• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
ব্রিটিশ ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ব্রিটিশ ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল

বঙ্গভঙ্গ রদের কারণ

গভর্নর জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জ-এর সুপারিশক্রমে ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর ব্রিটেনের রাজা পঞ্চম জর্জ ও রানি মেরি দিল্লিতে আগমন করে আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা দেন। বঙ্গভঙ্গ রদের পিছনে বহুমুখী ঘটনা প্রবাহ ও কারণ বিদ্যমান ছিল। নিম্নে এ প্রসঙ্গে আলোচনা করা হলো-

১. কংগ্রেস ও হিন্দু নেতৃবৃন্দের বিরোধিতা: কংগ্রেস ও হিন্দু জাতীয়তাবাদীগণ বঙ্গভঙ্গকে হিন্দু-মুসলিম বিভেদ সৃষ্টির এক ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করে। তাই কংগ্রেস ও হিন্দু নেতৃবৃন্দ বাঙালিদেরকে একটি স্বতন্ত্র জাতি এবং বঙ্গভঙ্গকে 'বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদ' বলে উল্লেখ করে বঙ্গভঙ্গ ও ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র গণ-আন্দোলন গড়ে তোলে। এ আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের মধ্যে সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, অরবিন্দ ঘোষ, বালগঙ্গাধর তিলক, বিপিন চন্দ্র পাল প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

২. স্বদেশি আন্দোলন: উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে স্বদেশি আন্দোলন শুরু হলেও এ আন্দোলন সুসংগঠিত ও গতিশীল হয় ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হবার পর থেকে। এ সময় স্বদেশি আন্দোলন এবং বিলেতি দ্রব্য বর্জনের মাধ্যমে হিন্দু জাতীয়তাবাদীগণ ব্রিটিশ শিল্পপতিদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন যেন তারা ব্রিটিশ সরকারকে বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনা পরিহার করতে বাধ্য করে।

৩. স্বরাজ আন্দোলন: ব্রিটিশ বিরোধী স্বরাজ আন্দোলনও বঙ্গভঙ্গ রদের অন্যতম কারণ। এ প্রসঙ্গে মহাত্মা গান্ধী ১৯০৮ সালে মন্তব্য করে বলেন, "বঙ্গভঙ্গের পর ভারতের প্রকৃত জাগরণ ঘটেছে। এ বঙ্গভঙ্গই ব্রিটিশ রাজত্বের বিভাগের কারণ হবে।"

৪. বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের বিরোধিতা কলকাতার বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের বিরোধিতা বঙ্গভঙ্গ রদের অন্যতম কারণ। কলকাতার আইনজীবী সমিতি, সাংবাদিক সমিতি, ব্যবসায়ী সমিতি, চিকিৎসক সমিতি অনুধাবন করেন যে, বাংলার বিভক্তি তাদের বৈষয়িক স্বার্থে আঘাত আনবে। তাই পেশাজীবী সংগঠনগুলো বঙ্গভঙ্গ রদের জন্য ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।

৫. মুসলমানদের সাংগঠনিক শক্তির অভাব হিন্দু নেতৃবৃন্দের বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রবল আন্দোলন মোকাবেলা করার মতো সাংগঠনিক শক্তি মুসলিম লীগের ছিল না। এ আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ব্রিটিশ সরকার ভীত হয়ে বঙ্গভঙ্গ রদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

৬. সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম প্রাথমিক পর্যায়ে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন অনেকটা নিয়মতান্ত্রিকভাবে চললেও শেষ পর্যায়ে এটি সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের রূপ নেয়। এ পর্যায়ে বিভিন্ন অঞ্চলে গোপনে ব্রিটিশ বিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা সংঘ গড়ে ওঠে। এদের মধ্যে ঢাকার 'অনুশীলন' এবং কলকাতার 'যুগান্তর' সমিতির নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক লর্ড মর্লে, লর্ড মিন্টো, পশ্চিম বঙ্গের গভর্নর এন্ড্রু ফ্রেজার, কিংসফোর্ড প্রমুখের হত্যার চেষ্টা চলতে থাকে। সন্ত্রাসীরা ইংরেজ আইনজীবী কেনেডির স্ত্রীকে বোমা নিক্ষেপ করে হত্যা করে। সন্ত্রাসীদের হাতে ১৯১১ সালে তৎকালীন পুলিশের ডি.আই.জি. খানবাহাদুর সামসুল আলম গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করলে ব্রিটিশ সরকার শঙ্কিত হয়ে পড়ে। এভাবে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন চরম আকার ধারণ করলে ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সম্রাট পঞ্চম জর্জের অভিষেক (Inauguration) অনুষ্ঠানে রাজকীয় ঘোষণা বলে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ