- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
সরকার কাঠামো ও সরকারের অঙ্গসমূহ
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
সরকার কাঠামো ও সরকারের অঙ্গসমূহ
গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের তুলনামূলক আলোচনা (Comparative Study Between Democracy and Dictatorship)
গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী শাসনব্যবস্থা। এ শাসনব্যবস্থায় উভয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। নিম্নে গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের মধ্যকার পার্থক্যগুলো আলোচনা করা হলো:
১. স্থায়িত্ব: গণতন্ত্র হলো স্থায়ী শাসনব্যবস্থা। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শাসক বা সরকারের পতন ঘটলেও শাসনব্যবস্থা ও সরকারব্যবস্থা অপরিবর্তিত থাকে। কিন্তু একনায়কতন্ত্র হলো অস্থায়ী শাসনব্যবস্থা। এখানে শাসক বা একনায়ক ক্ষমতাচ্যুত হলে একনায়কতান্ত্রিক শাসনেরও পতন ঘটে।
২. শান্তি, যুদ্ধ ও জাতীয়তাবাদ গণতন্ত্র শান্তিতে বিশ্বাসী। গণতন্ত্রের লক্ষ্য হলো মানুষে মানুষে এবং জাতিতে জাতিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা। কিন্তু একনায়কতন্ত্র উগ্র জাতীয়তাবাদ ও যুদ্ধবাদে বিশ্বাসী। এজন্য জার্মান একনায়ক হিটলার সব সময় বলতেন, "যুদ্ধই জীবন, যুদ্ধই সর্বজনীন।" ইতালির একনায়ক মুসোলিনী বলতেন, "এককালীন শান্তি সম্ভবও নয়, সংগতও নয়।"
৩. শাসকের সংখ্যা গণতন্ত্র হলো জনগণের শাসন। এখানে অসংখ্য শাসক থাকে। কিন্তু একনায়কতন্ত্র হলো এক ব্যক্তি বা এক দলের শাসন। এখানে সকল ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে কুক্ষিগত থাকে।
৪. সম্মতি গণতন্ত্র জনগণের সম্মতির উপর প্রতিষ্ঠিত শাসনব্যবস্থা। গণতন্ত্রে আলাপ-আলোচনা ও যুক্তি-তর্কের মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক পথে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে রাষ্ট্রীয় শক্তি ও কর্তৃত্বের বলে একনায়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা প্রয়োগ করে থাকে। এ জন্যই অধ্যাপক হার্নশ বলেন, "গণতন্ত্রে যুক্তির জোরকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়, কিন্তু একনায়কতন্ত্রে জোরের বা শক্তির যুক্তিই প্রাধান্য লাভ করে।"
৫. নেতৃত্ব: গণতন্ত্র যৌথ নেতৃত্বে বিশ্বাসী। এজন্য গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় যৌথ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে এক ব্যক্তির নেতৃত্বকেই প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
৬. ক্ষমতার উৎস গণতন্ত্রে ক্ষমতার উৎস জনগণ। জনগণের রায়ে বা ভোটে নির্বাচিত সরকার গণতন্ত্রে রাষ্ট্রীয় শাসনভার গ্রহণ করে। কিন্তু একনায়কতন্ত্রের ক্ষমতার উৎস এক ব্যক্তি বা একটি দলীয় চক্র।
৭. ব্যক্তি স্বাধীনতা: ব্যক্তি স্বাধীনতা গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র। গণতন্ত্র ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী। কিন্তু অন্যদিকে একনায়কতন্ত্র ব্যক্তি স্বাধীনতা বিরোধী। এজন্য একনায়কতন্ত্রে মুক্ত বুদ্ধি ও বিবেক স্বাধীনভাবে প্রকাশিত হয় না।
৮. সর্বাত্মকবাদ: গণতন্ত্র সর্বাত্মকবাদকে ঘৃণা করে। কেননা গণতন্ত্রে ব্যক্তিই মুখ্য, রাষ্ট্র গৌণ। কিন্তু একনায়কতন্ত্র সর্বাত্মকবাদ প্রশ্রয় দেয়। এজন্য একনায়কতন্ত্রে ব্যক্তি গৌণ, রাষ্ট্রই মুখ্য। "সবকিছুই রাষ্ট্রের জন্য, কোনো কিছুই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বা বাইরে নয়"- এরূপ চরম ও সর্বাত্মক ধারণাই একনায়কতন্ত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
৯. আইনসভার ক্ষমতা ও মর্যাদা গণতন্ত্রে আইনসভা সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। এ কারণে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় আইনসভার নিকট শাসন বিভাগকে তার কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হয়। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে আইনসভা নামমাত্র ক্ষমতার অধিকারী। এ কারণে একনায়কতন্ত্রে আইনসভা একটি প্রহসনমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।
১০. আইনের শাসন গণতন্ত্রে আইনের শাসন এক অপরিহার্য বিষয়। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয়। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে আইনের শাসনে বিশ্বাস করে না।
১১. ব্যক্তির ভূমিকা ও স্থান: গণতন্ত্রে ব্যক্তির প্রাধান্যই প্রবল। গণতন্ত্রে ব্যক্তির সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা হয়। অন্যদিকে একনায়কতন্ত্রে রাষ্ট্রই চরম ও চূড়ান্ত। ব্যক্তির ভূমিকা সেখানে গৌণ।
১২. বিরোধী দলের অবস্থান গণতন্ত্রে সাফল্যের জন্য বিরোধীদলকে প্রয়োজনীয় মনে করে তাদের মতামতকে মূল্যায়ন করা হয়। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে বিরোধীদল ও তাদের মতামতকে মূল্যায়ন করা হয় না।
১৩. প্রচার মাধ্যমের স্বাধীনতা: গণতন্ত্রে প্রচার মাধ্যমগুলো স্বাধীন ও মুক্ত থাকে। এগুলোর উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ খুব অল্প পরিমাণই লক্ষ করা যায়। কিন্তু একনায়কতন্ত্রে প্রচার মাধ্যমগুলোর ওপর ক্ষমতাসীন সরকারের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ