• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
ব্রিটিশ ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ব্রিটিশ ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল

১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের বৈশিষ্ট্য

১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের বৈশিষ্ট্যগুলো ছিল নিম্নরূপ:

১. সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠন: 'সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র' গঠনের প্রস্তাব ১৯৩৫ সালের ভারত শাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এ আইনের দ্বারা ব্রিটিশ শাসিত প্রদেশসমূহ এবং ভারতীয় রাজন্যবর্গ শাসিত অঞ্চলগুলোকে সংযুক্ত করে সর্বপ্রথম ভারতবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রকৃতির সরকার গঠনের পরিকল্পনা করা হয়। অবশ্য এতে দেশীয় রাজ্যসমূহের যোগদান তাদের স্বাধীন ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়।

২. প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন: ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রদেশগুলোতে স্বায়ত্তশাসন (Autonomy) প্রবর্তন করা হয়। প্রদেশের শাসনসংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষ করে আইন, শিক্ষা, কৃষি ইত্যাদিতে প্রাদেশিক সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রাদেশিক সরকার ও পরিষদের ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা এবং নিয়ন্ত্রণ সীমিত করা হয়। প্রাদেশিক গভর্নর ও মন্ত্রী পরিষদকে প্রাদেশিক আইনসভার নিকট দায়ী করা হয়।

৩. দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা: এ আইনে কেন্দ্রে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রবর্তন করা হয়। এর উচ্চ কক্ষের নামকরণ করা হয় 'রাষ্ট্রীয় সভা' (Council of State) এবং নিম্ন কক্ষের নাম হয় 'ব্যবস্থাপক সভা' (Federal Assembly)। উচ্চ কক্ষের মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ২৬০ জন। এর মধ্যে ১৫৬ জন ব্রিটিশ শাসিত প্রদেশসমূহ হতে নির্বাচিত হতেন এবং ১০৪ জন দেশীয় রাজ্য থেকে মনোনীত হতেন। নিম্ন কক্ষের সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৭৫ জন। এর মধ্যে দেশীয় রাজ্যগুলোর শাসকগণ কর্তৃক মনোনীত হতেন ১২৫ জন এবং ব্রিটিশ ভারতের প্রদেশগুলো থেকে নির্বাচিত হতেন ২৫০ জন।

৪. ক্ষমতার বণ্টন: এ আইনের মাধ্যমে শাসন সম্পর্কিত বিষয়গুলোকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়, যথা: কেন্দ্রীয় বিষয়, প্রাদেশিক বিষয় এবং যুগ্ম বিষয়। সাধারণত সমগ্র দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো কেন্দ্রীয় তালিকার অন্তর্ভুক্ত ছিল। দেশরক্ষা, যোগাযোগ, বৈদেশিক সম্পর্ক ও মুদ্রা প্রভৃতি কেন্দ্রীয় তালিকাভুক্ত বিষয় এবং তা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত করা হয়। প্রাদেশিক তালিকাভুক্ত বিষয়, যেমন- আইন-শৃঙ্খলা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুলিশ, কৃষি প্রভৃতি পরিচালনার দায়িত্ব প্রাদেশিক সরকারের হাতে দেওয়া হয়। যুগ্ম বিষয়ের আওতাধীন রাখা হয় ফৌজদারি আইন, ফৌজদারি বিচার প্রণালি, বিবাহ ও বিবাহ-বিচ্ছেদ সংক্রান্ত বিধি, উইল, চুক্তি প্রভৃতি। এ বিষয়গুলো কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার কর্তৃক যৌথভাবে শাসিত হবে।

৫. কেন্দ্রে দ্বৈতশাসন: এ আইনের মাধ্যমে প্রদেশে দ্বৈতশাসন রহিত করে কেন্দ্রে দ্বৈতশাসন প্রবর্তন করা হয়। কেন্দ্রীয় বিষয়সমূহকে সংরক্ষিত (Reserved) এবং হস্তান্তরিত (Transfered) এ দুভাগে বিভক্ত করা হয়। প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক সম্পর্ক, ধর্মীয় বিষয় এবং উপজাতীয় সংক্রান্ত বিষয় প্রভৃতি সংরক্ষিত বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ বিষয়গুলো গভর্নর জেনারেল তাঁর ইচ্ছাধীন ক্ষমতার (Discretionary power) বলে পরিচালনা ও কার্যকর করবেন। আইন-শৃঙ্খলা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতি বিষয়সমূহ হস্তান্তরিত বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ বিষয়গুলো গভর্নর জেনারেল আইন পরিষদের নিকট দায়ী মন্ত্রিসভার পরামর্শক্রমে পরিচালনা করবেন।

৬. যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে ভারতবর্ষে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত (Federal Court) প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়। ৩ জন বিচারপতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত গঠিত হয়। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের বিশ্লেষণ এবং বিভিন্ন সরকারের মধ্যকার বিরোধ মীমাংসা করাই এ আদালতের অন্যতম কাজ বলে নির্ধারিত করা হয়। তবে এ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ব্রিটেনের প্রিভি কাউন্সিলে আপিল করা যেত।

৭. নতুন প্রদেশ সৃষ্টি: এ আইন দ্বারা সিন্ধু ও উড়িষ্যা নামে দুটি নতুন প্রদেশ সৃষ্টি করা হয়।

৮. বার্মার পৃথকীকরণ: ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে বার্মাকে (বর্তমান নাম মায়ানমার) ভারত থেকে পৃথক করে একজন স্বতন্ত্র গভর্নর জেনারেলের নেতৃত্বাধীন এবং পৃথকভাবে শাসন কার্য পরিচালনার ব্যবস্থা করা হয়।

৯. মুসলমান প্রতিনিধিত্ব এ আইনে ভারতবর্ষের কেন্দ্রীয় আইনসভায় এক-তৃতীয়াংশ মুসলমান সদস্য গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া মুসলমান ও অন্য সংখ্যালঘুদের জন্য 'পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা' অব্যাহত রাখা হয়।

১০. প্রদেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা: ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে ছয়টি প্রদেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার ব্যবস্থা করা হয়। প্রদেশগুলো ছিল- (১) বাংলা (২) মুম্বাই (৩) মাদ্রাজ (৪) বিহার (৫) যুক্ত প্রদেশ ও (৬) আসাম। ১১টি দেশীয় রাজ্যের মধ্যে বাকি ৫টি প্রদেশে পূর্ববৎ এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা বহাল রাখা হয়।

১১. উপদেষ্টা বোর্ড গঠন: ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে ভারত সচিবের ঐতিহাসিক ভারতীয় কাউন্সিলের বিলোপ ঘটে এবং তদস্থলে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষমতাসম্পন্ন একটি উপদেষ্টা বোর্ড গঠন করার ব্যবস্থা করা হয়।

১২: রাজপ্রতিনিধির পদ সৃষ্টি: ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে রাজপ্রতিনিধির একটি পদ সৃষ্টি করা হয়। তবে একই ব্যক্তি গভর্নর জেনারেল ও রাজপ্রতিনিধি হতে পারতেন। মূলত দেশীয় রাজ্যগুলোর ওপর ব্রিটিশ সরকারের আধিপত্য ও কর্তৃত্ব বজায় রাখাই ছিল রাজপ্রতিনিধির প্রধান কাজ।

১৩. স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নিয়োগ: ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রথমবারের মতো নির্বাচনের মাধ্যমে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ