• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
ব্রিটিশ ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ব্রিটিশ ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল

জিন্নাহর 'দ্বিজাতিতত্ত্ব'

১৯৪০ সালের ২২ মার্চ মুসলিম লীগের লাহোর অধিবেশনে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তার বক্তব্যে মুসলমানদের জন্য একটি পৃথক আবাসভূমির দাবি করেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি তার বক্তব্যে বিখ্যাত দ্বিজাতিতত্ত্ব সবিস্তার ব্যাখ্যা করেন। নিম্নে জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ হিন্দু ও মুসলিম যে দুটো আলাদা জাতি তার ব্যাখ্যা প্রদান করে লাহোর অধিবেশনে সুস্পষ্টভাবে বলেন, ভারতবর্ষে দুটি পৃথক জাতি রয়েছে হিন্দু ও মুসলিম জাতি। হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে কেবল ধর্মীয় পার্থক্যই বিদ্যমান নেই বরং তাদের ভিন্ন ভিন্ন সমাজ ব্যবস্থাও বিদ্যমান। হিন্দু ও মুসলমানদের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় দর্শন, সামাজিক প্রথা ও সাহিত্য। হিন্দু ও মুসলমানদের জীবনধারা ও জীবনদর্শন ভিন্ন। তারা ইতিহাসের ভিন্ন ভিন্ন উৎস হতে অনুপ্রেরণা লাভ করে থাকে। তারা ভিন্ন মহাকাব্য, উপাখ্যান ও মহাপুরুষকে অনুসরণ করে থাকে। হিন্দু-মুসলিম পৃথক জাতি হওয়ায় তাদেরকে নিয়ে একটি অভিন্ন ভারতীয় জাতি গঠনের ধারণা অলীক স্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয়। এরূপ ধারণাই আমাদের অধিকাংশ সমস্যার মূল কারণ এবং যথাসময়ে এ দুটি জাতিকে পৃথক জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া না হলে ভারতের ধ্বংসই সূচিত হবে। একটি জাতিকে (হিন্দু) সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে আর অপর জাতিকে (মুসলমান) সংখ্যালঘু হিসেবে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টা সুফলদায়ক হবে না বরং এতে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষের সৃষ্টি হবে। এ কারণে এ রাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই তিনি তার ভাষণে বলেন, "Musalmans are not a minority-Musalmans are a nation according to any definition of a nation... So they are in need of a separate homeland, a territory and a state", অর্থাৎ "মুসলমানগণ কোনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নয়, বরং তারা যেকোনো সংজ্ঞা অনুসারে একটি জাতি। সুতরাং সেজন্য তাদের অবশ্যই একটি পৃথক আবাসভূমি, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড এবং রাষ্ট্র থাকতে হবে।"

এভাবে মুসলমানদের জন্য একটি স্বতন্ত্র আবাসভূমির সমর্থনে যুক্তি প্রদর্শন করতে গিয়ে জিন্নাহ বলেন, ভারত বিভক্তির মাধ্যমেই কেবল মুসলমানরা সংখ্যাগুরু হিন্দুদের চিরস্থায়ী আধিপত্য থেকে মুক্তি লাভ করতে পারবে। ভারতবর্ষে হিন্দুদের স্থায়ী 'রাজত্ব' প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাই হিন্দু-মুসলিম বিদ্বেষকে গভীরতর করেছে। এ কারণে ভারত বিভক্তি এবং পৃথক আবাসভূমি সৃষ্টি মুসলমানদের চিরকাল হিন্দুদের আধিপত্যে থাকার ভয় দূর করবে। দূর করবে রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে মুসলমানদের অবদমিত সংখ্যালঘু হওয়ার ভয়কে। জিন্নাহর মতে, ভারত বিভাগ করে দুটি জাতিকে নিজস্ব রাষ্ট্র গঠন করতে দেওয়া হলে তাদের মধ্যে শত্রুভাবাপন্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। হিন্দু ও মুসলমানের রাষ্ট্র দুটি আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে অধিক মাত্রায় পারস্পরিক সদিচ্ছা ও সৎ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক নিয়ে বসবাস করতে পারবে। হিন্দু ও মুসলিম পৃথক রাষ্ট্রের দ্বারা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করবে এবং এভাবে সংখ্যালঘুদের সমস্যা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান করা সহজ হবে। এ ছাড়া তিনি বলেন, ভারত বিভক্তির মাধ্যমে মুসলমানগণ তাদের নিজস্ব ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনধারা পূর্ণভাবে বিকশিত করার সুযোগ পাবে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ