- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
ব্রিটিশ ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল
ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের পটভূমি
বণিকদের আগমন ঘটে। পর্তুগিজ ও ওলন্দাজদের বাণিজ্যিক সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে ইংরেজরা এ উপমহাদেশে ব্যবসায়-বাণিজ্য করার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। এ উদ্দেশ্যে ১৫৯৯ সালে ইংল্যান্ডের ১০০ জন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মার্চেন্ট এডভেনটেস (Marchant Adventures) নামক একটি বণিক সংঘ গঠন করে। এ সংঘটি প্রাচ্যের সঙ্গে ব্যবসায়-বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথের নিকট সনদ প্রার্থনা করে। ১৬০০ সালে এ বণিক সংঘটি সনদ প্রাপ্তির পর ২১৮ জন সদস্য নিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (East India Company) নামে একটি বণিক সংঘ গঠন করে। ১ জন শাসনকর্তা এবং ২৪ জন সদস্যের দ্বারা এ কোম্পানির কার্যকরী পরিচালনা পরিষদ গঠিত হয়।
১৬০১ সালে ব্রিটিশ বণিকগোষ্ঠী হিসেবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (East India Company) ভারতবর্ষে প্রবেশ করে। ১৬১৩ সালে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর এক ফরমানের মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সুরাটে প্রথম বাণিজ্য কুঠি স্থাপনের অনুমতি প্রদান করেন। পর্যায়ক্রমে তারা মুসলিপট্টম, বালেশ্বর, হুগলি এবং কাশিম বাজারে কুঠি স্থাপন করে। ১৬৫১ সালে বাংলার সুবেদার শাহ সুজা মাত্র ৩,০০০ টাকা করের বিনিময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বাংলায় বিনা শুল্কে বাণিজ্যের অধিকার প্রদান করেন। কিন্তু সুবেদার শায়েস্তা খানের নিকট হুগলি নদীর মোহনায় নৌ-ঘাঁটি স্থাপনের আবেদন করে ব্যর্থ হলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৬৮৬ সালে হুগলি, বালেশ্বর হিজলীর মুঘল দুর্গ এবং ১৬৮৮ সালে চট্টগ্রামেও আক্রমণ করে। তবে প্রতিটি যুদ্ধেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুঘল বাহিনীর নিকট শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়।
১৬৯০ সালে মুঘল সম্রাটের সাথে সম্পাদিত একটি সন্ধি মোতাবেক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সমগ্র ভারতবর্ষে বার্ষিক ৩,০০০ টাকার বিনিময়ে বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার অধিকার ফিরে পায়। এ সন্ধির বলে ইংরেজরা ১৬৯০ সালে জব চার্নকের নেতৃত্বে সুতানটিতে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে।
১৭১৭ সালে মুঘল সম্রাট ফররুখ শিয়র এক ফরমান জারি করে সমগ্র ভারতবর্ষে বিনা শুল্কে বাণিজ্য করা সহ অনেক সুযোগ-সুবিধা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে প্রদান করেন। এ সময় বাংলার সুবেদার মুর্শিদকুলি খান এ ফরমানের ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে দিল্লির সম্রাটকে বুঝাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এ ফরমান বলে প্রাপ্ত সুযোগের সদ্ব্যবহার করে চতুর ইংরেজরা কলকাতায় দুর্ভেদ্য দুর্গ তৈরি করে এবং ক্ষমতালোভী হয়ে বাংলার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। নির্ভীক স্বাধীনচেতা ও আপসহীন এ নবাবের বিরুদ্ধে মীর জাফর, জগৎ শেঠ, উমিচাঁদ, রায় দুর্লভসহ অমাত্যগণ ও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে ঘসেটি বেগম, শওকত জঙ্গ প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন এবং ইংরেজদের সাহায্যে নবাব সিরাজকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রয়াস চালান। রবার্ট, ক্লাইভ ও মীর জাফরের মধ্যে এক গোপন চুক্তি হয়। এ সময় ইংরেজরা নবাবের আদেশ অমান্য করে কলকাতায় দুর্গ নির্মাণ করতে শুরু করে।
অবাধ্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে শাস্তিদানের উদ্দেশ্যে নবাব ১৭৫৬ সালের ৪ জুন কাশিমবাজার কুঠি অধিকার করেন এবং কলকাতা অভিমুখে অগ্রসর হন এবং ২০ জুন কলকাতা দখল করেন। নবাব তাঁর অন্যতম সেনাধ্যক্ষ মানিকচাঁদের ওপর কলকাতার শাসনভার অর্পণ করে মুর্শিদাবাদে প্রত্যাবর্তন করেন। বিশ্বাসঘাতক সেনানায়ক মানিকচাঁদের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে ১৭৫৭ সালের ২ জানুয়ারি ক্লাইভ ও ওয়াটসন বিনা বাধায় কলকাতা দখল করেন।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি 'আলী নগরের সন্ধির' শর্ত উপেক্ষা করে চন্দননগরে ফরাসি বাণিজ্যকুঠি আক্রমণে উদ্যত হলে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা ক্লাইভকে যুদ্ধে লিপ্ত হতে নিষেধ, করেন। উমিচাঁদের উদ্যোগে মীরজাফর আলী খান, রাজা রায়দুর্লভ, রাজা রাজবল্লভ, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র এবং ইস্ট ইন্ডিয়া-কোম্পানির এজেন্ট ওয়াটসন প্রমুখ জগৎশেঠের বাসভবনে এক গোপন বৈঠকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সহযোগিতায় নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে সিংহাসনচ্যুত করার এবং মীরজাফরকে নবাবি মসনদে বসানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ সংবাদ জেনে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা মীরজাফর আলী খানকে প্রধান সেনাপতির পদ হতে অপসারিত করে আবদুল হাদী খানকে সেই পদে নিয়োগ করেন। মীরজাফর আলী খান পবিত্র কোরান শরিফ স্পর্শ করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করে, নবাব পুনরায় মীরজাফর আলী খানকে প্রধান সেনাধ্যক্ষ নিয়োগ দেন।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ