• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
ব্রিটিশ ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ব্রিটিশ ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব

অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে 'লাহোর প্রস্তাবের মধ্যে বাংলাদেশের বীজ নিহিত ছিল।' কেননা মূল লাহোর প্রস্তাবে ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অঞ্চলগুলো নিয়ে 'স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ' (Independent States) গঠনের কথা বলা হয়েছিল। এ প্রস্তাবে কোথাও একটি অখণ্ড রাষ্ট্রের বা পাকিস্তান শব্দের উল্লেখ ছিল না। এ প্রস্তাব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এ প্রস্তাবে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের পরিকল্পনা লক্ষ করা যায়। একটি উত্তর-পশ্চিম ভারতের পাঞ্জাব, সিন্ধু, বেলুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশকে নিয়ে এবং অপরটি উত্তর-পূর্ব ভারতের পূর্ববঙ্গ ও আসামকে নিয়ে। সুতরাং মূল লাহোর প্রস্তাবে দুটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথাই বলা হয়েছিল।

১৯৪৩ সাল পর্যন্ত মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ লাহোর প্রস্তাব বলতে একাধিক রাষ্ট্রের উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ১৯৪৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জিন্নাহ ও গান্ধীর মধ্যে যে পত্র বিনিময় হয়, তাতে জিন্নাহ প্রথম প্রকাশ করেন যে, মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে একটি মুসলিম রাষ্ট্র গঠিত হবে। অবশেষে ১৯৪৬ সালের ৯ এপ্রিল মুসলিম লীগের 'আইন প্রণেতাগণের সম্মেলনে' একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র কথাটি সংশোধন করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। এ বিশেষ কনভেনশন কমিটির সভায় বাংলার মুসলিম লীগ নেতা আবুল হাশিম উল্লিখিত সংশোধনী প্রস্তাবের সমালোচনা করে বলেন যে, মুসলিম লীগের টিকিটে নির্বাচিত আইনসভার সদস্যদের ১৯৪০ সালের মূল লাহোর প্রস্তাব সংশোধনের ক্ষমতা এ বিশেষ কনভেনশন কমিটির নেই।

কিন্তু বাস্তবে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের জন্ম ছিল একটি ভৌগোলিক অবাস্তবতা। কেননা ভৌগোলিক দিক থেকে পাকিস্তান রাষ্ট্রটি ছিল বিশাল ভারতবর্ষের দুপাশে অবস্থিত। যার মধ্যে প্রায় এক হাজার মাইলের বেশি ব্যবধান ছিল। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানকে একত্রে রাখায় একমাত্র উপায় ছিল ধর্ম। কিন্তু কেবল ধর্মীয় বন্ধন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শোষণকে আড়াল করতে পারেনি।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ লাহোর প্রস্তাব ভিত্তিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন শুরু করে এভাবে ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করা।

পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের স্বায়ত্তশাসনের দাবি চূড়ান্ত রূপ লাভ করে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। এ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ। মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। করতে টালবাহানা শুরু করে এবং ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এ সময় স্বায়ত্তশাসনের দাবি স্বাধীনতার দাবিতে পরিণত হয় এবং বাঙালি। জনগণ সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ নয় মাস মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙালি জনগণ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়াও স্বাধীনতা অর্জন করে। তাই বলা হয় যে, ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ নিহিত ছিল।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ