- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
ব্রিটিশ ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল
মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার ব্যর্থতার কারণ
মন্ত্রিমিশন অত্যন্ত আশাপ্রদ ও সন্তুষ্টচিত্তে ব্রিটেনে প্রত্যাবর্তন করেন। স্যার স্টাফোর্ড ক্রিপস এবং লর্ড পেথিক লরেন্স উভয়েই তাদের সাফল্য সম্পর্কে অত্যন্ত নিশ্চিত ছিলেন। কিন্তু মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা ভারত উপমহাদেশে হিন্দু-মুসলিম সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়। নিম্নে মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা ব্যর্থতার কারণগুলো আলোচনা করা হলো:
১. গভর্নর জেনারেলের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ১৯৪৬ সালে গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়াভেল (Lord Wavell) ঘোষণা করেন যে, যেকোনো বৃহৎ রাজনৈতিক দল মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা গ্রহণ করলে তাদের নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। গভর্নর জেনারেলের এ আশ্বাসের প্রেক্ষিতে মুসলিম লীগ ১৯৪৬ সালের ৬ জুন দিল্লি অধিবেশনে একটি প্রস্তাব পাশ করে মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কিন্তু কংগ্রেস অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে অসম্মতি জানায়। এ সময় গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়াভেল মুসলিম লীগের কাছে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে নিজের মনোনীত সদস্যদের নিয়ে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে। এ কারণে মুসলিম লীগ গভর্নর জেনারেল তথা সরকারকে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী হিসেবে চিহ্নিত করে।
২. কংগ্রেসের বিরোধিতা: মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার প্রতি কংগ্রেসের মনোভাব প্রথম থেকেই অস্পষ্ট ছিল। ১৯৪৬ সালের ২৬ জুন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে গ্রুপ গঠনের বিরোধিতা করে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যোগদান করতে অসম্মতি প্রকাশ করে। মূলত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে হিন্দু-মুসলিম সমান সদস্য রাখায় কংগ্রেস তা প্রত্যাখ্যান করে। কংগ্রেসের এরূপ বিরোধিতার কারণে মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
৩. মুসলিম লীগের সম্মতি প্রত্যাহার: মুসলিম লীগ প্রথমে মনে করেছিল যে, মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনায় পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কথা নিহিত আছে। কেননা, এ পরিকল্পনার মধ্যে বাধ্যতামূলক গ্রুপিং ব্যবস্থা, প্রদেশগুলোর নিজস্ব সংবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা এবং স্বায়ত্তশাসন প্রদান প্রভৃতি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ছিল। কিন্তু গভর্নর জেনারেলের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ এবং কংগ্রেসে বিরোধিতার কারণে ১৯৪৬ সালের ২৯ জুলাই মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে মুসলিম লীগ গণপরিষদে যো করা বিপজ্জনক বলে মনে করে এবং মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে।
৪. দুর্বল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন: গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়াভেল ১৯৪৬ সালের ৬ আগস্ট জওহরলাল নেহেরুকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানান। ১০ আগস্ট পণ্ডিত নেহেরু কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে সম্মত হন। এ প্রেক্ষাপটে ২৪ আগস্ট গভর্নর জেনারেল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভেঙে দিয়ে কংগ্রেসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করেন। মুসলিম লীগের প্রতি ব্রিটিশ সরকার ও কংগ্রেসের এ বিশ্বাসঘাতকতার প্রতিবাদে মুসলিম লীগ ১৯৪৬ সালের ১ সেপ্টেম্বরকে 'কালো দিবস' (Black Day) বলে ঘোষণা করে। এ অবস্থায় গভর্নর জেনারেল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে মুসলিম লীগের ৫ জন সদস্য গ্রহণের প্রস্তাব করেন। মুসলিম লীগ প্রথমে অস্বীকৃতি জানালেও শেষ পর্যন্ত নবাবজাদা লিয়াকত আলী, খানের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যোগদান করে। কিন্তু শাসন সংক্রান্ত প্রায় প্রতিটি বিষয়ে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে অসহযোগিতা ও মতবিরোধের কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে চরম অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এ কারণে মন্ত্রিমিশন পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ