• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
ব্রিটিশ ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ব্রিটিশ ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল

'মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট

১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর বাংলায় ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে হিন্দু জনগণ এ পরিবর্তনকে মেনে নেয় এবং ইংরেজদের 'সাথে খাপ-খাইয়ে চলতে শুরু করে। এ কারণে তারা সহজেই ইংরেজ শাসকদের অনুগ্রহ লাভ করে এবং চাকরি-বাকরি থেকে শুরু করে জমিদারি ক্রয়সহ সর্বক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে মুসলমানরা তখনও সমগ্র ভারতবর্ষে বিশেষ করে বাংলায় তিতুমীরের নেতৃত্বে ইংরেজ বিরোধী ওয়াহাবি আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের হারানো ঐতিহ্য ও শাসন ক্ষমতা ফিরে পাবার স্বপ্নে বিভোর ছিল। এমনকি তারা ইংরেজি ভাষা-সাহিত্য এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা গ্রহণ করা থেকেও বিরত থাকে। এ কারণে উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগেও শিক্ষিত হিন্দু মধ্যবিত্ত সমাজের পাশে চোখে পড়ে অনুন্নত, দরিদ্র ও অশিক্ষিত মুসলমান সমাজকে।

১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহ তথা মহাবিদ্রোহের পর মুসলমান জনগণও ব্রিটিশ সরকারের বিরোধিতার পরিবর্তে ইংরেজি ভাষা ও পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহী হয়ে ওঠে। এ সময় কোনো কোনো মুসলিম নেতার উদ্যোগে কতিপয় সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৬৩ সালে নবাব আব্দুল লতিফের প্রচেষ্টায় 'মোহামেডান লিটার‍্যারি সোসাইটি', সৈয়দ আমীর আলীর প্রচেষ্টায় ১৮৭৭সালে 'সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন' এবং স্যার সৈয়দ আহমেদের প্রচেষ্টায় ১৮৮৮ সালে 'ইউনাইটেড ইন্ডিয়ান প্যাট্রিয়টিক অ্যাসোসিয়েশন' প্রতিষ্ঠিত হয়। ইতোমধ্যে ১৮৮৫ সালে 'জাতীয় কংগ্রেস' প্রতিষ্ঠিত হলে স্যার সৈয়দ আহমেদ মুসলমানদের কংগ্রেসে যোগদান করা থেকে বিরত থাকতে বলেন। কেননা কংগ্রেসের কিছু সংখ্যক ধর্মান্ধ নেতা বিশেষ করে বালগঙ্গাধর তিলকের হিন্দু জাতীয়তাবাদী ধ্যান-ধারণার অনুসারীদের ধর্মান্ধতার জন্য কংগ্রেস অনেকটাই সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি (Communal Out Look) গ্রহণ করে। এ কারণে মুসলিম নেতৃবৃন্দ প্রথম থেকেই কংগ্রেসকে সুনজরে দেখে নি।

লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালে বাংলা প্রেসিডেন্সিকে বিভক্ত করলে হিন্দু সম্প্রদায় তা রদ করার জন্য তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। এ সময় ভারতবর্ষের মুসলমান নেতৃবৃন্দ তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য একটি রাজনৈতিক সংগঠন (A Political Organization)-এর প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভব করতে থাকেন।

১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর আগাখানের নেতৃত্বে ভারতের শীর্ষস্থানীয় ৩৫ জনের একটি মুসলিম প্রতিনিধি দল সিমলায় গভর্নর জেনারেল ও ভাইসরয় লর্ড মিন্টোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা (Separate Elections) এবং তাদের প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার অনুরোধ জানান। এটি 'সিমলা ডিপুটেশন' নামে পরিচিত। প্রতিনিধি দল ভাইসরয়ের কাছ থেকে তাদের দাবি সম্পর্কে সহানুভূতিশীল বিবেচনার প্রতিশ্রুতি লাভ করেন। ১৯০৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর নবাব স্যার সলিমুল্লাহ ঢাকাস্থ শাহবাগের সুরম্য উদ্যানে মুসলিম শিক্ষা সম্মেলন শুরু করেন। শিক্ষা সম্মেলনের অধিবেশন সমাপ্ত হলে ৩০ ডিসেম্বর নবাব ভিকার-উল-মূলকের সভাপতিত্বে রাজনৈতিক অধিবেশন শুরু হয়। এ অধিবেশনে নবাব স্যার সলিমুল্লাহ মুসলমানদের জন্য একটি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক সংগঠনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এভাবেই ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ (All Indian Muslim League) নামক একটি রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ