• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
ব্রিটিশ ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ব্রিটিশ ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল

লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব

উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব অপরিসীম। লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। কিন্তু এ প্রস্তাবে যে আর একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয় তা উপেক্ষিত হয় চরমভাবে। লাহোর প্রস্তাব পরবর্তীতে পাকিস্তানের রাজনীতিতে নানাভাবে গুরুত্ববহ হয়ে ওঠে। লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব নিম্নে আলোচনা করা হলো:

১. স্বতন্ত্র জাতিসত্তার বিকাশ লাহোর প্রস্তাবে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ভারতের হিন্দু ও মুসলমানগণ এক জাতি নয়; তারা দুটি পৃথক জাতি। লাহোর প্রস্তাবের মূল ভিত্তি ছিল দ্বি-জাতি তত্ত্ব। এ তত্ত্বের মূলকথা হলো ভারতীয় মুসলমানগণ ভারতের অপরাপর সম্প্রদায়ের ন্যায় কেবল একটি সম্প্রদায় নয়, তারা একটি স্বতন্ত্র জাতি। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত রাজনীতিক সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল বলেন যে, 'ভারতবর্ষে হিন্দু ও মুসলমান দুটি পৃথক ও স্বতন্ত্র জাতি।'

২. মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি: স্বাধীন সার্বভৌম আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশায় ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব গ্রহণের পরবর্তী সময়ে মুসলিম লীগের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়তে থাকে। এ প্রস্তাব মুসলমানদের নতুন আশায় উদ্দীপিত করে এবং তাদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে।

৩. রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়। কেননা এ প্রস্তাব গ্রহণের পূর্বে মুসলিম লীগের রাজনীতি কেবল কংগ্রেস ও ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আপোষ-মীমাংসা করে চলার গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু লাহোর প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো মুসলমানরা ভারতের স্বায়ত্তশাসনের দাবি পরিত্যাগ করে নিজেদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র (Separate State) গঠনের দাবি উত্থাপন করে।

৪. পাকিস্তান সৃষ্টি: ১৯৪৬ সালের ৯ এপ্রিল জিন্নাহর সভাপতিত্বে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের আইন-প্রণেতাগণের সম্মেলনে (Muslim League Legislator's Convention) মুসলমানদের একাধিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাকে বাদ দিয়ে একটি রাষ্ট্র তথা এক পাকিস্তান পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এ প্রস্তাবের ভিত্তিতেই ১৯৪৭ সালে সমগ্র ভারতবর্ষ দ্বি-খণ্ডিত হয়ে পাকিস্তান ও ভারত নামক দুটি স্বতন্ত্র স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এদিক থেকে বিচার করলে লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব যে কতটুকু তা সহজেই উপলব্ধি করা যায়। তৎকালীন অবস্থার প্রেক্ষাপটে সত্যিই এটি ছিল একটি অভিনব ও বৈপ্লবিক প্রভাব।

৫. বাংলাদেশের অভ্যুদয় লাহোর প্রস্তাবের মধ্যেই বাংলাদেশের বীজ নিহিত ছিল। কেননা মূল লাহোর প্রস্তাবে ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অঞ্চলগুলো নিয়ে 'স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ' (Independent States) গঠনের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৪৬ সালে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্রের পরিবর্তে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব বাংলার জনগণ স্বায়ত্তশাসনের দাবি আদায়ের আন্দোলন শুরু করে। পরবর্তীতে স্বায়ত্তশাসনের দাবি স্বাধীনতার দাবিতে পরিণত হয়। ফলে দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ভেঙে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ