• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
ব্রিটিশ ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ব্রিটিশ ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল

স্বাধীন- অখণ্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের প্রেক্ষাপট

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে উপনিবেশসমূহে স্বাধীনতা লাভের আকাঙ্ক্ষা তীব্র হয়ে উঠলে ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের অবসান প্রায় নিশ্চিত হয়ে পড়ে। ১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এটলি ঘোষণা করেন যে, ব্রিটেন ১৯৪৮ সালের জুন মাসের মধ্যে ভারতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বদ্ধপরিকর। মার্চ মাসে লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন ভারতে ভাইসরয় হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ভারতের সাংবিধানিক সমস্যা সম্পর্কে তিনি কংগ্রেস ও মুসলিম নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা শুরু করেন। কিন্তু হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক তিক্ততা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে কংগ্রেস মুসলিম লীগ দ্বন্দ্বের ফলে এটি স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, অখণ্ড স্বাধীন ভারতের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাই লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে ভারত বিভক্তির প্রস্তাব দেন। এর পাল্টা প্রস্তাব হিসেবে কংগ্রেস বাংলা ও পাঞ্জাব বিভাগের দাবি উত্থাপন করে।

বাংলাকে ভাগ করে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিম বাংলাকে কংগ্রেস ভারতের অন্তর্ভুক্ত রাখতে চায়। অন্যদিকে মুসলিম লীগের ইচ্ছা ছিল অখণ্ড বাংলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হোক। কিন্তু এ সময় বাংলার মুসলিম লীগের একটি প্রভাবশালী অংশ সমগ্র বাংলা, আসাম ও বিহারের বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীকে নিয়ে সার্বভৌম অখণ্ড বাংলা রাষ্ট্র গঠনের দাবি উত্থাপন করে।
১৯৪৭ সালের ২৭ এপ্রিল হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাধীন অখণ্ড বাংলা রাষ্ট্র গঠনের 'প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এরপর ২৯ এপ্রিল বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের জেনারেল সেক্রেটারি আবুল হাশিম এক সংবাদ বিবৃতিতে বলেন, লাহোর প্রস্তাবের প্রতিই ভারতের মুসলমানগণ আনুগত্য স্বীকার করে। এ প্রস্তাবে অখণ্ড মুসলিম রাষ্ট্রের পরিকল্পনা ছিল না। এতে বাংলা এবং ভারতের অন্যান্য সাংস্কৃতিক ইউনিটকে পূর্ণ সার্বভৌমত্ব প্রদানের কথা বলা হয়।

আবুল হাশিম দাবি করেন যে, বাংলার হিন্দু ও মুসলমানগণ তাদের পৃথক সত্তা বজায় রেখে এক চমৎকার অভিন্ন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য গড়ে তুলেছে। ভারত হতে মুক্ত বাংলার হিন্দু ও মুসলমানগণ তাদের নিজেদের ব্যাপারে নিজেরাই শান্তিপূর্ণভাবে মীমাংসা করতে পারবে।

বাংলাকে ভাগ করার আন্দোলনের সমর্থনে কলকাতার বাঙালি-অবাঙালি শিল্প ও বণিক সমিতিসমূহ সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসে। এ ছাড়া প্রভাবশালী হিন্দু দৈনিক পত্রিকাসমূহ এ আন্দোলনের সমর্থনে জনমত গঠনে ব্যাপক প্রচার অভিযান চালায়।

শরৎচন্দ্র বসু, কিরণ শংকর রায়, সত্যরঞ্জন বকশী প্রমুখের নেতৃত্বে কংগ্রেসের একটি অংশ অভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ভিত্তিতে সোহরাওয়ার্দী হাশিমের স্বাধীন অখণ্ড বাংলা রাষ্ট্রের দাবি সমর্থন করেন। এ সময় বাংলার কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের নেতাদের নিয়ে ১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি যৌথ কমিটি গঠন করা হয়। এ যৌথ কমিটি ১৯৪৭ সালের ২০ মে স্বাধীন বাংলার ভবিষ্যৎ সংবিধানের একটি রূপরেখাও প্রণয়ন করে। যার বৈশিষ্ট্য ছিল নিম্নরূপ:

১. বাংলা হবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।

২. ভারতের বাকি অংশের সাথে সম্পর্ক কী হবে তা এ স্বাধীন বাংলা নির্ধারণ করবে।

৩. এ স্বাধীন বাংলার সংবিধানে হিন্দু ও মুসলমানদের সংখ্যা অনুপাতে আইনসভার আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে।

৪. যুক্ত নির্বাচন ও সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হবে।

৫. স্বাধীন বাংলার প্রস্তাব গৃহীত হলে বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে।

৬. অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রী হবেন একজন মুসলমান। এছাড়া মন্ত্রিসভার অন্যান্য পদে হিন্দু ও মুসলমান সমান সংখ্যক থাকবে।

৭. সামরিক ও পুলিশ বাহিনীসহ সকল চাকরিতে হিন্দু ও মুসলিম সংখ্যা সাম্যের নীতি অনুসরণ করা হবে।

৮. সংবিধান প্রণয়নের জন্য ৩০ সদস্যবিশিষ্ট একটি গণপরিষদ থাকবে। এর মধ্যে ১৬ জন মুসলমান এবং ১৪ জন হিন্দু থাকবেন। এ সদস্যগণ বর্তমান আইনসভার মুসলিম ও অমুসলিম সদস্যগণ কর্তৃক পৃথকভাবে নির্বাচিত হবেন।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ