।

এখানে শাসন বিভাগের প্রধান রাষ্ট্রপতি আইন বিভাগ কর্তৃক প্রণীত আইনে সম্মতি দিয়ে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে আইন সভা কংগ্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। অন্যদিকে, আমেরিকার আইনসভা কংগ্রেস ও শাসন বিভাগের প্রধান রাষ্ট্রপতি কর্তৃক উচ্চপদস্থ কর্মচারী নিয়োগ এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সম্পাদিত চুক্তি অনুমোদন দান করে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করে। আবার আইন বিভাগ কর্তৃক প্রণীত আইন সংবিধানবিরোধী হলে বিচার বিভাগ তা পর্যালোচনা করে বাতিল করতে পারে। আমেরিকার বিচারকগণও শাসন বিভাগ কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হন।

এভাবে দেখা যায়, আমেরিকার শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতি কার্যকর হয়ে আসছে। ক্ষমতা কেন্দ্রীভূতকরণের ফলে সরকার যে সীমাহীন ক্ষমতা ভোগ করে এবং স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠার সুযোগ পায় এ নীতি তারই বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠ। ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের অস্ত্র হিসেবে ভারসাম্য নীতির প্রবর্তন মূলত ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিরই ফসল। এটা স্বাধীনতা সংরক্ষণের জন্য নাগরিক চেতনা বিকাশের অপরিহার্য শর্ত। 

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ