- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
সরকার কাঠামো ও সরকারের অঙ্গসমূহ
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার উপায় Methods of Securing the Independence of the Judiciary
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সর্বোপরি সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে সকল পন্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন তা নিচে আলোকপাত করা হলো:
১. বিচারকদের যোগ্যতা: বিচারকার্য সুচারুরূপে সম্পাদনের জন্য উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন বিচারক প্রয়োজন। দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে অবস্থান করে সৎ সাহসী ও অভিজ্ঞ আইনবিদদের বিচারক পদে নিয়োগ প্রদান করলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে প্রার্থীদের গুণগত দিক এবং চারিত্রিক দৃঢ়তার বিষয়টি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বিবেচনা করতে হবে। বিচারকগণ যদি সৎ, বিজ্ঞ, বিচক্ষণ ও নির্ভীক হন তাহলে সমাজে ন্যায়বিচারের আশা করা যায়। অযোগ্য ব্যক্তিদের বিচারক পদে নিয়োগ দিলে পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনা থেকে যায়।
২. বিচারকদের নিয়োগ পদ্ধতি বিচারক নিয়োগ পদ্ধতি এমন হওয়া উচিত যেন তারা শাসন বিভাগ বা অন্য কারো উপর নির্ভরশীল না হন। এটা স্বাভাবিক যে কোনো কর্মচারী তার নিয়োগকর্তার নিকট কিছুটা দুর্বল থাকে। এজন্য বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছুটা নিরপেক্ষ নীতি অবলম্বন প্রয়োজন। বিচারকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনটি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। যথা:
(ক) জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচন,
(খ) আইনসভা কর্তৃক মনোনয়ন এবং
(গ) শাসন বিভাগ কর্তৃক নিয়োগ।
তবে শাসন বিভাগ কর্তৃক বিচারকদের নিয়োগই সর্বোৎকৃষ্ট বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।
৩. বিচারকদের কার্যকাল: বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা রক্ষার জন্য বিচারকদের চাকরির মেয়াদ সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে এবং তাদেরকে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য নিয়োগ দান করতে হবে। বিচারকগণ স্বল্পসময়ের জন্য নিযুক্ত হলে তাদের পক্ষে মুক্ত মন নিয়ে বিচারকার্য সম্পাদন করা সম্ভব নয়। বিচারকদের কার্যকাল স্থায়ী হলে তারা নির্ভীক ও নিরপেক্ষভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন।
৪. বিচারকদের অপসারণ: বিচারকদের অপসারণ পদ্ধতির ওপর বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বহুলাংশে নির্ভর করে। অকারণে বা অযৌক্তিকভাবে কিংবা রাজনৈতিক কারণে অপসারণের আশঙ্কা থাকলে তাদের দ্বারা ন্যায়বিচার সম্ভব হয় না। এজন্য কোনো বিচারককে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া যেন অপসারণ না করা হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্য, দুর্নীতি, গুরুতর অসদাচারণ ও সংবিধান লঙ্ঘনের মতো মারাত্মক অপরাধ প্রমাণিত হলেই তাদেরকে অপসারণ করা যাবে- অন্যথায় নয়। বিচারকদের অপসারণের জন্য বিশেষ পদ্ধতির অনুসরণ প্রয়োজন।
৫. বিচারকদের উচ্চ বেতন-ভাতা বিচারকদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য তাদেরকে আকর্ষণীয় বেতন ও ভাতা দিতে হবে। কারণ স্বল্প বেতনভোগী বিচারকদের দুর্নীতিপরায়ণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাদের জন্য উত্তম বাসস্থানের ব্যবস্থা এবং উচ্চতর সামাজিক পদমর্যাদা প্রদান করতে হবে। দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের বিচারক পদে উৎসাহিত করার জন্য আকর্ষণীয় বেতন-ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে।
৬. পদোন্নতি: বিচারকদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও কাজের মানসিকতা সৃষ্টির জন্য পদোন্নতির ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। সাধারণত জ্যেষ্ঠতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে পদোন্নতির উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে। উচ্চ বিচারক পদ শূন্য হলে সুপ্রিম জুডিশিয়ারি কমিটির বিবেচনাপূর্বক বিচার মন্ত্রীর নিকট বিচারকদের তালিকা পেশ এবং পদোন্নতি দেওয়া যেতে পারে।
৭. বিচারকদের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মনে করেন বিচারকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও শ্রেণি চেতনার ওপর বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা নির্ভরশীল। বিচারকদের সামাজিক ও পারিবারিক অবস্থান, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক চেতনা, বিচার বিভাগ ইত্যাদির ছাপ তাদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর পড়ে।
৮. বিচার বিভাগের স্বতন্ত্রীকরণ: বিচারকদের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য বিচার বিভাগকে আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগ থেকে পৃথক রাখা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে শাসন বিভাগ ও বিচারবিভাগের কার্যের পরিধি নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। অন্যথায়, বিচার বিভাগ কোনোক্রমেই ব্যক্তিস্বাধীনতার রক্ষক হিসেবে স্বাধীনভাবে কার্য সম্পাদন করতে পারবে না।
৯. প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উইলোবীর অভিমত: বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য তিনি কয়েকটি সুপারিশ করেছেন:
(ক) অপরাধীদের আদালতে হাজির করার জন্য বিচারকদের অধিকার দিতে হবে।
(খ) সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিদেরও হাজির করার ক্ষমতা দিতে হবে এবং আদালতের গুরুত্ব জনসম্মুখে তুলে ধরতে হবে।
(গ) আদালতের রায়কে কার্যকর করার ক্ষমতা বিচারকদের দিতে হবে।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, নির্দেশিত পদ্ধতিগুলো পুরোপুরি অনুসরণ করলে বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত রাখা সম্ভব। বিচারকদের স্বাধীনতা নির্ভর করে তাদের চারিত্রিক দৃঢ়তা, মনোবল, নিরপেক্ষতা ও দৃঢ় মনোভাবের ওপর। বিচারপতিদের উন্নত মূল্যবোধ সম্পন্ন হতে হবে যাতে জনগণের মনে কোনো নেতিবাচক ধারণা না জন্মে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ