• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
ব্রিটিশ ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ব্রিটিশ ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল

১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের গুরুত্ব

অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকা সত্ত্বেও ব্রিটিশ ভারতের সাংবিধানিক অগ্রগতির ইতিহাসে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। এ আইনকে অধ্যাপক কুপল্যান্ড 'সৃজনশীল রাজনৈতিক চিন্তার অর্জন' বলে আখ্যায়িত করেন। তাঁর মতে, এ আইনের মাধ্যমে ভারতীয়দের ভাগ্য ও ভবিষ্যতের ভার ব্রিটিশদের হাত থেকে ভারতীয়দের হাতে হস্তান্তরিত হয়। নিম্নে এ আইনের গুরুত্ব তুলে ধরা হলো:

১. ভবিষ্যৎ সংবিধান রচনার ভিত রচিত ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনকে ভবিষ্যৎ সংবিধান রচনার ভিত বলে অভিহিত করা হয়। কেননা এ আইন কিছু পরিবর্তন তথা সংযোজন-বিয়োজন সাপেক্ষে স্বাধীন ভারত ও পাকিস্তানের সংবিধান রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২. প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের ক্ষেত্রে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের গুরুত্ব অপরিসীম। যদিও খুব সীমিত আকারে প্রদেশে স্বায়ত্তশাসন বাস্তবায়িত হয় তথাপি এ উদ্যোগ ভবিষ্যৎ স্বায়ত্তশাসনের পথ রচনা করে। এ আইনের মাধ্যমে ১৯৩৬-৩৭ সালে প্রাদেশিক নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দল অংশ নেয় এবং ১৯৩৭ সালের ১ এপ্রিল থেকে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন কার্যকরী হয়।

৩. যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সূচনা: ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে প্রবর্তিত 'সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয়' ব্যবস্থার প্রস্তাবের রাজনৈতিক গুরুত্ব ব্যাপক। কেননা এ আইনের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তীকালে স্বাধীন ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। এ ধরনের শাসনব্যবস্থা ভারতে এখন পর্যন্ত সফলভাবে কার্যকর আছে।

৪. দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন: ভারতবর্ষে দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের ক্ষেত্রে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব রয়েছে। এ আইনের মাধ্যমে সর্বপ্রথম কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এ আইনে মন্ত্রীদের তাদের কার্যাবলির জন্য আইনসভার নিকট দায়ী থাকার বিধান করা হয়।

৫. প্রাদেশিক আইনসভার গঠন: ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন অনুযায়ী ভারতের প্রত্যেক প্রদেশের আইনসভা এক কক্ষবিশিষ্ট ছিল। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন অনুসারে বাংলা, বিহার, আসাম, মুম্বাই, মাদ্রাজ ও উত্তর প্রদেশ এ ৬টি প্রদেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার বিধান করা হয়। অবশিষ্ট ৫টি প্রদেশ যথা: মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাব, সিন্ধু, উড়িষ্যা ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে এক কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার বিধান করা হয়।

৬. বঙ্গীয় আইনসভার আসন বণ্টন বাংলা প্রদেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার বিধান করা হয়। এর উচ্চ কক্ষের নাম ছিল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল (Lagislative Council) এবং নিম্ন কক্ষের নাম ছিল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি (Lagislative Assembly) । মন্ত্রিসভাকে তাদের কাজের জন্য নিম্ন কক্ষের নিকট দায়বদ্ধ করা হয়। লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের আসন সংখ্যা সর্বনিম্ন ৬৩ থেকে সর্বোচ্চ ৬৫ নির্ধারণ করা হয়। এর আসন সংখ্যা সাধারণ (হিন্দু) শহর ২, মফস্বল ৮; মুসলমান শহর ১, মফস্বল ১৬; ইউরোপীয় ৩, লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি এর সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত ২৭, সরকার মনোনীত থেকে ৮ জন। নিম্নকক্ষ লেজিসলেটিভঅ্যাসেম্বলির সংখ্যা নির্ধারণ করা হয় ২৫০ জন। ২৫০টি আসনের মধ্যে ৭৮টি হিন্দু ও ১১৭টি মুসলিম আসন নির্ধারণ করা হয়। অন্যান্য আসনগুলো বর্ণ হিন্দু, স্বতন্ত্রপার্থী, তকসিলি হিন্দু ও ইউরোপীয় প্রার্থীদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়।

৭. ভোটাধিকার: ১৯১৯ সালের ভারত শাসনে মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩% লোকের ভোটাধিকার ছিল। কিন্তু ১৯৩৫ সালের আইনে তা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১৪% হয়। কেবল শিক্ষিত লোক, আয়কর প্রদানকারী, পৌরসভা বা গাড়ির ট্যাক্স প্রদানকারী, বিভিন্ন খেতাবধারী অভিজাত শ্রেণির লোক, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ, পৌরসভা ও লোকাল বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রমুখ শ্রেণিভুক্ত ব্যক্তিদের ভোটাধিকার ছিল। এছাড়া যোগ্যতাসম্পন্ন মহিলাদের ভোটাধিকারও স্বীকৃত হয়। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন দ্বারা ভোটারদের বয়স ন্যূনতম ২০ বছর ধার্য করা হয়েছিল।

৮. নির্বাচন পদ্ধতি: ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে সম্প্রদায়ভিত্তিক পৃথক নির্বাচন পদ্ধতির ব্যবস্থা করা হয়। এ পদ্ধতিতে মুসলিম আসনের প্রার্থীরা মুসলমান ভোটারদের দ্বারা এবং হিন্দু আসনের প্রার্থীরা হিন্দু ভোটারদের দ্বারা নির্বাচিত হতেন। যেমন- একটি প্রদেশে ১৫টি মুসলমান আসন থাকলে গোটা প্রদেশ ১৫টি সংসদীয় এলাকায় বিভক্ত হতো। অনুরূপভাবে, ঐ একই প্রদেশে ৭০টি হিন্দু আসন থাকলে গোটা প্রদেশ ৭০টি সংসদীয় এলাকায় বিভক্ত হতো। মুসলিম লীগ মুসলমানদের দল হওয়ায় কেবল মুসলিম আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছিল। কিন্তু কংগ্রেসে হিন্দু, মুসলমান, শিখ প্রভৃতি ধর্মের লোক থাকায় কংগ্রেসের পক্ষে হিন্দু, মুসলমান, শিখ ইত্যাদি আসনে প্রার্থী দেওয়া সম্ভব ছিল। এ কারণে নির্বাচনে কংগ্রেসের বেশি আসনে জয়লাভের সম্ভাবনা ছিল।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ