- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
ব্রিটিশ ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল
বঙ্গভঙ্গের কারণ
বঙ্গভঙ্গের প্রধান প্রধান কারণগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. প্রশাসনিক কারণ: ১৮৬১ সালের ইন্ডিয়ান অ্যাক্ট অনুসারে সৃষ্ট বাংলা প্রদেশের আয়তন ছিল প্রায় দুই লক্ষ বর্গমাইল এবং লোকসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৮৫ লক্ষ। একজন গভর্নরের পক্ষে আয়তনে এতবড় প্রদেশ শাসন করা ছিল খুবই কষ্টকর। এজন্যই ১৯০২ সালে লর্ড কার্জন (Lord Curzon) ভারত সচিবকে লিখেছিলেন যে, "একটি মাত্র কেন্দ্র থেকে এত বড় ও জনবহুল এলাকা শাসন করা সম্ভব নয়।" লর্ড কার্জন ও অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দাবির প্রেক্ষিতেই ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ করে দুটি প্রদেশ সৃষ্টি করা হয়।
২. রাজনৈতিক কারণ বিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকেই ভারতীয় জনসাধারণের মাঝে রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তা ক্রমশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের রূপ নেয়। ১৮৮৫ সালে জাতীয় কংগ্রেসের জন্ম আন্দোলনের ধারাকে আরও বেশি বেগবান করে। আর এ আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল কলকাতা। তাই সুচতুর ব্রিটিশ সরকার বাংলা প্রেসিডেন্সিকে বিভক্ত করে এ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে স্তিমিত করতে সচেষ্ট হয়।
৩. সামাজিক কারণ: ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের পরাজয়ের পর থেকেই ভারতবর্ষের তথা বাংলার মুসলমানগণ ব্রিটিশ শাসনের বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হয় এবং ধীরে ধীরে সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রাধান্য হারাতে থাকে। কিন্তু উনিশ শতকের শেষভাগ থেকে ভারতবর্ষে মুসলমানগণ তাদের স্বার্থ আদায়ে সোচ্চার হয়ে ওঠে। এ সময় ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ বাংলা প্রেসিডেন্সির তৎকালীন গভর্নর লর্ড কার্জনের নিকট পূর্ব বাংলাকে একটি পৃথক প্রদেশ এবং ঢাকায় এর রাজধানী করার দাবি জানান। এ সময় ব্রিটিশ শাসনের জন্য পূর্ববঙ্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সমর্থন প্রয়োজন ছিল এবং তাদের সন্তুষ্ট করা বঙ্গভঙ্গের অন্যতম কারণ ছিল।
৪. অর্থনৈতিক কারণ: বাংলা প্রেসিডেন্সির শিল্প ও বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল ছিল কলকাতা। এ সময় পূর্ব বাংলা তথা ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী অঞ্চল থেকে যাবতীয় কাঁচামাল কলকাতার শিল্প-প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হতো। এ কারণে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে কলকাতা উন্নত হতে থাকে এবং পূর্ব বাংলার জনসাধারণ ধীরে ধীরে অর্থনৈতিকভাবে কলকাতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তাছাড়া কলকাতায় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রাধান্য ছিল। ফলে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য (Discrimination) দেখা দেয়। তাই এ বৈষম্যের হাত থেকে পরিত্রাণ লাভের আশায় মুসলমান সম্প্রদায় বঙ্গভঙ্গ সমর্থন করে।
৫. ধর্মীয় কারণ: ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের পেছনে ধর্মীয় কারণও বিদ্যমান ছিল। ঐ সময় পূর্ব বাংলার মুসলিম জনগণ ও পশ্চিম বাংলার হিন্দুদের সুস্পষ্ট প্রাধান্য ছিল। দুই বাংলার দুটি প্রধান সম্প্রদায় নিজ নিজ ধর্মীয় মূল্যবোধ ও জীবনাচার নিয়ে থাকতে চেয়েছিল। এ সময় পূর্ব বাংলার মুসলমানগণ হিন্দু জমিদারদের শাসন ও প্রভাব মুক্ত হয়ে সমাজ প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী হয়ে ওঠে। ফলে ব্রিটিশরাও দুই বাংলার দুই প্রধান ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন জনগোষ্ঠীকে দুটি আলাদা প্রদেশের মাধ্যমে পৃথক করতে আগ্রহী হয়।
৬. ভাগ কর এবং শাসন কর নীতি বঙ্গভঙ্গ যে কেবল মুসলমানদের দাবির ফসল ছিল তা নয়। কারণ বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব আসে ব্রিটিশ শাসকদের নিকট থেকে। প্রকৃতপক্ষে, এটি ছিল ব্রিটিশদের 'ভাগ কর এবং শাসন কর' নীতির (Divide and Rule Policy) ফল। তাই বাংলা প্রেসিডেন্সি বিভক্তির মাধ্যমে এ নীতিকে সুচতুর ব্রিটিশ সরকার কৌশলে কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ১৯০৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর গভর্নর লর্ড কার্জন কর্তৃক বাংলা প্রেসিডেন্সি বিভক্তিকরণের মূলে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কারণই মুখ্য ছিল। ফলে পূর্ব বাংলার মুসলমান জনগণের মধ্যে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদী চেতনার সৃষ্টি হয়। আর এই পেক্ষিতেই ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগের জন্ম হয়।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ