- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
ব্রিটিশ ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের বিকাশধারা
কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর থেকে উদারনৈতিক নেতৃবৃন্দ শান্তিপূর্ণ উপায়ে ব্রিটিশ সরকারের নিকট দাবি-দাওয়া উত্থাপন করতে সচেষ্ট হন। ১৮৯২ সালে হিউম ভারতীয় উপমহাদেশ ছেড়ে চলে গেলে দীর্ঘদিন কংগ্রেস ছিল অনেকটা নিষ্ক্রিয়। এসময়ে কংগ্রেস নেতা রানাডে, ফিরোজশাহ্ মেহতা, সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, উমেশচন্দ্র ব্যানার্জী প্রমুখ মূলত আবেদন-নিবেদনের মধ্যেই কংগ্রেসের কার্যক্রম চালাতে থাকেন।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ ঘোষিত হলে কংগ্রেস নেতা সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর নেতৃত্বে তৎকালীন অখণ্ড বাংলার সর্বত্র বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলন অতি দ্রুত ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়। শুরু হয় ইংরেজদের পণ্য বয়কট আন্দোলন যা স্বদেশি আন্দোলনে পরিণত হয়। ১৯০৫ সালে বারানসিতে কংগ্রেসের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয়তাবাদী নেতা লালা লাজপত রাই ব্রিটিশ, সরকারের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধের সপক্ষে দৃঢ় মত প্রকাশ করেন। এই অধিবেশনে চরমপন্থিদের মতাদর্শেরই বিজয় ঘটে এবং স্বদেশি আন্দোলনের সমর্থনে প্রস্তাব পাশ হয়।
১৯০৬ সালে কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে সভাপতি নির্বাচন নিয়ে নরমপন্থি ও চরমপন্থিদের মধ্যকার বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। নরমপন্থি নেতা ফিরোজ শাহ্ মেহতা কৌশলে প্রবীণ নেতা দাদাভাই নৌওরজীর নাম সভাপতি হিসেবে প্রস্তাব করলে অধিকা সদস্য তা সমর্থন করেন এবং কংগ্রেসের বিরোধ আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা প্রশমিত হয়। শেষ পর্যন্ত নরমপন্থিরাই সংগঠনকে নিজেদের দখলে রাখতে সমর্থ হন। ফলে চরমপন্থি নেতাগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে কংগ্রেস ত্যাগ করেন। এ সময়ে কংগ্রেসে কৃষক শ্রেণির কোনো প্রতিনিধি ছিল না। গণআন্দোলনকে এসব মডারেট কংগ্রেস নেতাগণ সযত্নে এড়িয়ে চলার নীতি গ্রহণ করেছিলেন।
১৯০৮ সালে এলাহাবাদ অধিবেশনে কংগ্রেসের ভাঙন আরও স্থায়ীরূপ লাভ করে। গোখলে এসময় ভারত সচিব লর্ড মর্লির নিকট থেকে শাসন সংস্কারের আশ্বাস পেয়ে ব্রিটিশ বিরোধী চরমপন্থি কংগ্রেস নেতাদেরকে আরও দূরে ঠেলে দেন। ব্রিটিশ সরকার সুযোগ বুঝে মডারেট নেতাদের যেমন কাছে টেনে নেন, তেমনি চরমপন্থি নেতা বালগঙ্গাধর তিলককে ৬ বছরের জেল দিয়ে মান্দালয়ে পাঠান। অরবিন্দ ঘোয় মুরারিপুকুর বোমা মামলায় অভিযুক্ত হবার পর অব্যাহতি পেয়ে পণ্ডিচেরীতে যোগ সাধনায় রত হন। বিপিনচন্দ্র পাল সক্রিয় রাজনীতি আপাতত ছেড়ে দেন। লাল লাজপত রাই লন্ডনে পাড়ি জমান। এভাবেই চরমপন্থি আন্দোলনে ভাঁটা পড়ে।
১৯১৪ সালে বালগঙ্গাধর তিলক জেল থেকে মুক্তি লাভ করে জাতীয় কংগ্রেসে যোগদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি এ সময় অ্যানী বেশাস্তের মতোই আইরিশ হোমরুল আন্দোলনের মতো ভারতেও "হোমরুল আন্দোলন" (Home Rule Movement) গড়ে তুলতে উদ্যোগী হন। দীর্ঘকাল দক্ষিণ আফ্রিকায় আইন ব্যবসায় নিয়োজিত মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ভারতে ফিরে এসে ১৯১৮ সাল থেকে কংগ্রেসের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে গান্ধীজীর যোগদানের ফলে এতে নতুন যুগের সূচনা হয়। মূলত তাঁর নেতৃত্বেই কংগ্রেস ব্রিটিশ বিরোধী সর্বভারতীয় পর্যায়ে আন্দোলন শুরু করতে সমর্থ হয়।
১৯২০ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে আবারো অনৈক্য দেখা দেয়। আইনসভা বর্জন ও বয়কট আন্দোলনের কৌশল নিয়ে গান্ধীজীর সাথে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, মতিলাল নেহেরু, জওহরলাল নেহেরু প্রমুখের মতবিরোধ ঘটে। ১৯২০ সালে নাগপুরে কংগ্রেসের অধিবেশনে এই মতবিরোধী চরম আকার ধারণ করে। এ সময়ে খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে এবং কৃষক-শ্রমিকরাও ব্যাপকহারে এসব আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।
১৯২২ সালে 'গয়ায় কংগ্রেসের অধিবেশনে আবারো দলীয় বিভেদ দেখা দেয়। গয়া কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস (C.R. Das) প্রস্তাব করেন যে, ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন অনুযায়ী আসন্ন নির্বাচনে যোগ দিয়ে আইনসভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে সরকারকে সমালোচনা করে নাস্তানাবুদ করা হোক। মতিলাল নেহেরুসহ অনেকেই তাঁর মত সমর্থন করেন। কিন্তু রাজা গোপাল আচারী, কস্তুরী রঙ্গ আইয়ার, ডা. আনসারী প্রমুখ গান্ধীপন্থি নেতাগণ দেশবন্ধুর প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। ফলে কংগ্রেস মূলত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়। পরে চিত্তরঞ্জন দাস ও মতিলাল নেহেরু খিলাফতীদের সঙ্গে নিয়ে গঠন করেন "কংগ্রেস-খিলাফত স্বরাজ্য দল।" অবশ্য সাধারণ জনগণের নিকট তা 'স্বরাজ দল' নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। স্বরাজ দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আশাতীত সফলতা অর্জন করেন। কলকাতা কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে স্বরাজ দল জয়যুক্ত হয়।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের অসাম্প্রদায়িক কর্মসূচি মুসলমানদের মধ্যে আশার সঞ্চার করে। ১৯২৮ সালে কলকাতায় কংগ্রেসের অধিবেশন বসলে সুভাষচন্দ্র বসু ও জওহরলাল নেহেরু পূর্ণ স্বরাজের দাবি উত্থাপন করেন। এজন্য তাঁরা কংগ্রেসের ভেতরেই "ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগ" (Independence League) নামে একটি উপদল গঠন করেন। আন্দোলনপন্থি এবং তরুণ ও যুবগোষ্ঠীর নিকট প্রিয় ও গ্রহণযোগ্য নেতা জওহরলাল নেহেরু গান্ধীজীর সমর্থনে ১৯২৯ সালে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হন। জওহরলাল নেহেরুর সভাপতিত্বে ১৯২৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর লাহোরে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের ঐতিহাসিক অধিবেশনে "পূর্ণ স্বরাজের" প্রস্তাব গৃহীত হয়। ১৯২৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর মধ্য রাতে 'বন্দেমাতরম' ধ্বনির মধ্যে যখন কংগ্রেস "পূর্ণ স্বরাজের" প্রস্তাব গ্রহণ করে তখন তাকে নিশ্চিতভাবে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করে।
১৯৩৭ সালে কংগ্রেস সভাপতি পদে নির্বাচনে সুভাষচন্দ্র বসু গান্ধীজীর নিজস্ব পছন্দের প্রার্থী সীতারামাইয়াকে পরাজিত করে কংগ্রেস সভাপতি হন। ত্রিপুরা কংগ্রেসে গান্ধীজীর সাথে সুভাষচন্দ্র বসুর বিরোধ প্রকাশ্য রূপ লাভ করে। এরপর সুভাষচন্দ্র বসু কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করেন এবং "ফরোয়ার্ড ব্লক" নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। ১৯৪২ সালের জুলাই মাসে ওয়ার্ধায় ওয়ার্কিং কমিটির সভায় এবং মুম্বাইতে ১৯৪২ সালের ৮ আগস্ট কংগ্রেসের অধিবেশনে "ভারত ছাড়ো" বা "আগস্ট প্রস্তাব" গ্রহণ করা হয়। ৯ আগস্ট গান্ধীজী গ্রেপ্তার হন। সরকারি দমননীতির মধ্যেও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন এবং সমান্তরাল সরকার স্থাপিত হয়।
পরবর্তী পর্যায়ে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল প্রমুখের সহযোগিতায় এবং জওহরলাল নেহেরুর নেতৃত্বে কংগ্রেস স্বাধীনতা আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। অবশেষে ভারত বিভক্ত হয় এবং ১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট পাকিস্তান ও ভারত নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। ভারতবর্ষ থেকে ১৯০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ