- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
ব্রিটিশ ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল
বঙ্গভঙ্গের ফলাফল
১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। বঙ্গভঙ্গ নানা দিক থেকে এক সুদূরপ্রসারী ফলাফলের সৃষ্টি করে। বঙ্গভঙ্গের ফলে ইতিবাচক ও নেতিবাচক এই দু ধরনের ফলাফল পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো:
১। ইতিবাচক ফলাফল: ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের ফলে বেশ কিছু ইতিবাচক ফলাফল অর্জিত হয়। তবে এ ধরনের ফলাফলে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের মুসলিম জনগণ মূলত উপকৃত হয়। ইতিবাচক ফলাফলগুলো নিম্নরূপ:
(ক) ঢাকার উন্নয়ন ও মর্যাদা বৃদ্ধি: ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর 'পূর্ববঙ্গ ও আসাম' নামে গঠিত নতুন প্রদেশটির রাজধানী হয় ঢাকা। প্রাদেশিক রাজধানী হওয়ার পর ঢাকায় হাইকোর্ট ভবন, সচিবালয় ভবন, আইনসভা ভবনসহ নানারকম অফিস-আদালত ও কলকারখানা স্থাপিত হয়। পুরনো ভবন ও রাস্তাঘাটের নানারকম সংস্কার হতে থাকে। ফলে ঢাকার যেমন উন্নতি ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেতে থাকে, তেমনি মর্যাদাও বাড়তে থাকে।
(খ) পূর্ব বাংলার অবস্থার উন্নয়ন বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ব বাংলায় শিক্ষা, ব্যবসায়-বাণিজ্য, প্রশাসন, যোগাযোগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। নতুন প্রাদেশিক সরকার পূর্ববঙ্গ ও আসামের প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলোর জন্য অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সড়ক, রেল ও নৌপথ উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। নতুন প্রদেশ গঠনের পর চট্টগ্রাম বন্দর প্রধান সামুদ্রিক বন্দরে পরিণত হয় ও উন্নয়নের কাজ চলতে থাকে। ১৯০৬ সালে নারায়ণগঞ্জ ও চাঁদপুরের মধ্যে এবং ১৯০৭ সালে ধুবরীঘাট থেকে নৌহাটি পর্যন্ত স্টিমার সার্ভিস চালু করা হয়।
(গ) আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন: ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ পূর্ব বাংলার জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধন করে। ঢাকায় রাজধানী ও চট্টগ্রামে নৌবন্দর স্থাপিত হওয়ায় এ অঞ্চলে ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। নতুন নতুন রাস্তাঘাট নির্মাণের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটে। কৃষকরা উৎপাদিত ফসলের পূর্বের তুলনায় ভালো দাম পেতে থাকেন। ফলে পূর্ব বাংলার জনগণের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অগ্রগতি হতে থাকে।
(ঘ) শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়ন: বঙ্গভঙ্গের পর পিছিয়ে থাকা পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের জনগণের শিক্ষার উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। একটি শিক্ষা বিভাগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৫৭% বৃদ্ধি করা হয়। পূর্ববঙ্গের জনগণের শিক্ষার উন্নয়নে জগন্নাথ কলেজকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীতকরণ, সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজকে সরকারিকরণ করা হয়। এছাড়া বেসরকারি কলেজসমূহে অনুদান প্রদান, শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি, নতুন ভবন নির্মাণসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। ফলে বঙ্গভঙ্গের পর পূর্ব বাংলায় শিক্ষার প্রসার ঘটে।
(ঙ) সরকারি চাকরি লাভের সুযোগ সৃষ্টি: বঙ্গভঙ্গের পর চাকরির ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া পূর্ব বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণের জন্য সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ১৯০৬ সালে নতুন প্রদেশের গভর্নর ব্যামফিল্ড ফুলার এক সার্কুলারে মুসলমানদের জন্য নির্ধারিত কোঠা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যোগ্যতা শিথিল করেন। ফুলারের পর গভর্নর হেয়ারও চাকরিতে মুসলমানদের জন্য কোঠা সংরক্ষণ অব্যাহত রাখেন। ফলে পূর্ববঙ্গের মুসলিমদের মধ্যে সরকারি চাকরি লাভের পথ সহজ হয়।
(চ) মুসলিম লীগের জন্ম বঙ্গভঙ্গের পর পূর্ব বাংলার মুসলিম জনগণ নিজেদের পৃথক অস্তিত্ব ও স্বার্থরক্ষার জন্য সংগঠিত হতে থাকে। তাদের মধ্যে মুসলিম জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রসার ঘটে। ফলে ১৯০৬ সালে ঢাকায় "নিখিল ভারত মুসলিম লীগ" নামক একটি রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা লাভ করে; যা পরবর্তীকালে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
২। নেতিবাচক ফলাফল ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ পূর্ব বাংলার জনগণের জন্য অনেক ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনে। তবে বঙ্গভঙ্গের নেতিবাচক ফলাফলও কম নয়। নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হলো:
(ক) হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের অবনতি বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ব বাংলার জনগণ খুশি হলেও হিন্দু সম্প্রদায় তা সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। এজন্য তারা বঙ্গভঙ্গ রদ করার জন্য ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন শুরু করে। ফলে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং মারাত্মক বিরোধের সূত্রপাত ঘটে।
(খ) সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টি বঙ্গভঙ্গের ফলে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এর পক্ষে-বিপক্ষে দুই সম্প্রদায়ের পরস্পরবিরোধী অবস্থান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সূত্রপাত ঘটায়। কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় অসংখ্য জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়।
(গ) স্বদেশি আন্দোলন: বঙ্গভঙ্গ রদ করার জন্য কংগ্রেস স্বদেশি আন্দোলনের ডাক দেয় এবং বিলাতি দ্রব্যাদি বর্জন করতে থাকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত বর্জনের আহ্বান জানায়। ফলে কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়। সামাজিক অস্থিরতা দেখা দেয় এবং জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
(ঘ) সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থান: বঙ্গভঙ্গের পর একদল হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা এর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে উগ্র জাতীয়তাবাদী মনোভাবের সৃষ্টি করে। ফলে ভারতের বিভিন্ন স্থান বিশেষ করে বাংলা, পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্রে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং ভারতীয় রাজনীতিতে উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে।
(ঙ) "ভাগ ও শাসন কর" নীতির বিজয় বঙ্গভঙ্গের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশদের কূটকৌশল "ভাগ কর ও শাসন কর" (Divide and Rule) নীতির জয় হয় এবং সার্থক প্রয়োগ ঘটে। ব্রিটিশ শাসকগণ সুকৌশলে হিন্দু-মুসলিম জনগণের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার মনোভাব উসকে দিয়ে তাদেরকে আলাদা করে ফেলে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ