- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
ব্রিটিশ ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল
মুসলিম লীগের কার্যক্রম
১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। প্রতিষ্ঠার পর এ সংগঠনের কেন্দ্রীয় দপ্তর লক্ষ্ণৌতে স্থাপন করা হয়। এ সংগঠনের মাধ্যমে মুসলমানরা কংগ্রেসের ন্যায় ব্রিটিশ সরকারের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার সুযোগ লাভ করে। ফলে ১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর আগাখানের নেতৃত্বে একটি মুসলিম প্রতিনিধি দল সিমলায় বড়লাট লর্ড মিন্টোর সাথে সাক্ষাৎ করে অন্যান্য দাবি-দাওয়ার সাথে 'পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা' প্রবর্তনের দাবি জানায়। মুসলিম লীগ পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তনের সপক্ষে বিভিন্ন ফোরামে আবেদন-নিবেদন ও আলোচনা চালিয়ে যেতে থাকে।
মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পরবর্তী বছর অর্থাৎ ১৯০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে করাচিতে এর ১ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। মুম্বাইয়ের বিখ্যাত নেতা আদমজী পীর ভাই এ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন এবং এ সম্মেলনে মুসলিম লীগের গঠনতন্ত্র অনুমোদন করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এর সদস্য সংখ্যা ৪০০ জন নির্ধারণ করা হয়। ১৯০৭ সালে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নবাব মহসিন-উল-মূলকের মৃত্যু হলে ১৯০৮ সালে মুসলিম লীগের একটি বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় এবং এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন লাহোরের শাহ্দীন। এ অধিবেশনেই আগাখান এবং সৈয়দ হাসান বিলগ্রামী যথাক্রমে মুসলিম লীগের সভাপতি ও সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হন। এ সময় নবগঠিত এ কমিটি সিমলা ডেপুটেশনের দাবিসমূহ মেনে নেওয়ার জন্য ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আবেদন জানায়।
১৯০৮ সালে পাঞ্জাবের অমৃতসরে মুসলিম লীগের দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে মুসলমানদের স্বার্থরক্ষাসহ আইনসভায় তাদের প্রতিনিধিত্ব ও সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মুসলমানদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য ব্রিটিশ সরকারের নিকট দাবি করা হয়। এ ছাড়া উক্ত সম্মেলনে বঙ্গভঙ্গ রদ না করার জন্য ব্রিটিশ সরকারের নিকট আহ্বান জানানো হয় এবং সব সমস্যা সমাধানের জন্য ব্রিটিশ সরকারের নিকট একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। ফলে ১৯০৬ সালের পেক্ষিতে ১৯০৯ সারে মর্লে-মিন্টোর সংস্কার আইনে মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।
কংগ্রেসের ব্রিটিশ বিরোধী স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন ও দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের প্রতি মৌলানা শওকত আলী, মৌলানা মোহাম্মদ আলী, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ প্রভাবশালী মুসলমানের আগ্রহ ও সমর্থন মুসলিম লীগকেও দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় হতে উদ্বুদ্ধ করে। এ সময়ে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ ১৯১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর নিজ নিজ দলের বার্ষিক অধিবেশন লক্ষ্ণৌ শহরে আহ্বান করে। উভয় দল 'লক্ষ্ণৌচুক্তি' প্রণয়ন করে ঐক্যবদ্ধভাবে স্বায়ত্তশাসন ও দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চালিয়ে যেতে ঐকমত্য পোষণ করে। লক্ষ্ণৌচুক্তি হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতি ও সমঝোতার এক সুযোগ সৃষ্টি করে।
১৯২৯ সালে প্রকাশিত নেহেরু রিপোর্টে মুসলমান জনগণের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে বলে মুসলিম লীগ দাবি করে। মুসলমান জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণে এরপর মুসলিম লীগ একক প্রচেষ্টা গ্রহণ করে। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ নেহেরু রিপোর্টের প্রতিবাদে মুসলিম লীগের পক্ষে তাঁর নিজস্ব ১৪-দফা দাবি-দাওয়া পেশ করেন।
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য দিক ছিল ব্রিটিশ ভারতীয় প্রদেশসমূহ এবং দেশীয় রাজ্যগুলোর সমন্বয়ে একটি 'সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র' (All-Indian Federation) গঠনের পরিকল্পনা। মুসলিম লীগ উপলব্ধি করে যে, মুসলমান জনগণ যদি এক জাতি তত্ত্বের অধীনে এই ব্যবস্থায় সম্মত হয় তাহলে ভবিষ্যতে তারা নিজেদের জন্য পৃথক আবাসভূমি গঠন করতে পারবে না। মুসলিম লীগের এই উপলব্ধির ফলেই মুসলমানদের জন্য পৃথক আবাসভূমি গঠনের চিন্তাভাবনা ত্বরান্বিত হতে থাকে।
মুসলিম লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ হিন্দু-মুসলিম জনগণের ক্রম অবনতিশীল ও তিক্ত সম্পর্কের দিকে লক্ষ রেখে তাঁর 'দ্বি-জাতি তত্ত্ব' (Two Nations theory) প্রকাশ করেন। ১৯৪০ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের সম্মেলনে ২২ মার্চ শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক যে প্রস্তাব উত্থাপন করেন, তাতে দ্বি-জাতি তত্ত্বকেই সমর্থন জানানো হয়। ঐতিহাসিক এই "লাহোর প্রস্তাবে" ব্রিটিশ ভারতে 'একাধিক মুসলিম রাষ্ট্র' (STATES) গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
উল্লেখ্য, প্রখ্যাত আইনবিদ সৈয়দ আমীর আলীর নেতৃত্বে ১৯০৮ সালে লন্ডনে মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তী সময়ে এ কমিটি মুসলিম লীগের লন্ডন শাখা হিসেবে পরিগণিত হয়।
১৯৩৭ সালের নির্বাচনে সর্বমোট ৪৮২টি মুসলিম আসনের মধ্যে মুসলিম লীগ ১০৮টি আসনে জয়লাভ করে। তাছাড়া ১৯৪০ সালে 'লাহোর প্রস্তাব' গৃহীত হওয়ার পর মুসলিম লীগ দ্রুত ভারতীয় মুসলমানদের একক রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম (Platform)-এ পরিণত হয়।১০ এরপর থেকেই মুসলিম লীগের বিকাশ ও সাংগঠনিক বিস্তৃতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এভাবে নানা বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে মুসলিম লীগ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে এবং কালক্রমে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের আশা-ভরসার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়। এ সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতেই ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ